E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রার্থীদের ভোট বর্জন ও ভোট গ্রহণ স্থগিতের মধ্য দিয়ে শেষ হল সাতক্ষীরার দুই উপজেলার ২১ ইউনিয়নের নির্বাচন

২০২১ সেপ্টেম্বর ২০ ১৮:১৩:১৯
প্রার্থীদের ভোট বর্জন ও ভোট গ্রহণ স্থগিতের মধ্য দিয়ে শেষ হল সাতক্ষীরার দুই উপজেলার ২১ ইউনিয়নের নির্বাচন

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : বেশ কয়েকটি সহিংস ঘটনা, গোলা-গুলি, প্রার্থীদের ভোট বর্জন ও ভোটগ্রহণ স্থগিতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে সাতক্ষীরার দু’উপজেলার ২১ টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোট। নির্বাচনপূর্ব ও নির্বাচনের দিনের সহিংসতায় পুলিশসহ আহত কমপক্ষে ৩০ জন। গুলিবিদ্ধ সুজিত কাগুজি ও দুই পুলিশ সদস্যকে চিকিৎসার জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ভর্তি করা হয়েছে আটককৃত আজাহারুল ইসলামকে।

সরেজমিনে পাটকেলঘাটার হারুন-অর-রশিদ কেন্দ্রে দেখা যায়, বৃষ্টির কারণে সকালে ভোট কেন্দ্রে আসতে পারেননি ভোটাররা। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভোটারদের উপস্থিতি বেড়েছে। বিশেষ করে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্য করার মত।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, অনিয়মের অভিযোগে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কয়লা ইউনিয়ন পরিষদের আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলাম ভোট বর্জন করেছেন। এছাড়া একই ইউনিয়নে পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একই অভিযোগে তেতুলিয়া ইউনিয়নের চশমা প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আফতাব আহমেদ দুপুর ১টার দিকে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন।

এদিকে অনিয়মের অভিযোগে কেড়াগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট স্থগিত করেছে উপজেলা প্রশাসন। অপরদিকে, তালার জালালপুর ইউনিয়নের ১নং মক্তব কেন্দ্রে বোমা ফেলে ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন জানান,তালার জালালপুর ইউনিয়নের ১ নং মক্তব কেন্দ্রের পাশে বোমা বিস্ফোরন করে কেন্দ্র দখলে নেয়ার চেষ্টা করে নৌকা প্রতীকের কর্মীরা। এসময় তারা হাতুড়ি ও লাটি-সোটা নিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পরে র‌্যাব সদস্যরা উপস্থিত হয়ে ফাঁকা গুলি বর্ষন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এঘটনায় নৌকা প্রতীকের কর্মী কানাইদিয়া গ্রামের আজহারুল ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া কানাইদিয়া ওয়ার্ডে হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন সুজিত কাগুজি নামের এক যুবক।

তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদি রাসেল জানান, জালালপুর ইউনিয়নের দোহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মফিদুল হক লিতুর কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে বাবুল হোসেন ও ইমদাদুল হক নামের দু’পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন। তাদেরকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া আটক গুলিবিদ্ধ সুজিত কাগুজিকে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসা চলছে বলে জানান ওসি।

এর আগে সকালে শ্রীমন্তকাটি কেন্দ্রের পাশে নৌকার কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্র্ম-সমর্থকদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠে। এছাড়া মারপিটে স্বতন্ত্র প্রার্থীর দু’কর্মী আহত হয়েছেন।

তালা সদরের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রার্থী নজরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, আটারুই এজিএম বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গোলাক দাসসহ তার সকল পোলিং এজেন্টকে মারপিট করে বের করে দিয়ে ভোট কেন্দ্র দখল করে ছাপ্পা ভোট দিয়েছে নৌকার প্রাথীর পক্ষে চরমপন্থী সদস্য শিমুল। প্রশাসনকে জানিয়েও কোন ফল পাননি তিনি। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

মাগুরা ইউনিয়নে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির চেয়ারম্যান প্রার্থী হিরন্ময় মণ্ডল অভিযোগ করে বলেন, চাঁদকাটি কেন্দ্রে তার এজেন্ট প্রিজাইডিং অফিসার আহসান হাবিবরে কাছে ১০০ পাতার ব্যালালযুক্ত বই এর ক্রমিক নং জানতে চাইলে তাকে আপত্তি করা হয়। এ ছাড়া উপপরিদর্শক মিলন তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।

এদিকে,রাতে কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী শহিদুল ইসলাম ও একজন ইউপি সদস্য প্রার্থীসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হন।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।
অপরদিকে,অনিয়মের অভিযোগে কলারোয়ার কেড়াগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছে উপজেলা প্রশাসন।

কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুবায়ের হোসেন হোসেন চৌধুরী জানান, কেড়াগাছি কেন্দ্রে ভোট অনিয়মের অভিযোগ আসে। সে কারণে ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।

জেলা নির্বাচন অফিসার নাজমুল কবির জানান, কলারোয়া ও তালা উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টি ইউনিয়নে ইভিএমে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে তালায় ৩ টি ও কলারোয়ায় একটিতে ইভিএমে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকেল সাড়ে চারটার পর থেকে শুরু হয়েছে বোট গণানার কাজ।

তিনি আরো জানান, নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুই উপজেলায় ৮১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। এছাড়া সংরক্ষিত সদস্য পদে ২৬০ জন নারী ও সাধারণ সদস্য পদে ৮৩৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করেছেন।

সাতক্ষীরার জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মিজানুর রহমান জানান, তালা উপজেলার সদর, জালালপুর ও খলিলনগর ইউনিয়ন এবং কলারোয়া উপজেলার কেড়াগাছি ও হেলাতলা ইউনিয়নকে ঝুকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে, ঝুকিপর্ণ কেন্দ্র গুলোতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, এই দুই উপজেলায় আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে ৬ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ২৩ জন নির্বাহি মাজিস্ট্রেটসহ ১ হাজার ১০২ জন পুলিশ, ১০০ জন বিজিবি, ৩ হাজার ৩১৫ জন আনসার সদস্য, র‌্যাবের ৬ টি টিম নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।

উল্লেখ্য, এই দুই উপজেলায় মোট ৩ লাখ ৭৫ হাজার ২৯৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮৮ হাজার ২৪৪ জন ও নারী ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫০ জন।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ২০, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test