E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

মৌলভীবাজারে ৯৯৯টি মন্ডপে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয় দুর্গোৎসব

২০২১ সেপ্টেম্বর ২৯ ১৫:৫৭:১৮
মৌলভীবাজারে ৯৯৯টি মন্ডপে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয় দুর্গোৎসব

মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : বছর ঘুরে দরজায় কড়া নাড়ছে সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বৃহত্তম শারদীয় দুর্গোৎসব। গত বছরের মতো এবারও করোনা মহামারির কারণে বিধিনিষেধের মধ্যদিয়েই পালিত হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। এবছরের ১১ অক্টোবর মহাষষ্ঠীতে দেবী বোধনের মধ্যদিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। চলবে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত।

ইতিমধ্যে মৌলভীবাজার জেলায় হিন্দু ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় এই উৎসবকে ঘিরে মন্ডপে মন্ডপে চলছে শেষ পর্যায়ের চুড়ান্ত প্রস্তুতি। করোনার অতি মহামারিতেও সনাতন ধর্মালম্বী প্রতিটি পরিবারে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব। শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় দূর্গোৎসব পালনের জন্য কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে মৌলভীবাজার জেলা পূজা উদযাপন কমিটিও বৈঠকের মাধ্যমে নিজেদের নানা প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করেছেন।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, এবছর মৌলভীবাজার পৌর শহর,সদর উপজেলাসহ জেলার ৭টি উপজেলায় সার্বজনীন ও ব্যক্তিগত মিলিয়ে জেলায় সর্বমোট ৯৯৯টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হবে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী জেলায় সার্বজনীন পূজা মন্ডপ রয়েছে ৮৭৩টি ও ব্যক্তিগত পূজা মন্ডপ রয়েছে ১২৬টি। এর মধ্যে মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ৭৫টি, পৌরসভায় ১৬টি, বড়লেখা উপজেলায় ১৩৬টি, জুড়ী উপজেলায় ৬৭টি, কুলাউড়া উপজেলায় ২০২টি, রাজনগর উপজেলায় ৮০টি, কমলগঞ্জ উপজেলায় ১৪৩টি ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় রয়েছে মোট ১৫৪টি পূজামন্ডপ।

গত শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) মৌলভীবাজার শহরের চৌমুহনা এলাকার শ্রী শ্রী কালিবাড়ি মন্দিরে অনুষ্ঠিত হয় দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে জেলা পূজা উদযাপন কমিটির প্রস্তুতি সভা। ওই বৈঠকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী স্বাক্ষরিত কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে শারদীয় দুর্গোৎসব পালনের জন্য বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ এর সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ রায় মুন্না বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এবছর করোনা মহামারির কারনে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানে কোন ধরনের শোভাযাত্রা না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি জানান, জেলার সব গুলো পূজা মন্ডপে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎসব পালনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

জানা যায়, কেন্দ্রীয়ভাবে পূজা উদযাপনের জন্য সারাদেশে বিশেষভাবে ১৮টি নির্দেশনা দেয়া হয়। ওই ১৮টি নির্দেশনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নির্দেশনা হলো, এবছর করোনা মহামারির কারনে মহালয়া অনুষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে করতে হবে। প্রতিমা তৈরী থেকে পূজা সমাপ্তি পর্যন্ত প্রতিটি পূজা মন্দির/মন্ডপে নিজস্ব উদ্যেগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। মন্দির/পূজা মন্ডুপে আগত দর্শনার্থী,ভক্ত,পুরোহিতসহ সকলকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিহিত অবস্থায় থাকতে হবে এবং সরকার নির্দেশিত শারিরীক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। উচ্চ শব্দের কারনে বিরক্তি উদ্রেককারী মাইক/পিএসেট ও আতসবাজি ও পটকা ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। এবং ভক্তিমূলক সংগীত ব্যতিত ডিজে ও কুরুচিপূর্ণ গান বাজানো থেকে বিরত থাকতে হবে। সকল প্রকার আলোকসজ্জা, সাজসজ্জা, মেলার আয়োজন, আরতি প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিহার করতে হবে। যেসব জায়গায় অস্থায়ী প্যান্ডেলে দুর্গাপূজা করা হবে সেসকল ক্ষেত্রে সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি পরিপূর্ণভাবে মেনে পূজা করা যাবে কিনা সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আয়োজকদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পূজোকালীন প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তির সমন্বয়ে মন্দির/মন্ডপ কেন্দ্রিক শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি গঠন করতে হবে এবং পূজাকালীন দায়িত্বরত প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিদ্যুৎ বিভাগও ফায়ার সার্ভিসের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে।

পুলিশ প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসবকে ঘিরে সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও ইতিমধ্যে নানা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নিরাপত্তা বিষয়ক বিভিন্ন পরিকল্পনাও।

এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন নিয়ে শীগ্রই পুলিশ সুপার কার্যালয়ে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের নিয়ে বিশেষ বৈঠক হবে। তিনি বলেন, আমরা বরাবরের মতো এবারও দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে ব্যপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। প্রতিটি পূজা মন্ডুপ সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে বলে জানান জেলা পুলিশের শীর্ষ এ কর্মকর্তা।

এদিকে দুর্গোৎসবের দিন যত ঘনিয়ে আসছে প্রতিমা তৈরিতেও তত ব্যস্ত সময় কাটছে প্রতিমা শিল্পীদের। বুধবার ২৯ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজার শহরের বেশ কয়েকটি পূজামন্ডপ ঘুরে দেখা যায়, শিল্পীরা প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শহরের সবচেয়ে বড় দুর্গোৎসব হয় পৌর এলাকার সৈয়ারপুরের ত্রিণয়নী ও আবাহনী পূজা মন্ডপে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শিল্পীরা মাটি আর খঁড় দিয়ে পরম যত্নে প্রতিমা তৈরি করছেন। মাটির কাজ সম্পন্ন হলেই ক’দিন পরই প্রতিমা গুলোতে রঙের আঁচর দেয়া হবে। পাশাপাশি চলছে নান্দনিক ডিজাইনের প্যান্ডাল তৈরীর কাজও।

ত্রিণয়নী পূজা মন্ডপে প্রতিমা তৈরীর কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় শিল্পী দীপক পালকে। এসময় প্রতিমা তৈরীর প্রস্তুতি নিয়ে কথা হয় তাঁর সাথে। এ পেশায় তাঁর অভিজ্ঞতা প্রায় ৩০ বছরের। তিনি বলেন, কাজ বুঝে পেতে দেরি হয়েছে, আমরা পাঁচজন শিল্পী এখানে দিন-রাত কাজ করছি, এখন প্রতিমা তৈরীতে মাটির কাজ চলছে,তবে রঙের কাজ শুরু করতে দেরি হবে। তিনি বলেন, পূজা শুরুর আগের দিন যাতে প্রতিমা তৈরীর সব কাজ সম্পন্ন করা যায় সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।

মৌলভীবাজার শহরের সবচেয়ে বড় তিনটি পূজা মন্ডপ রয়েছে,এগুলো হলো সৈয়ানপুর এলাকার ত্রিণয়নী,ফরেষ্ট অফিস রোডের আবাহনী ও কাশিনাথ স্কুল এন্ড কলেজের খেলার মাঠে মহেশ্বরী পূজা মন্ডপ। এই তিনটি পূজা মন্ডপে এখন চলছে প্রতিমা তৈরী ও বিশাল বিশাল প্যান্ডাল তৈরীর মহাজ্ঞ।

ত্রিণয়নী,আবাহনী ও মহেশ্বরী পূজা উদযাপন কমিটির উপদেষ্ঠা ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর স্বাগত কিশোর দাশ চৌধুরী বলেন, ত্রিণয়নী,আবাহনী ও মহেশ্বরী পূজা মন্ডপ হচ্ছে জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় মন্ডপ। তিনি বলেন, এই তিনটি মন্ডপে এখন চলছে প্রতিমা তৈরীসহ বিশাল প্যান্ডাল তৈরীর কাজ। এখানে পূজা উৎসবে প্রতি বছরের মতো এবারও ব্যাপক দর্শনার্থী ও ভক্তদের আগমন হবে।

(একে/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test