E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কুলিয়ারচরে স্কুলছাত্রের ওপর সেনা সদস্যের হামলা !

ছেলের দোষ ধামাচাপা দিতে স্কুল ছাত্রের বিরুদ্ধে উল্টো সেনা সদস্যের মায়ের মামলা

২০২১ অক্টোবর ০১ ১৭:৩৩:১৭
ছেলের দোষ ধামাচাপা দিতে স্কুল ছাত্রের বিরুদ্ধে উল্টো সেনা সদস্যের মায়ের মামলা

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মো. নেবরাসুল মুর্শেদ (১৬) নামে এক ১০ম শ্রেণির ছাত্রকে ক্লাস থেকে ডেকে বিদ্যালয়ের মাঠে এনে তার উপর হামলা করে মারার সময় ছাত্রের হাতে থাকা ঘড়ির চেইনের আঘাতে ইয়াছিন ইসলাম বাবু (২১) নামে এক সেনা সদস্য আহত হয়েছে বলে জানা যায়। এ ঘটনায় ছেলের দোষ ধামাচাপা দিয়ে চাকুরী বাঁচাতে উল্টো ছাত্রের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করার অভিযোগ উঠেছে সেনা সদস্যের মায়ের বিরুদ্ধে।

হামলার শিকার মো. নেবরাসুল মুর্শেদ (১৬) ছয়সূতী নোয়াগাঁও (মৌলভীবাড়ী) গ্রামের মো. সালাহ উদ্দিন মুর্শেদ নিজামী বাবুলের ছেলে। আহত সেনা সদস্য ইয়াছিন ইসলাম বাবু ছয়সূতী গ্রামের মো. নজরুল ইসলামের বড় ছেলে ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৮ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি কোরের এনসি (ই) পদে সিলেট সেনানিবাসে কর্মরত। নং- ০১৬৪২৫৩২২৮৪।

হামলার শিকার ছাত্রের পরিবার সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে পূর্ব আক্রোশের জের ধরে ওই সেনা সদস্যের নেতৃত্বে একদল বহিরাগত যুবক অন্যায়ভাবে অনধিকার দলবল নিয়ে বিদ্যালয়ের ভিতর প্রবেশ করে তাদের ছেলে এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী নেবরাসুল মুর্শেদকে বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলার ক্লাসরুম থেকে ডেকে বিদ্যালয়ের মাঠে এনে তার উপর হামলা করে মারধর করতে থাকে। এক পর্যায়ে নেবরাসুল মুর্শেদ নিজের জীবন বচাঁতে জোরাজোরি করার সময় তার হাতে থাকা ঘড়ির চেইনের আঘাতে সেনা সদস্য ইয়াছিন ইসলাম বাবু কিছুটা আহত হয়। পরে তাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য নেবরাসুল মুর্শেদ বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেখানে গিয়েও রক্ষা পায়নি ছাত্র নেবরাসুল মুর্শেদ। এ ঘটনার পর বহিরাগত সেনা সদস্য ও তার দলবলের বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা না নিয়ে কোন মামলা ছাড়াই নিজ বিদ্যালয়ের ছাত্রকে পুলিশে দেয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোস্তাকুর রহমান বাদল। তারা দাবী করেন ঘটনার সময়ে বিদ্যালয়ের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণ করে তদন্ত করলেই প্রমাণ হয়ে যাবে প্রকৃত দোষী কে। এ নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

এ ঘটনায় সেনা সদস্যের মা মোছা. কচি বেগম (৪১) নিজের ছেলের দোষ ধামাচাপা দিয়ে ছেলের চাকুরি বাঁচাতে ঘটনার সাড়ে ১২ ঘন্টা পর ওইদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে উল্টো ছাত্র নেবরাসুল মুর্শেদ এর বিরুদ্ধে কুলিয়ারচর থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলা দায়েরের পর নেবরাসুল মুর্শেদকে গ্রেফতার দেখিয়ে পরদিন ২৯ সেপ্টেম্বর বুধবার কিশোরগঞ্জ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। ওই দিনই এডভোকেট মুহাম্মদ শাহ্ আলম বিজ্ঞ আদালতে হিয়ারিং করে ওই ছাত্রকে জামিনে মুক্ত করেন।

মামলার এজাহারে ছাত্রের মা মোছা. কচি আক্তার উল্লেখ করেন, তার বড় ছেলে ইয়াছিন ইসলাম বাবু প্রায় এক বছর আগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগদান করে। বর্তমানে সে সিলেট সেনানিবাসে কর্মরত আছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর সে এক মাসের ছুটিতে বাড়ি আসে। মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে নাস্তা খাওয়ার জন্য তার ছেলে ছয়সূতী বাসস্ট্যান্ডে যায়। সেখানে ছয়সূতী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ুয়া ১০ম শ্রেণির ছাত্র নেবরাসুল মুর্শেদের সাথে দেখা হয়। পরে তারা দু'জনে গল্প করতে করতে পার্শ্ববর্তী ছয়সূতী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে যায়। অতপর এক পর্যায়ে পূর্ব বিরোধ নিয়া উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় স্কুল ছাত্র নেবরাসুল মুর্শেদ একটি চাকু বের করে হত্যার উদ্দেশ্যে তার ছেলে সেনা সদস্য ইয়াছিন ইসলাম বাবুর পেটে আঘাত করে। পরে স্থানীয়রা তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, পরে ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যায়। এরপর তাকে ময়মনসিংহ সিএমএইচ নিয়ে ভর্তি করে।

অন্যায়ভাবে অনধিকার দলবল নিয়ে বিদ্যালয়ের ভিতর প্রবেশ করে ক্লাসরুম থেকে ডেকে বিদ্যালয় মাঠে এনে ১০ম শ্রেণির ছাত্র নেবরাসুল মুর্শেদকে মারধোরের ঘটনায় সেনা সদস্যসহ তার দলের কারোর বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা না নিয়ে নিজ বিদ্যালয়ের ছাত্রকে কেন পুলিশে দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে ছয়সূতী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোস্তাকুর রহমান বাদল বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই ছাত্রকে পুলিশ হেফাজতে দেওয়া হয়েছিলো। তবে এ ঘটনায় অপর পক্ষ আমাদের সাথে পরামর্শ না করে কিংবা না জানিয়ে থানায় মামলা করেছে। আমরা বিদ্যালয়ে একটি মিটিং করে ওই সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ঘটনার পর থেকে বিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে এবং শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. নয়ন মিয়া বলেন, আমি ঘটনাস্থলে ও হাসপাতালে গিয়ে ওই সেনা সদস্যকে দেখে এসেছি। এটা বড় ধরণের কোন ঘটনা নয়। সেনা সদস্যকে ছুরা দিয়ে আঘাত করা হয়নি। ছাত্রে হাতে থাকা ঘড়ির চেইনের আঘাতে সে আহত হয়েছে। কেন ছাত্রের পক্ষ থেকে মামলা নেওয়া হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাত্রের পরিবার বিজ্ঞ আদালতে মামলা করতে পারবে। তবে আমি যতটুকু জানি বিষয়টি শেষ পর্যন্ত এলাকায় আপোষ মিমাংসা হয়ে আদালে আপোষনামা জমা দিতে পারে।

তবে এলাকার অনেকেই বলছে বিষয়টি ঘটনার পর পরই মিমাংসা হয়ে যেতো। ইয়াছিন ইসলাম বাবু সেনা সদস্য হওয়ায় কেউ আপোষ মীমাংসা করতে সাহস পাননি। কেননা পরবর্তীতে যদি কোন সমস্যা হয় তাই। আবার কেউ কেউ বলছে সেনাবাহিনীর চাকুরীর দাপট দেখিয়ে সে অন্যায় ভাবে বিদ্যালয়ের ভিতর গিয়ে মারামারী করে আহত হয়েছে এবং নেবরাসুলকে মারধর করেছে।

কুলিয়ারচর থানার ওসি (তদন্ত) মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে কুলিয়ারচর থানায় আহত সেনা সদস্যের মা একটি মামলা দায়ের করার পর ওই ছাত্রকে গ্রেফতার দেখিয়ে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়।

(এস/এসপি/অক্টোবর ০১, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test