E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কুলিয়ারচরে দুর্গা প্রতিমায় রং-তুলির আঁচড় দিতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা

২০২১ অক্টোবর ০৫ ১৮:২১:০৯
কুলিয়ারচরে দুর্গা প্রতিমায় রং-তুলির আঁচড় দিতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : শান্তি, সাম্য আর ভ্রাতৃত্বের অমর বাণী শোনাতে প্রতি বছর শারদীয় উৎসবে স্বর্গলোক থেকে মর্ত্যে আসেন দুর্গতিনাশিনী মহামায়া মা দুর্গা। ভক্তদের ডাকে সাড়া দিয়ে একবছর পরে মা আসছেন। ধর্মের গ্লানি আর অধর্ম রোধ, সাধুদের রক্ষা, অসুরদের বধ আর ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিবছর দুগর্তিনাশিনী দেবী দুর্গা ভক্তদের মাঝে আবির্ভূত হন।

শারদীয় দুর্গোৎসবের বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। এরই মধ্যে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলায় ৩৪টি পূজামণ্ডপে শেষ মুহুর্তে মাটির কাজ শেষে এখন চলছে প্রতিমা শিল্পীতের রং-তুলির আচর ও সাজসজ্জা। যেন দম ফেলার ফুসরত নেই মৃৎশিল্পীদের। গভীর রাত পর্যন্ত চলছে দোমাটি ও রং-তুলির কাজ। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। তাই শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব পালন করার জন্যে এরই মধ্যে প্রশাসন কয়েক স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ইতোমধ্যেই প্রতিটি পূজামণ্ডপে মাটির কাজ শেষ করে রং-তুলির কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন মৃৎশিল্পীরা। ইতোমধ্যে আনন্দ ঘন ও প্রাণবন্ত পরিবেশে চলছে কারিগরি শিল্প নৈপুন্য। শিল্পীদের দক্ষ হাতের ছোঁয়ায় পূর্ণরূপে ফোটে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন অধিকাংশ প্রতিমা। পাশাপশি মন্দির কমিটির উদ্যোগে চলছে প্যান্ডেল, গেইট, তোরণ, আলোকসজ্জা ও বিভিন্ন ধরনের সাজসজ্জার কাজ। একেক মন্দিরে একেক আঙ্গিকে সাজানো হচ্ছে প্রতিমা। যার যেমন সাধ্য সেই সাধ্য অনুযায়ী চলছে সাজসজ্জা। পূজা শান্তিপূর্ণ করতে ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তালিকা তৈরি করে চলছে নিরাপত্তার ব্যবস্থা ও অনুদান বরাদ্দের কাজ। পূজা ম-পগুলোতে কয়েক স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে প্রতি বছর আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকলেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সারা বিশ্বের ন্যায় এ উপজেলায় সামাজিক দূরুত্ব বজায় রেখেই পালন করা হবে দুর্গোৎসব।

জানা যায়, এ বছর উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ৩৪টি ম-পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে পৌর এলাকায় ১২টি, গোবরিয়া আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নে ১টি, রামদী ইউনিয়নে ৫টি, উছমানপুর ইউনিয়নে ৩টি, ছয়সূতী ইউনিয়নে ৩টি, সালুয়া ইউনিয়নে ৮টি ও ফরিদপুর ইউনিয়নে ২টি দুর্গা মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। গত বারের তুলনায় এবার ২টি প্রতিমা বেশী হচ্ছে।

আগামী ১১ অক্টোবর সোমবার পঞ্চমী তিথিতে মা দুর্গাদেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মাধ্যমে ঢাক-ঢোল, কাঁশি, বাঁশি বাজিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে এবং ১৫ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জ্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব সমাপ্ত হবে। দুর্গ উৎসবকে ঘিরে শিশির ভেজা দুর্বাঘাসের উপর ঝরেপড়া বকুল ফুল কুড়ানোর সময়টাতে মাতৃবন্ধনায় মিলিত হবেন মাতৃভক্ত সবাই।

এদিকে আসন্ন দুর্গোৎসবকে ঘিরে উপজেলার জনপদে আনন্দের হিমেল হাওয়া বইতে শুরু করেছে। হিন্দু ধর্মালম্বীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন বৃহৎ এ দুর্গা উৎসব পালনের। ইতোমধ্যে হিন্দু ধর্মালম্বীদের ঘরে ঘরে নতুন জামা-কাপড়সহ ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র কেনা-কাটা শুরু করে দিয়েছেন। কেউ আবার অগ্রিম শুভেচ্ছাসহ নিমন্ত্রণ দেয়ার কাজও শুরু করে দিয়েছেন।

উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মনমথ চন্দ্র দাস ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নন্দলাল দাস জানিয়েছেন, গতবারের তুলনায় এবার ২টি পূজা বেশী অনুষ্ঠিত হবে। এখন পর্যন্ত উপজেলার কোন ম-পে অপ্রীতিকর কোন ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সর্বত্রই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে যে সমস্ত ম-পগুলিতে লোক সমাগম বেশী হবে এবং বাজার কেন্দ্রীক সেগুলিকে অতিগুরুত্বের সাথে দেখার জন্য প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহবান জানান তারা।

থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জানিয়েছেন, গত ৪ অক্টোবর সোমবার বিকালে থানা হলরুমে প্রতিটি ম-পের সভাপতি-সম্পাদক সহ উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটি সভাপতি ও সম্পাদকদের সাথে মত বিনিময় করা হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ইতোমধ্যে এলাকায় পুলিশী টহল জোরদার এবং ম-পগুলোতে নজরদারীর বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি ম-প কমিটির স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীকে ম-প পাহারা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

(এসএস/এসপি/অক্টোবর ০৫, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test