E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাদারীপুরে ৪ পরিবার অবরুদ্ধ, মামলা করায় নিরাপত্তাহীন সদস্যরা

২০২১ অক্টোবর ১২ ১৯:৩৭:৫১
মাদারীপুরে ৪ পরিবার অবরুদ্ধ, মামলা করায় নিরাপত্তাহীন সদস্যরা

অহিদুজ্জামান কাজল, মাদারীপুর : জেলার রাজৈরে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে ৪ পরিবারকে ২০দিন ধরে অবরুদ্ধ করে রেখেছে প্রভাবশালী মহল। তাদের ভয়ে ঘর থেকে বের হতে পারছেনা ওই ৪ পরিবারের কোনো সদস্য। প্রকাশ্য দিবালোকে ভুক্তভোগীদের দখলকৃত জায়গার রান্নাঘর বাথরুমসহ গাছ পালা ভেঙ্গে তছনছ করে অসহায় নারী শিশুদের মারধর করে বিরোধপূর্ণ জায়গা জবরদখল করে বসত ঘরের সামনে বাঁশের বেড়া দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের নিয়ে বাথরুমে যেতে পারছেনা। এ ঘটনায় রাজৈর থানায় একটি মামলা হলেও পুলিশী তৎপরতা না থাকায় প্রভাবশালীদের ভয়ে পরিবারের সদস্যরা আরো ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে।

ভুক্তভোগি পরিবারের অভিযোগ, থানায় মামলা ও এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, রাজৈর উপজেলার নয়ানগর গ্রামের একই গোষ্ঠির আব্দুস সালাম হাওলাদার ও রিপন হাওলাদারের মধ্যে বাড়ি জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন বিরোধ চলছিল। সম্প্রতি রিপন গং জায়গা সংক্রান্ত বিষয়ে মাদারীপুর দেওয়ানী আদালতে একটি নালিশী মামলা করেন। মামলার খবরে ক্ষিপ্ত হয়ে সালাম হাওলাদার ও তার লোকজন গত ২৪ সেপ্টেম্বর ভোরে দেশী অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে রিপন হাওলাদার, লিটন হাওলাদার, নাসির হাওলাদার ও মহসিন হাওলাদেরর পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা করে বিরোধপূর্ন জায়গার ঘর, বাথরুম, বিভিন্ন গাছ-পালা ভেঙ্গে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তারা এতই প্রভাবশালী যে, ভয়ে কেউ নির্যাতিত পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে সাহস পায়নি। এদিকে ওই ভুক্তভোগি পরিবারের সদস্য একই এলাকার হাবিবুর হাওলাদারের ছেলে লিটন, নাসির, মহসিন ও রিপন নিজ দখলিয় জায়গা দখলের খবর শুনে চট্রগ্রাম ও ঢাকা থেকে উক্ত চার ভাই বাড়িতে রওনা দেয়। ২৫ সেপ্টেম্বর তারা বাড়িতে প্রবেশ করতে গেলে পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সালাম হাওলার, পান্নু হাওলাদার, সুমন হাওলাদার, অনিক হাওলাদার, সেলিম হাওলাদার, রাজন মিয়াসহ আরো বেশক’জন দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে। তাদের কুপিয়ে ও পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে। এতে ওই পরিবারের ৮জন আহত হয়। মারাত্মক আহত লিটন হাওলাদার (৪৮) ও নাসির হাওলাদারকে (৪৫) প্রথমে রাজৈর হাসপাতালে পরে উভয়কে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সালাম গংয়ের হামলা থেকে ভুক্তভোগী নারী ও শিশুরাও রক্ষা পায়নি। তারা ৫ম শ্রেনীতে পড়ুয়া শিশু হিমেলের ওপর আক্রমন করতেও দ্বিধা করেনি। ঘন্টা ব্যাপী তান্ডব চললেও আহত লিটন ও সহোদরদের বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসেনি। মারাত্মক আহত অবস্থায় মাটিতে গড়াগড়ি করলেও ভয়ে কেউ তাদের চিকিৎসা করাতে হাসপাতালে নিতে সাহস পায়নি। পরে খবর পেয়ে রাজৈর থানার পুলিশ আহতের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

সালাম হাওলাদার গংয়ের তান্ডবে বর্নণা দিতে গিয়ে ৫ম শ্রেণীতে পড়ুয়া হিমেল ভয়ে থর থর করে কাঁপছিলো। হিমেল জানায়, ‘হেইদিন রাতে ওরা আমার বাবা ও কাকাদের ছ্যান দিয়া কোপাইতে ছিল, এ সময় আমি আমার বাবার কাছে গ্যালে ওরা আমারে পিটাইয়া মারছে।’

গৃহবধূ লিপি বেগম বলেন, ‘ওরা আমাগো রান্নাঘর, বাথরুম ভাইঙ্গা ফ্যালাইছে। এহন আমরা শিশু বাচ্চাদের নিয়া বাথরুমে যাইতে পারছিনা, এমনকি রান্নাও করতে পারিনা, এহন আমরা কোথায় যামু।’ ভুক্তভোগী রিপন হাওলাদার বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ ৫০/৬০ বছর এই জমি দলিলমূলে ভোগ করে আসছি। সালাম হালাদার কইছে ওই জায়গা তার নামে রেকর্ড আছে। আমরা রেকর্ড সংশোধনের জন্য আদালতে মামলা করি। মামলার খবর শুনে সালাম হাওলাদার, পান্নু হাওলাদারসহ আরো ২০/২৫ জন সন্ত্রাসী আমাগো জায়গার রান্না ঘর, বাথরুম, গাছপাড়াসহ সবকিছু ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়। এমনকি আমাদের পোতার (ঘরের ভিটি) মাটি কাইট্যাও নিয়ে যায়।’

এ ঘটনায় সালাম হাওলাদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার বাবাকে ওরা আটকাইয়া তার কাছ থেকে দলিল নেয়। এই জায়গা এখন আমাদের নামে রেকর্ড হইছে। তাই রেকর্ড মুলে এই জমির মালিক আমরা। ওদেরকে চেয়ারম্যান ও পুলিশে সবকিছু সরাইয়া নিতে বলছে কিন্তু ওরা সরায় নাই। তাই একদিন সকালে আমরা জাইয়া অদের কিছু খরির পালা ছিলো তা সরাইয়া দিয়ে আমরা বেড়া দিছি। তারপর ওরা একদিন রাত ৪ টার সময় বেরা ভাংতে গেলে আমরা বাধা দেই। তখন মারামারি হয়। এতে ওরা ও আমরা ইনজুরী হই। অরা হাসপাতালে ভর্তি হইছে। কিন্তু আমরা হই নাই।’

এ ব্যাপারে রাজৈর থানার ওসি শেখ সাদি বলেন, ‘এ ব্যাপরের থানায় একজন আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। বাকিদেরও ধরার ব্যাপারে জোর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। মামলা হয়েছে।’

(ওকে/এএস/অক্টোবর ১২, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test