E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনষ্টিটিউটের অভ্যন্তরে অনিয়ম-দুর্নীতি ও যৌন কেলেংকারীর অভিযোগ

২০২১ অক্টোবর ২২ ১৬:১১:২০
বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনষ্টিটিউটের অভ্যন্তরে অনিয়ম-দুর্নীতি ও যৌন কেলেংকারীর অভিযোগ

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দিনাজপুরে নশিপুরস্থ বাংলাদেশ গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিডাব্লুউএমআরআই) এ তুঘলকি কারবার চলছে। বিভিন্ন অনিয়ম, ঘুষ-দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য, আত্মসাৎ, যৌন কেলেংকারীর অভিযোগও রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। নিন্ম পদস্থ সেবক-পরিচারক, নৈশ্য প্রহরী থেকে শুরু করে উচ্চ পদস্থ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং মূখ্য কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও রয়েছে, এমনি নানা অভিযোগ। অবৈধ টাকায় জোরে এরা অনেকেই রাতারাতি কোটিপতি হয়ে গেছেন। এক একজনের একাধিক আবাসিক ফ্লাট-প্লট ক্রয়, বাড়ি, গাড়ি, সম্পদ, ব্যাংক-ব্যালেঞ্জ স্বনামে-বেনামে গড়েছেন।কিন্তু, তারপরও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ রয়েছে, নিশ্চুপ! এ কারণে অন্যায়, অবিচারের পাহাড় জমছে,বিচারের বাণী নিভূতে কাঁদছে।

দিনাজপুরে নশিপুরস্থ বাংলাদেশ গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিডাব্লুউএমআরআই) এর সকল অনিয়ম ও দুর্নীতি’র কারিগর হিসাব বিভাগের ভারপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষক মো.শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে সম্প্রতি একই বিভাগের কর্মরত এক নারী কর্মচারী যৌন হয়রানী ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অশ্লীল ছবি ধারণ করে ব্লাকমেইল করার অভিযোগ তুলে থানায় মামলা করেছে। এ ঘটনার পর অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম পলাতক থাকলেও কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নিচ্ছেনা। বরং নেপথ্যে তাকে সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে। কয়েকজনের কর্মকতা ও কর্মচারী প্রকাশ্যেই সহযোগিতা করছে, অভিযুক্ত নারী লিপসু শহিদুলকে। এ কারণে বাংলাদেশ গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিডাব্লুউএমআরআই) এ কর্মরত নারী কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক নারীরা চরম আতংক এবং ভয়ে দিনাতিপাত করছে। তারাও এমন যৌন হয়রানী’র শিকার হলে কর্র্র্তপক্ষের ভুমিকায় সন্ধিহান রয়েছে।

দিনাজপুর কোতয়ালী থানায় দায়েরকৃত মামলার নথি সুত্রে জানা গেছে, গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ি এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা নুরুজ্জামানের ছেলে, বর্তমানে দিনাজপুর শহরের ঘাসিপাড়া এলাকার জনৈক আইনজীবী’র বাসার ভাড়াটিয়া বাংলাদেশ গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনষ্টিটিউট(বিডাব্লুউএমআরআই) এর হিসাব বিভাগের ভারপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষক মো.শহিদুল ইসলাম একই বিভাগে কর্মরত জনৈক নারী কর্মচারীকে বিভিন্ন সময় কুপ্রস্তাব দেয়া, পরিধান কাপড় ধরে টানা হ্যাচড়া ছাড়াও ওই নারী কর্মচারীর শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়া এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে আসছিলো। এরইমধ্যে ভারপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষক মো.শহিদুল ইসলাম জোরপূর্বক ভাবে ওই নারী কর্মচারী’র কিছু নগ্ন ছবি মোবাইল ফোনে ধারণ করে।

পরে ওই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাস করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে বেশ কয়েকবার ধর্ষণের অপচেষ্টা চালায়। কুচরিতার্থ হাসিল না হওয়ায় বিডাব্লুউএমআরআই এর হিসাব বিভাগের ভারপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষক মো.শহিদুল ইসলাম গত ০৯ সেপ্টেম্বর’২০২১ সন্ধায় ওই নারী’র উপশহরস্থ বাড়িতে গিয়ে ১২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। ১২ হাজার টাকা না দিলে তার মোবাইল ফোনে ধারণকৃত নগ্ন-অশ্লীল ছবিগুলো ইন্টারনেট এবং ফেসবুকে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়।এ সময় ওই নারী কর্মচারী চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। সেসময় শহিদুল হুমকি দেয় যে ১২ লাখ টাকা না দিলে তার মোবাইল ফোনে ধারণকৃত নগ্ন-অশ্লীল ছবিগুলো ইন্টারনেট এবং ফেসবুকে শুধু ছেড়ে দিবে না ওই নারীকে ধর্ষনের পর হত্যা করে লাশ গুম করবে।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ওই নির্যাতিত নারী গত ২৬ সেপ্টেম্বর দিনাজপুর কোতয়ালী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন এবং চাঁদাবাজি’র একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর থেকেই অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম পলাতক রয়েছে। তার কর্মস্থল বাংলাদেশ গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনষ্টিটিউট(বিডাব্লুউএমআরআই) হিসাব বিভাগে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,ভারপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষক মো.শহিদুল ইসলাম যে কক্ষে বসতেন তার চেয়ার ফাকা এবং কক্ষে তারা মারা রয়েছে। সাংবাদিকে আগমনে কর্মরত সকলেই যেনো অস্বস্তিবোধ করছিলো। অফিস জুড়েই যেনো ছিলো,কানাঘুষা শব্দ। কিন্তু, প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সকলেই নারাজ।

বাংলাদেশ গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনষ্টিটিউট(বিডাব্লুউএমআরআই) এর চলতি দায়িত্বে নিয়োজিত মহাপরিচালক ড.মো.আমিরুজ্জামানের সাথে এ বিষয়ে প্রতিবেদক শাহ্ আলম শাহী কথা বললে তিনি জানান,“বিষয়টি মামলায় গড়িয়েছে। তাই এ বিষয়ে কথা না বলাই ভালো। আমরা ঘটনা তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি।”

অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনষ্টিটিউট(বিডাব্লুউএমআরআই) এর চলতি দায়িত্বে নিয়োজিত মহাপরিচালক ড.মো.আমিরুজ্জামানের চাকুরি আর কিছুদিন রয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি অবসরে যাচ্ছেন। তাই, বাংলাদেশ গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিডাব্লুউএমআরআই) এর সকল অনিয়ম ও দুর্নীতি’র কারিগর হিসাব বিভাগের ভারপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষক মো.শহিদুল ইসলামরের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে চায় না তিনি। শহিদুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে হয়তো তাঁকেও চাকুরির শেষ মুর্হুতে ঝুটঝামেলায় পড়তে হতে পারে। এই শংকায় তিনিও এক প্রকার নীরব রয়েছেন।

তবে, এই ইনস্টিটিউটে পরবর্তীতে যারা মহাপরিচালক হওয়ার তালিকায় রয়েছেন,তাদের মথ্যে দু’জন দু’পক্ষে কাজ করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ না খুললেও হিসাব বিভাগের ভারপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষক মো.শহিদুল ইসলামকে অনেকেই সহযোগিতা করছে।আর একারণেই শহিদুল ইসলাম অফিসের দায়িত্ব ও কাগজপত্র বুঝিয়ে না দিয়েও দীর্ঘদিন (২মাস) অফিস ছেড়ে বাইবে অবস্থান করছে। কিন্তু,কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থাই নিচ্ছে না তার বিরুদ্ধে। বরং উল্টো নানাভাবে হয়রানী এবং অশ্লীল ভাষায় গালি গালাজ করছে,ওই যৌন নির্যাতিত অসহায় নারীকে। বিশেষ করে ওই নারীকে অফিসের এসএ কামাল মাহমুদ শরীফ প্রকাশ্যে নানাভাবে হয়রানী এবং অশ্লীল ভাষায় গালি গালাজ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম এবং কামাল মাহমুদ শরীফের বাড়ি একই জেলা গাইবান্ধায়। তার কারণে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সিম এর মাধ্যমে মোবাইল ফোনে তাদের যোগাযোগ রয়েছে। শহিদুল ইসলাম এর এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে, কামাল মাহমুদ শরীফ।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শহিদুল ইসলামের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোন অধিকাংশ সময় বন্ধ পাওয়া যায়। মাঝে মধ্যে খোলা থাকলেও ফোন রিসিভ করছেনা সে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সুত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনষ্টিটিউট(বিডাব্লুউএমআরআই) এর সকল অনিয়ম ও দুর্নীতি’র কারিগর হিসাব বিভাগের ভারপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষক মো.শহিদুল ইসলাম। যে কারণে একজন সামান্য কেরানি পদে কর্মকত মো.শহিদুল ইসলাম হিসাব বিভাগের হিসাব রক্ষকের দায়িত্ব পায়।

ইনস্টিটিউটের গবেষণাগারের কেমিক্যাল ক্রয়,টিএলসি গম ক্রয়, জৈব সার ক্রয়,প্রযুক্তি যন্ত্রাংশ ক্রয়,গাড়ির জ¦ালনি ক্রয় থেকে শুরু করে সব ক্রয় খাতে মহা দূর্নীতি হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানে। এছাড়াও ইনষ্টিটিউটের অভ্যন্তরে শহীদ মিনার, ফ্লাগ ষ্ট্যাান্ড, ড্রেন নির্মান, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ষ্টাফ কোয়াটার এবং আনসার ক্যাম্প সংস্কারের অর্থ এবং উৎপাদিত ফসল ,বীজ ক্রয়-বিক্রয়ের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। আর এফ কিউ এর মাধ্যমে মাটি ভরাটের কাজ, মাটি ক্রয়, রিপিয়ারিং, চাষীদের প্রশিক্ষণ,সভা-সেমিনার.কর্মশালা, গবেষণা কর্মসূচী সহ বেশ কটি প্রকল্পে প্রতারণা আশ্রয় নিয়ে জালিয়াতি করে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। যেহেতু, এসব হিসাব-নিকাশ এবং বাজেট ফাইল থাকে হিসাব বিভাগে। তাই, বাজেট বা প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ ও চুরি করতে ভারপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষক মো.শহিদুল ইসলামের সহযোগিতা সবারই লেগেছে। তাই, ওই সব দূর্নীতিবাজ কর্তকর্তা ও কর্মচারীরা সব সময় জিন্মি রয়েছে, শহিদুলের কাছে। তাই, শহিদুলের সব অন্যায় এবং লুচ্চামি নীরবে মেনে নিতে হচ্ছে, ইনস্টিটিউটের অনিয়ম-দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের। তাছাড়া, শহিদুল ইসলাম নাকি হুমকি দিয়েছে, সে ফাঁসলে সকলের অন্যায় এবং দূনীতি ফাঁস করে দিবে সে। একারণে শহিদুল ইসলামকে বাঁচারে এখন মরিয়া অনেকেই।

এ বিষয়ে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.মোজাফফর হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা মামলা গ্রহণ করে আদালতে পাঠিয়েছি। মামলার পর থেকে অভিযুক্ত শহিদুল পলাতক রয়েছে। আমরা প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

বাংলাদেশ গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিডাব্লুউএমআরআই) এর নিন্ম পদস্থ সেবক-পরিচারক,নৈশ্য প্রহরী থেকে শুরু করে উচ্চ পদস্থ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং মূখ্য কর্র্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও রয়েছে, এমনি নানা অভিযোগ। অবৈধ টাকায় জোরে এরা অনেকেই রাতারাতি কোটিপতি হয়ে গেছেন। এক একজনের একাধিক আবাসিক ফ্লাট-প্লট ক্রয়, বাড়ি, গাড়ি, সম্পদ, ব্যাংক-ব্যালেঞ্জ স্বনামে-বেনামে রয়েছে । কিন্তু, তারপরও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ নিশ্চুপ রয়েছে! এ কারণে এই প্রতিষ্ঠানে অন্যায়,অবিচারের পাহাড় জমছে এবং বিচারের বাণী নিভূতে কাঁদছে। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগিদের।

(এস/এসপি/অক্টোবর ২২, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test