E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নওগাঁয় লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলা

২০২১ অক্টোবর ২২ ১৮:০০:৫১
নওগাঁয় লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলা

নওগাঁ প্রতিনিধি : কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব। বাংলায় শারদীয় দূর্গোৎসবের বিজয়া দশমীর পর কোজাগরী পূর্ণিমা তিথিতে লক্ষ্মী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। লক্ষ্মী মানে শ্রী সুরুচি এবং তার বাহন পেঁচা। লক্ষ্মীকে ধন সম্পদ আর সৌন্দর্যের দেবী হিসেবে মনে করেন সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। নারী পুরুষ উভয়েই এই পূজায় অংশ গ্রহণ করেন।

বুধবার (২০ অক্টোবর) লক্ষ্মী পূজা শুরু হয়। শুক্রবার (২২অক্টোবর) নওগাঁর রাণীনগরে ছোট যমুনা নদীতে লক্ষ্মী প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এ পূজার সমাপ্তি করা হয়। আর এই পূজা উপলক্ষে শুক্রবার থেকে দুইদিন ব্যাপী রানীনগরের কুজাইল বাজারে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলার আয়োজন করা হয়। স্থানীয়রা তাদের শত বছরের পুরনো ইতিহাস ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষে এ মেলার আয়োজন করে থাকেন। মেলায় দোকান থাকে কয়েকদিন। এছাড়াও অনুষ্ঠিত হয় বউ মেলা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কাশিমপুর রাজবাড়ীর রাজা রাজবাহাদুর শ্রীঅন্নদা প্রসন্ন লাহিড়ীর রাজত্ব পরিচালনার আগে থেকে লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় দু’শ’ বছর থেকে লক্ষ্মী প্রতিমা বিসর্জনের দিন থেকে এ মেলা শুরু হয়। ঐতিহ্যবাহী এ মেলার বিশেষ আর্কষন লক্ষ্মী প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে ছোট যমুনা নদীতে নৌ-র‌্যালী। শুক্রবার দুপুরের পর থেকে জেলার রাণীনগর, আত্রাই, নওগাঁ সদরসহ কয়েকটি উপজেলার সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ নৌকায় চড়ে আসতে থাকে রানীনগরের কুজাইল ঘাটে। পাশাপাশি মেলা ও নৌকাতে প্রতিমা তুলে এবং পারিবারিক নৌকাতে চড়ে নদীতে শুরু হয় নৌকা র‌্যালী। উপভোগ করার জন্য নৌকায় ঘুরে বেড়ায় অন্যান্য ধর্মের মানুষও। সাউন্ড বক্স, মাইক আর ঢাকের তালে তালে নৌকায় বিনোদনপ্রেমীদের নৃত্যে মুখরিত হয়ে ওঠে এই ছোট যমুনা নদীর বুক।

ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে মিলনমেলায় পরিনত হয় নদীর দুইপাড়। প্রায় শতাধিক নৌকা নদীতে নৌবিহারে মেতে ওঠে। চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এরপর প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয় নদীতে। এ মেলা উপলক্ষে এলাকার গ্রামের বাড়ি বাড়ি আত্মীয় স্বজনদের আগমনে মুখরিত হয়ে ওঠে। ধুম পড়ে যায় ভালো রকমের খাওয়া-দাওয়ার। কারণ অন্যান্য অনুষ্ঠানের সময় মেয়ে ও জামাইসহ আত্মীয়স্বজন আসতে না পারলেও এ মেলায় বাড়িতে বেড়াতে আসেন। জামাইয়েরা মেলা থেকে বড়ো বড়ো মাছ, মিষ্টি, জিলাপিসহ হরেক রকমের খাবার তাদের শ্বশুর বাড়িতে কিনে নিয়ে যান। মেলার দ্বিতীয় দিন শনিবার হবে বউ মেলা। বউ মেলায় বিশেষ করে নারীদের প্রসাধনী দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভিড় হয়ে থাকে। আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের শত শত নারীদের বউ মেলায় আগমণ ঘটে।

কুজাইল গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক বিকাশ চন্দ্র প্রাং বলেন, দূর্গাপূজা সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের বড় উৎসব হলেও আমাদের এখানে লক্ষ্মী পূজার আনন্দটা বেশি হয়। লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষে এটা আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের একটা মেলা। এ সময় গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয় স্বজনের আগমনে যেন মুখরিত হয়ে ওঠে। এদিন বিসর্জনের জন্য নদীতে নৌকায় করে প্রতিমা নিয়ে বিশাল নৌবহর শুরু হয়। পাশাপাশি থাকে আনন্দ উপভোগ করার নৌকাও। এরপর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে গ্রামের মেলা দেখা শুরু হয়।

মেলা কমিটির উপদেষ্টা সাইদুর রহমান বাঘা বলেন, শত বছরের পুরনো ইতিহাস ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। তবে লক্ষ্মী পূজার এ মেলা উপলক্ষে আগে থেকে কোন প্রকার প্রচার প্রচারনার দরকার হয় না। সবাই এ মেলার বিষয়ে অবগত থাকেন। যার কারণে লক্ষ্মী পূজার দিনে দর্শনার্থীদের আগমনের কোন কমতি থাকে না।

(বিএস/এসপি/অক্টোবর ২২, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test