E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

স্বপ্নের পায়রা সেতুতে বদলে যাবে বরিশাল বিভাগের চিত্র

২০২১ অক্টোবর ২৪ ১৭:৪৫:৩৭
স্বপ্নের পায়রা সেতুতে বদলে যাবে বরিশাল বিভাগের চিত্র

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : মানুষের মুখে মুখে চলে আসে লেবুখালির পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মিত হবে কবে। সেই কথা একদিন যে বাস্তবে রূপ নিবে তা যেন কেউ কোনদিন ভেবেও দেখেননি।

দ্বিতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্বগ্রহণ করার পর ২০১৩ সালের মার্চ মাসে পায়রা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর নানান জটিলতা কাটিয়ে দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করা হয়েছে। রবিবার সকাল ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পায়রা সেতুর উদ্বোধণ ঘোষণার মধ্যদিয়ে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নপূরণ হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পায়রা সেতু বরিশাল বিভাগের প্রথম বেশি (১৯.৭৬ মিটার) প্রস্থের চারলেনের সেতু। আর গোটা দেশের মধ্যে এই সেতুতেই প্রথমবারের মতো ‘হেলথ মনিটরিং সিস্টেম’ সংযোজন করা হয়েছে। ফলে বিভিন্ন দুর্যোগ বা ওভারলোডেড গাড়ি চলাচলের ফলে ব্রিজের যাতে কোনো ধরনের ক্ষতি না হয় তার (ক্ষতির) পূর্বাভাস পাওয়া যাবে।

পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোঃ আব্দুল হালিম বলেন, এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল স্টেট পদ্ধতিতে নির্মিত ১ হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্থের পায়রা সেতুটি বাংলাদেশে দ্বিতীয়। চট্টগ্রামের কর্ণফুলি সেতুর মতো এখানেও দুইশ’ মিটারের লং লেন্থ স্প্যান রয়েছে। এ সেতুর বিশেষত্বের মধ্যে একটি হচ্ছে সব থেকে ‘ডিপেস্ট ফাউন্ডেশন’। ১৩০ মিটার পাইল বিশিষ্ট সেতু এটি। যা পদ্মাসেতুর ক্ষেত্রেও করা হয়েছে। তবে পদ্মাসেতুর আগে এটা হয়েছে।

বরিশাল বিভাগ উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আতিকুর রহমান আতিক বলেন, পায়রা সেতুতে বদলে যাবে বরিশাল বিভাগের চিত্র। বিশেষ করে পর্যটন কেন্দ্র সাগরকন্যা কুয়াকাটা ও পায়রা বন্দরকে ঘিরে নতুন সম্ভবনা সৃষ্টি হবে। সেতুতে যান চলাচলের মধ্যদিয়ে এখানকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, ব্যবসার প্রসার, পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।

এছাড়াও ২০০০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালী কৃষি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে উদ্বোধন করেন। এরপর থেকেই সেটি পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত। এককথায় গোটা বরিশাল বিভাগে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় এটি। যাকে ঘিরেই দুমকি উপজেলাসহ আশপাশে আধুনিক কাঠামোগত বিভিন্ন উন্নয়নের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। সময়ের সাথে সাথে পায়রা নদী তীরবর্তী উপজেলার লেবুখালি ইউনিয়নটি অনেকটাই হাব এ পরিণত হয়। যে লেবুখালির ফেরি পার হয়েই বিভাগের সদর দফতর বরিশালের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের একডজন উপজেলার সড়কপথে যোগাযোগ স্থাপনের কাজটি চলে আসছিল। যানবাহন চলাচল বাড়তে থাকলে গুরুত্ব পায় লেবুখালি ফেরিঘাটটি। তবে দিন যতো এগুতে থাকে ফেরিঘাটটি ততোই সাধারণ মানুষ ও পরিবহন চালকদের কাছে দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলশ্রুতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন উন্নয়নের পাশাপাশি জনগুরুত্বপূর্ণ লেবুখালি ফেরিঘাটে (পায়রা নদীর ওপর) সেতু নির্মানের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস বলেন, রবিবার সকালে পায়রা নদীর ওপর নির্মিত সেতু উদ্বোধণের মধ্যদিয়ে পায়রা বন্দর, পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা, নির্মাণাধীন পটুয়াখালী ইপিজেডসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবন মান পাল্টে যাবে। আগামীদিনে গোটা বরিশাল বিভাগ দেশের অন্যতম একটি অর্থনৈতিক করিডোর হিসেবে আর্বিভূত হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ সাইফুল হাসান বাদল বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পায়রাসেতু অত্যন্ত নান্দনিক নকশায় নির্মান করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি এটি নির্মাণের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগান্তকারী উন্নতি সাধিত হয়েছে। পায়রা সেতুটি এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

(টিবি/এসপি/অক্টোবর ২৪, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test