E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

এক লাখ টাকার চেক ১০ লাখ টাকা বানিয়ে মামলা

সাতক্ষীরা সদর রিসোর্স সেন্টারের সহকারি ইনসট্রাক্টর ইয়াছিন আলীর মিথ্যা মামলায় ব্যবসায়ী হান্নান খালাস 

২০২১ অক্টোবর ২৫ ১৮:০৯:২১
সাতক্ষীরা সদর রিসোর্স সেন্টারের সহকারি ইনসট্রাক্টর ইয়াছিন আলীর মিথ্যা মামলায় ব্যবসায়ী হান্নান খালাস 

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : পাওনা এক লাখ টাকার পরিবর্তে সম পরিমান টাকার চেক নিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে ১০ লাখ বানিয়ে সাতক্ষীরা সদর রিসোর্স সেন্টারের সহকারি ইনসট্রাক্টর ইয়াছিন আলীর দায়েরকৃত মামলা থেকে ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নানকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। রবিবার সাতক্ষীরার যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মোঃ ফারুক ইকবাল এ আদেশ দেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বড়দল গ্রামের আবু বক্কর ছিদ্দিকের ছেলে সদর রিসোর্স সেন্টারের সহকারি ইনসট্রাক্টর ইয়াছিন আলীর সঙ্গে একই উপজেলা সদরের বাউশুলী (চাপড়া) গ্রামের ঘের ব্যবসায়ি আব্দুল হান্নান সরদারের সুম্পর্ক ছিল। ব্যবসায়িক কারণে আব্দুল হান্নান দু’ মাসের মধ্যে পরিশোধের শর্তে ২০১৭ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ইয়াছিন আলীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা ধার নেন। নির্ধারিত সময়ে টাকা দিতে না পেরে ওই বছরের ২৯ নভেম্বর আব্দুল হান্নান জনতা ব্যাংক আশাশুনি শাখার সম পরিমান টাকার একটি চেক দেন। ব্যাংক হিসাব নম্বরে পর্যাপ্ত টাকা না পেয়ে ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি সাতক্ষীরার আমলী আদালত-৮ এ আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে মামলা (সিআরপি-২২/১৮)দায়ের করেন। ওই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর আব্দুল হান্নান আদালত থেকে জামিন লাভ করেন।

২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আসামীর বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগ গঠণ করেন। ওই বছরের ১৯ নভেম্বর বাদি আদালতে সাক্ষ্য দেন। আসামীপক্ষের জেরায় বাদি ইয়াছিন আলী বলেন যে, ২০১৯ সালের ১৩ জানুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে তার মুনজিতপুরের ভাড়া বাসা থেকে ওই চেকসহ আরো ১৫/১৬টি চেক, ০১৭১৭-১২৭৫০৬ নং সিমসহ একটি এন্ডুয়েট মোবাইল সেট, সোনার গহনা ও নগদ টাকা চুরি হয়ে যায়। এ ঘটনায় তিনি থানায় মামলা করেন। মাসে ৫০ হাজার টাকার বেশি বেতন পান তিনি। নিজের গচ্ছিত টাকা ছিল। টাকা লেনদেন এর তিন চার দিন আগে ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে হান্নানকে দিয়েছিলেন তিনি। তিনি তিনটি চেকের মামলা করেছেন। যদিও বাসায় চুরি হয়েছে দাবি করে ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি ইয়াছিন আলী ৬৩৬ নং সাধারণ ডায়েরী করেন।

মামলায় আসামী আব্দুল হান্নান ও তার চাচাত ভাই ইমদাদ হোসেন আদালতে চলতি বছরের ২১ মার্চ সাফাই সাক্ষী দেন। মামলার সাক্ষী ও নথি পর্যালোচনা শেষে বিচারক মোঃ ফারুক ইকবাল বাদি অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় আসামী আব্দুল হান্নান সরদারকে বেকসুর খালাস আদেশ দেন।

এদিকে ঘটনার বিবরনে জানা যায়,এক লাখ টাকা নিয়ে তা এক সপ্তাহের মধ্যে দিতে না পেরে আব্দুল হান্নান জনতা ব্যাংকের আশাশুনি শাখার একটি চেকের উপর এক লাখ টাকা অংকে ও কথায় লিখে ইয়াছিন আলীকে দেন। ব্যাংকে টাকা থাকায় জালিয়াতির মাধ্যমে এক লাখ টাকার স্থলে ১০ লাখ টাকা লিখে মামলা করবেন এমন কথা জানতে পেরে ইয়াছিন আলীর সঙ্গে সমঝোতা করে টাকা ফেরৎ দিয়ে চেকটি ফেরৎ নেন আব্দুল হান্নান। এরপরও আব্দুল হান্নানকে শায়েস্তা করতে ২০১৯ সালের ১৩ জানুয়ারি দুপুর বেলায় বাসায় চুরি দেখিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরী করে ২৮ জানুয়ারি ইয়াছিন আলী কৌশলে এক লাখ টাকার চেক ১০ লাখ টাকা বানিয়ে ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি আদালতে আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ইয়াছিন আলীর কাছ থেকে ফেরৎ নেওয়া চেকটি আব্দুল হান্নান আদালতে জমা দেন।

সাতক্ষীরা যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের সহকারি পিপি অ্যাড. শেখ মোস্তাফিজুর রহমান শাহানেওয়াজ বলেন, আদালত আসামী আব্দুল হান্নানকে বেকসুর খালাস দিয়েছে।

প্রসঙ্গত সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোলের অটো পয়েন্টের ম্যানজার শরিফুল ইসলাম চয়নকে ম্যানেজ করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ড্রয়ারে থাকা মালিক সুব্রত বিশ্বাসের সাতক্ষীরা সদরের পূবালী ব্যাংকের শাখার তিনটি অলিখিত চেক হাতিয়ে নিয়ে নিজের পরিচিত খুলনার লবনচোরার জিয়ারুল হককে দিয়ে একটি চেক ব্যবহার সিল ও সাক্ষর জাল করে খুলনা মহানগর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে ৫০ লাখ টাকার চেক ডিজঅনারের মামলা (সিআর-৫৮৪/১৯)করানোর অভিযোগ রয়েছে ইয়াছিন আলীর বিরুদ্ধে। চেক জালিয়াতির অভিযোগে ইয়াছিন আলীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সুব্রত বিশ্বাসের দায়েরকৃত ২৩০/২০ নং মামলাটির সিআইডি’র তদন্ত প্রতিবেদন পেয়ে গত ১৭ অক্টোবর মুখ্য বিচারিক হাকিম মোঃ হুমায়ুন কবীর আগামি ৩০ ডিসেম্বর আদালতে হাজির হওয়ার জন্য ওই তিন আসামীর বিুরদ্ধে সমন জারির নির্দেশ দিয়েছেন।

একই ভাবে চেক চুরি ও প্রতারনার অভিযোগে কর্মচারি শরিফুল ইসলাম চয়ন, কামাননগরের আমিনুল ইসলাম বকুল ও সহকারি ইনসট্রাক্টর ইয়াছিন আলীর বিরুদ্ধে সুব্রত বিশ্বাসের দায়েরকৃত সিআর-৬৩৭/২০ নং প্রতারণার মামলার গত ১২ অক্টোবর ইয়াছিন ও আমিনুল ইসলাম বকুল জামিন নিয়েছেন।

এ ছাড়া সুব্রত বিশ্বাসের কাছ থেকে ১৩ লাখ টাকার চেক নিয়ে তা জালিয়াতির মাধ্যমে ২৩ লাখ করে দায়েরকৃত মামলাটি আসামীর সঙ্গে আপোষ হয়ে গেছে মর্মে উল্লেখ করে আদালতে উপস্থাপন করে গত ১২ সেপ্টেম্বর প্রত্যাহার করেছেন ইয়াছিন আলী। একই ভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল তৈরি করে বড়দল গ্রামের সবুর মালীর বিরুদ্ধে মামলা করে তা গত ১২ সেপ্টেম্বর প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন ইয়াছিন আলী।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ২৫, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test