E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

আমতলী বকুল নেছা মহিরা ডিগ্রি কলেজ

সনদ জালিয়াতি করে বিতর্কিত অধ্যক্ষ হওয়া ফোরকান মিয়া বরখাস্ত

২০২১ নভেম্বর ২৯ ১৭:৩১:২০
সনদ জালিয়াতি করে বিতর্কিত অধ্যক্ষ হওয়া ফোরকান মিয়া বরখাস্ত

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি : স্নাতক পাসের ভুয়া সনদ দিয়ে আমতলীর বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের পদে পুর্নবহাল হওয়া  মো. ফোরকান মিয়াকে তাঁর পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কলেজ ব্যবস্থাপনা কমিটি শুক্রবার এক সভায় বিতর্কিত এই অধ্যক্ষের সনদ জালিয়াতির সত্যতা পাওয়ায় তাঁকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। 

কলেজ সূত্র জানায়, ফোরকান মিয়া ১৯৯৯ সালে বিএ (পাস) জাল সার্টিফিকেট দিয়ে আমতলী বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজে ইসলামী শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক পদে চাকুরি নেন। ২০১০ সালে তিনি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ওই কলেজের অধ্যক্ষ পদে আসীন হন। অধ্যক্ষ পদে আসীন হওয়ার তিন বছরের মাথায় ২০১৩ সালে দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ, নারী কেলেংকারীর অভিযোগে কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটি তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। সাময়িক বরখাস্তের পর তাঁর ডিগ্রি পাসের জাল সনদের তথ্য বেরিয়ে আসে।

এতে দেখা যায়, মো. ফোরকান মিয়া ১৯৯০-৯১ শিক্ষা বর্ষে আমতলী সরকারি কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৯২ সালের ডিগ্রি পাস (অনুষ্ঠিত ১৯৯৩ সালে) নিয়মিত ছাত্র হিসেবে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন। তার রেজিষ্ট্রশন নম্বর- ৫৩৭৫০ ও রোল নম্বর- ৬৫৮। তিনি ওই বছর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও তার ফলাফল স্থগিত থাকে। কিন্তু তিনি জালিয়াতি করে ওই বছরই বিএ পাস সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেন এবং ওই সার্টিফিকেট দিয়েই বকুলনেছা মহিলা কলেজে চাকরি নেন। কিন্তু আমতলী সরকারি কলেজ থেকে তিনি বিএ পাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হননি মর্মে ওই কলেজের অধ্যক্ষ মো. মজিবুর রহমান প্রত্যয়ন পত্র দেন। এ ঘটনার পর তিনি স্বেচ্ছায় কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করেন ফোরকান মিয়া।

কলেজ প্রশাসন জানায়, এরপর তাঁর সনদ যাচাই বাছাইয়ের জন্য কলেজের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রনব কুমার সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বরাবরে আবেদন করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিমাদ্রী শেখর চক্রবতী মো. ফোরকান মিয়ার ডিগ্রি (পাস) সনদটি জাল মর্মে প্রত্যয়ন দেন। এরপর তাঁর বিএ পাসের জাল সনদের বিষয়ে ২০১৩ সালে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা হলে আদালতে ফোরকান মিয়া তাঁর আমতলী কলেজের ডিগ্রি পাসের সনদ অস্বীকার করে প্রিমিয়াম ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রি পাসের সনদ আদালতে দাখিল করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে ওই সনদটির সত্যতা যাচাই করতে গেলে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের উপ পরিচালক জেসমিন পারভীন স্বাক্ষরিত একটি পত্রের মাধ্যমে জানান, প্রিমিয়াম ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি নামে তথাকথিত প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত নয় এবং অননুমোদিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ডিগ্রি গ্রহণযোগ্য নয়।

এদিকে ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয় ব্যবস্থাপনা কমিটি। কিন্তু ফোরকান মিয়া ওই সময় হাইকোর্টে অধ্যক্ষ পদ, বেতন ভাতা ফিরে পাওয়া ও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বন্ধে একটি রিট আবেদন করেন। হাইকোর্ট ওই সময় অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। কিন্তু ফোরকান মিয়াকে অধ্যক্ষ পদে পুনর্বহাল এবং বেতন ভাতার বিষয়ে কোনো আদেশ দেননি।

এদিকে গত ১২ জুলাই মো. ফোরকান মিয়া রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মজিবুর রহমানের স্বাক্ষর জাল করে ফরোয়াডিং দিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোসা. মাকসুদা আক্তার নামে একজনকে কলেজের অন্তবর্তীকালীন কমিটির আবেদন করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জোসনা আক্তারকে অন্তবর্তীকালীন সভাপতি করে কলেজ ব্যবস্থাপনার গঠন করে দেয়।

নতুন ওই ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে গত ১৯ জুলাই মো. ফোরকান মিয়াকে অবৈধভাবে পুনরায় অধ্যক্ষ পদে পুনর্বহাল করেন। ফোরকানকে অবৈধভাবে অধ্যক্ষ পদে পুর্নবহালের বিষয়ে ভারপাপ্ত অধ্যক্ষ মজিবুর রহমান বরগুনা জেলা প্রশাসন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন। তাঁর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বরগুনা জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন জমা দেন।

ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে ফোরকান মিয়াকে অবৈধভাবে অধ্যক্ষ পদে পুর্নবহাল করা হয়েছে। প্রতিবেদনে জেলা প্রশাসক আরও উল্লেখ করেন ফোরকান মিয়ার বিএ পাসের সনদে ত্রুটি রয়েছে।

অপর দিকে ২০১৭ সালে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর ফোরকান মিয়ার স্নাতক পাসের সনদ তদন্ত করেও একটি প্রতিবেদন দিয়েছিল। অধিদপ্তরের সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক রাকিবুল হাসান স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ফোরকান মিয়া চাকরি নেওয়ার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইস্যুকৃত ১৯৯২ সালের বিএ পাসের যে সনদ জমা দেন সেটি তদন্তে জাল প্রমানিত হয়েছে। সনদ নিয়ে ওই সময় আদালতে মামলা হলে ফোকান মিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সনদটি অস্বীকার করে প্রিমিয়াম ইউনিভার্সিটির একটি বিএ পাসের সনদ আদালতে প্রদর্শন করেন। যাচাই বাছাই শেষে ওই সনদও জাল প্রমানিত হয়। একই সঙ্গে প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করেন, যেহেতু তাঁর সনদ জাল, সেহেতু তাঁর নিয়োগ বিধি সম্মত নয়।

এদিকে ফোরকান মিয়া প্রতারণা করে পুনরায় অধ্যক্ষ পদে বসার জন্য জাল-জালিয়াতি করে মাকসুদা আক্তার জোসনাকে কলেজ ব্যবস্থাপনা কমিটির অন্তবর্তী সভাপতি হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুমোদন আনার পর মাকসুদা আক্তারের বিএ পাশের সনদটিও জাল প্রমানিত হওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জোসনা আক্তারকে অন্তবর্তী সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেয়। এরপর বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকুকে অন্তবর্তী সভাপতি নিযুক্ত করেন।

জেলা প্রশাসক ও শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর ফোরকান মিয়ার বিএ পাসের সনদ জাল বলে প্রতিবেদন দেওয়ায় ব্যবস্থাপনা কমিটি শনিবার ফোরকান মিয়াকে বরখাস্ত করেছেন। ফোরকানকে বরখাস্ত করায় কলেজ তথা এলাকার মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ মো. ফোরকান বলেন, আমি বরখাস্তের বিষয়ে কিছুই জানিনা।

কলেজ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি গোলাম সরোয়ার টুকু বলেন, ফোরকান মিয়ার বিএ পাসের সনদটি জাল প্রমানিত হওয়ায় তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

(এন/এসপি/নভেম্বর ২৯, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test