E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ধুমধাম করে বট-পাকুড় গাছের বিয়ে, অতিথি হাজারখানেক!

২০২২ জানুয়ারি ২৫ ২৩:৪৫:০৮
ধুমধাম করে বট-পাকুড় গাছের বিয়ে, অতিথি হাজারখানেক!

এ কে আজাদ, রাজবাড়ী : রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার বাবুপাড়া ইউনিয়নে ডাকুরিয়া মহাশ্মশানে ধুমধাম করে গত সোমবার ২৪ জানুয়ারী বটগাছ ও পাকুড়গাছের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ উপলক্ষে গ্রামের হাজারখানেক মানুষ অতিথি হিসেবে দাওয়াত খেয়েছে বলে জানা গেছে।

সন্ধ্যাবেলা শুভলগ্নে শুরু হয় বিয়ের মূল আনুষ্ঠানিকতা। গোধূলিলগ্নে মন্ত্র পড়ে বটগাছকে ‘বর’ ও পাকুড়গাছকে ‘কনে’ ধরে বিয়ে সম্পন্ন করেন পুরোহিত।

হিন্দু শাস্ত্রমতে, বটগাছ-পাকুড়গাছ একসঙ্গে থাকলে তাদের বিয়ে দিতে হয়। সে জন্যই একসঙ্গে বেড়ে ওঠা বট-পাকুড়গাছের বিয়ের আয়োজন করে শ্মশান কমিটি। এ জন্য শ্মশান প্রাঙ্গণ সজ্জিত হয় নানা রকম লাইটিংয়ে।

বট-পাকুড়গাছের চারপাশ বাঁধানো হয়েছে ইট ও টাইলস দিয়ে। বিয়ে ঘিরে বর-কনের পাশে ছাদনাতলা সাজানো হয়। ওপরে শামিয়ানা ও চারপাশে ছিল কলাগাছ। উৎসব আয়োজনের যেন কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু বর-কনের দেখা নেই। একটু পরেই জানা গেল বট ও পাকুড়গাছের বিয়ে উপলক্ষে এসব আয়োজন।

বিয়ের হলুদ কোটা, পুকুর থেকে জল আনা, বর ও কনের বাবাকে দিয়ে করা হয় বিদ্ধি অনুষ্ঠান। নারীরা পুকুরে গিয়ে গঙ্গাপূজা সেরে আসেন। জল দিয়ে ভরে আনেন ঘট। ছাদনাতলায় মঙ্গলঘট বসিয়ে শুরু হয় বিয়ের নিবেদন।

দুপুর থেকেই বিয়ে দেখতে বিভিন্ন এলাকার উৎসুক জনতার আগমন ঘটে। বিয়ের এই অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ খেতে এসেছিলেন হাজারখানেক অতিথি। খাবারের পদে ছিল পোলাও, সবজি, ডাল, ফুলকপির তরকারি, চাটনী ও মিষ্টি।

তারপর বিকেল ৪টায় বরের বাড়ি থেকে নারী-পুরুষ আসেন বরযাত্রী হয়ে। গেটে মিষ্টিমুখ করিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয় তাদের। বাদ্য-বাজনার তালে নেচে ওঠেন সব বয়সী নারী-পুরুষ। বর-কনের চারপাশ ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকেন অতিথিরা।

মহা ধুমধামে আয়োজিত এই বিয়ের বটগাছের বাবা হয়ে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেন ডাকুরিয়া মহাশ্মশানের সেবাইত বন্ধন মিত্র ও পাকুড় গাছের বাবা ছিলেন উপজেলার পাট্টা ইউনিয়নের বাসিন্দা ও ইউপি সদস্য অতুল চন্দ্র সরকার। তারা দুজনই বাবার দায়িত্ব পালন করে হয়েছেন বেশ খুশি। তারা জানান এই বট-পাকুড় গাছের বিয়ের মধ্য দিয়ে তাদের মধ্যেও আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট থাকবে।

বিয়ে দেখতে আসা আরতি রানী সাহা বলেন, এই ধরনের বিয়ের কথা আমি শুনেছি। কিন্তু কখনোই নিজ চোখে দেখিনি। তাই অনেক আগ্রহ নিয়ে এই বিয়ে দেখতে এসেছি। তিনি আরও বলেন, বট ও পাকুড়ের এই বিয়েতে কোনো মঙ্গল হবে কি না জানি না, তবে ধর্মমতে দেওয়া এই বিয়েতে আমি থাকতে পেরে অনেক খুশি।

শ্মশান কমিটির সভাপতি বাবুল চৌধুরী বলেন, সনাতন ধর্মমতে বট-পাকুড়ের বিয়ে দেওয়া হলে গ্রামবাসীর মঙ্গল হয়। শুধু তা-ই নয়, পবিত্র গীতাতেও বট-পাকুড়ের বিয়ের কথা উল্লেখ রয়েছে। পূর্বকাল থেকেই এ ধরনের বিয়ের রীতি প্রচলন হয়ে আসছে। তাই আমাদের শ্মশানের ভেতরে একসঙ্গে বেড়ে ওঠা বট-পাকুড়ের বিয়ে দেওয়া হয়েছে।

(একে/এসপি/জানুয়ারি ২৫, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test