E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঝিনাইদহে সরকারি বাওড়ের জমি ব্যক্তির নামে রেকর্ড!

২০২২ ফেব্রুয়ারি ০৬ ১৭:১৭:৫০
ঝিনাইদহে সরকারি বাওড়ের জমি ব্যক্তির নামে রেকর্ড!

অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : জেলা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঝিনাইদহের মহেশপুরে উপজেলার একটি বাওড়ের আড়াই'শ বিঘা জমি ব্যক্তির নামে রেকর্ড হয়েছে। কি ভাবে সরকারী সম্পত্তি ব্যক্তি বিশেষ হাতিয়ে নিল এ নিয়ে যেমন কোন তদন্ত নেই তেমনি নেই জবাবদিহিতা। ভাবদিয়া নামের এই বাওড়টি মহেশপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নে অবস্থিত। প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতার কারণে সরকারি বাওড়টির প্রায় ২৫০ বিঘা বিল শ্রেণীর জমি দখলদাররা তাদের নামে রেকর্ড করে নিয়েছেন। এখন সরকারের পক্ষ থেকে মামলা করে দখল ঠেকানোর চেষ্টা চলছে।

অবশ্য স্থানীয়রা বলছেন এটা নামমাত্র মামলা। এর সঠিক তদবির নেই, নেই শক্ত প্রতিবাদ। অবশ্য সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, এই বিল নিয়ে ঝামেলা আছে। ইতিপূর্বে ভূমিহীনদের মাঝে বন্দোবস্ত দেওয়ায় এই জটিলতা দেখা দিয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায় বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের গাড়াপোতা আর ভাবদিয়া গ্রামের মাঝ দিয়ে ভাবদিয়া বাওড়টি বয়ে গেছে। এস.এ রেকর্ডে বাওড়ে তিনটি দাগে রয়েছে ২৫২ একর ৭ শতক সরকারি জমি। বাওড়টি দিয়ে পার্শ্ববর্তী ৩২৬ টি মৌজার মাঠের পানি বড়বিল হয়ে কোদলা নদীতে নেমে যেতো। বর্তমানে বাওড়ে অর্ধশত বড় বড় পুকুর কাটা হয়েছে। সেখানে দখলদাররা মাছের চাষ করেন। এই পুকুর কাটার কারণে বর্ষা মৌসুমে মাঠের পানি আর নামতে পারে না। ফলে কৃষকের ফসল পানিতে ডুবে যায়।

বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন সহকারী ভুমি কর্মকর্তা নিকুঞ্জ কুমার বিশ্বাস জানান, ভাবদিয়া বাওড়টি সরকারি। এই বাওড়ে সরকারি জমি এস.এ ও সিএস রেকর্ডে সরকারের ১ নম্বর খতিয়ানে ছিল। আর.এস রেকর্ডের ৭১ জনের নামে রেকর্ড হয়েছে। যা তাদের নজরে আসলে রেকর্ড সংশোধনের মামলা করেন। বর্তমানেও ৭১ টি মামলা চলছে। ব্যক্তির নামে রেকর্ড হওয়া জমির ছাপা পরচা এখনও তারা পাননি, পেলে বুঝতে পারবেন সরকারের জমি কতটুকু আছে। ভূমিহীনদের বন্দোবস্ত দেওয়া প্রসঙ্গে ওই ভূমি কর্মকর্তা বলেন, ইতিমধ্যে বন্দোবস্ত বাতিল করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার জানান, অল্পদিনে বাওড়টি বে-দখল হয়ে গেল। বড় বড় পুকুর কেটে দুই গ্রামের মানুষ বাওড়ের জমি দখল করেছে। আনুমানিক ২৫ বছর ধরে জমিগুলোতে পুকুর কাটা হয়। গোটা বাওড়ের জমি দখলদারদের কবলে চলে গেছে। তিনি আরো জানান, দখলদাররা আর এস রেকর্ডের সময় সরকারি কর্তাদের ম্যানেজ করে নিজেদের নামে রেকর্ড করিয়েছেন। এখন তারাই মালিক বলে প্রচার দিচ্ছেন।

গাড়াপোতা গ্রামের আতিয়ার রহমান জানান, একটি সময় ছিল তারা বাওড়ে মাছ ধরতেন। দেশিয় সব মাছ পাওয়া যেতো। বাওড় পাড়ের মানুষের মাছ কিনতে হতো না, অনেকে মাছ বিক্রি করে সংসার চালাতেন। যা এখন স্বপ্নের মতো মনে হয়। আব্দুল হক জানান, জায়গাটি বাওড়ের ছিল। ভুমিহীনদের নামে বন্দোবস্ত দেওয়া জমি তারা ক্রয় করেন। এভাবে তারা জমির মালিক হয়েছেন। তিনি আরো জানান, আর.এস রেকর্ডে জমি তাদের নামে রেকর্ড হয়েছে। সরকার সকলের দখল উচ্ছেদ করলে তিনিও ছেড়ে দেবেন।

বিষয়টি নিয়ে মহেশপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আনিচুল হক জানান, তারা ভাবদিয়া বাওড়ের জমি ফেরত পেতে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে এই জমি নিয়ে একটু সমস্যা রয়েছে। ইতিপূর্বে নানা ভাবে জমি জনগনকে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে ফেরতের জন্য মামলা চালানো হচ্ছে। আশা করছেন সরকারের জমি সরকারের ঘরে ফিরে আসবে।

(একে/এএস/ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test