E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

যমুনা সার কারখানায় আধিপত্য নিয়ে আ.লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ৩০

২০২২ ফেব্রুয়ারি ২৪ ১৭:০৩:০৪
যমুনা সার কারখানায় আধিপত্য নিয়ে আ.লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ৩০

রাজন্য রুহানি, জামালপুর : জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে যমুনা সারকারখানায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষে পুলিশ ও সংবাদকর্মীসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে।

গতকাল বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে বৃহষ্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, যমুনা সারকারখানা নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও তারাকান্দি ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম মানিক এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ট্রাক মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিকের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। কারখানার শ্রমিক-কমর্চারি ইউনিয়নের (সিবিএ) নির্বাচন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়।

এরআগেই এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিতে মশিউর রহমান মোর্শেদের নেতৃত্বে রফিকুল ইসলামের লোকজন বুধবার বিকেলে তারাকান্দি শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান নেয়। এসময় তারা আশরাফুল আলম মানিক গ্রুপের যুবলীগ কর্মী খোকন মিয়াকে (৩৫) বেধড়ক পেটায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং মানিকের লোকজন জড়ো হয়ে রফিক গ্রুপের কামরুজ্জামানকে (৪০) পাল্টা মারধর করে। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। পরে খোকন ও কামরুজ্জামানকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে রাত থেকে রফিকের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুনরায় অবস্থান নিলে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সকালে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। পাল্টাপাল্টি হামলা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে। এসময় এসআই ফয়জুর রহমান, এসআই সোহাগ এএসআই আবু শামা, সংবাদকর্মী রাইসুল ইসলা ও সোহেল রানা আহত হন। এছাড়া স্থানীয় আনিসুর রহমান (৪০), সাইফুল ইসলাম (৩২), মো. মণ্ডল (২৫), শফিকুল ইসলাম (৩০), মিন্টু মিয়াসহ (৩০) উভয়পক্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হয়।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি (শুক্রবার) সকালে সারকারখানা নিয়ন্ত্রণে নিতে রফিক গ্রুপের ক্যাডার মশিউর রহমান মোর্শেদের নেতৃত্বে তারাকান্দি পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে হামলা ও ৬ পুলিশ আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় থানায় মামলা ও মোর্শেদ জেল হাজতে গেলেও সম্প্রতি সে জামিনে আসে এবং এলাকায় নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।

কারখানার শ্রমিক-কমর্চারি ইউনিয়নের (সিবিএ) সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান জানান, আসন্ন সিবিএ নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে একটি পক্ষ এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। প্রশাসন কঠোর না হলে নির্বাচনে বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।

তারাকান্দি ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম মানিক অভিযোগ করেন, সিবিএ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রফিকুল ইসলাম প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। বিএনপি থেকে আসা তার ক্যাডার মোর্শেদকে দিয়ে এলাকায় হামলা ও ভীতিসঞ্চার করায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জানান, সারকারখানার পরিবহন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এমপির লোকজন সাধারণ শ্রমিকদের মারধর করে। শ্রমিকরা পরিবহন বন্ধ করে দেওয়ায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। তার লোকদের ওপর গুলিবর্ষণ করায় কয়েকজনকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে তার লোকজনকে দায়ী করা হচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেন।

এ ব্যাপারে জামালপুরের এএসপি (সদর সার্কেল) মো. জাকির হোসেন সুমন জানান, যমুনা সার কারখানার সিবিএ'র নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। বর্তমানে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।

(আরআর/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test