E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঝিনাইদহে কলাগাছ থেকে তৈরী হচ্ছে উন্নতমানের সুতা

২০২২ ফেব্রুয়ারি ২৫ ১৮:৩০:১৯
ঝিনাইদহে কলাগাছ থেকে তৈরী হচ্ছে উন্নতমানের সুতা

অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহে কলা গাছের আঁশ থেকে সুতা তৈরির উদ্যোগ নিয়ে এলাকায় সাড়া ফেলে দিয়েছে দুই উদ্যোক্তা। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালীচরণপুর ইউনিয়নের মান্দারবাড়িয়া গ্রামের এলাহী বিশ্বাসের ছেলে ওসমান বিশ্বাসের বাড়িতে পোশাক ব্যবসায়ী একেএম শাহেদুল হক ও দুবাই ফেরত ওসমান বিশ্বাস যৌথভাবে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। ঝিনাইদহের ব্র্যান্ডিং পণ্য হচ্ছে কলা। কলা উৎপাদনের পর কলাগাছ পশু খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। বাকী সব ফেলে দিতে হয়। সেই ফেলে দেওয়া কলাগাছের আঁশ থেকে সুতা উৎপাদন হলে ব্যপক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা।

এই খাতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ব্যপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে। যেখানে কলা উৎপাদনের পর গাছ পরিষ্কারের জন্য বাড়তি খরচ হয়, সেখানে শাহেদ ও ওসমান ক্ষেত থেকে কলাগাছ সংগ্রহ করে কলাচাষিদের উপকার করছেন। শাহেদ ও ওসমান ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে স্থানীয় ওয়ার্কশপ থেকে কলাগাছের বাকল থেতলে আঁশ সংগ্রহের মেশিন বানিয়ে নিয়েছেন। বৈদ্যুতিক মটরে চলছে সেই মেশিন। ৩ জন নারী শ্রমিক সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত কাজ করছে। ৪ হাজার টাকা মাসিক বেতনে তারা কাজ করে। বাড়ির পাশে স্বল্প বেতন হলেও কাজে খুশি তারা।

সরেজমিন দেখা যায়, নারী শ্রমিক অর্চনা দাস (৪০) কলাগাছ থেকে বাকল ছড়াচ্ছেন। আমেনা খাতুন (৬২) সেই বাকল মেশিনে থেতলে আঁশ বের করছেন। আর চাইনা দাস নামের আরেক নারী শ্রমিক সেই বাকল পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকাচ্ছেন। এই অবস্থায় সূতা বিক্রি করলে ১৭০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা প্রতি কেজি মূল্যে এদেশের বিভিন্ন হ্যান্ডিক্রাফট কোম্পানি কিনে নিচ্ছেন। শাহেদ-ওসমান এই প্রকল্পে মেশিন তৈরিতে ৮০ হাজার, শেড তৈরি, মটর স্থাপন ও শ্রমিক মজুরি দিয়ে মোট ৪ লাখের মত বিনিয়োগ করেছেন। তারা এখন ভাবছেন মোল্ডিং মেশিনের মাধ্যমে সুতা তৈরি করে বিদেশে বিক্রি করতে। এই প্রক্রিয়ায় যেতে এই প্রকল্পে ৫০ লাখ টাকার মত বিনিয়োগ করতে হবে।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম শাহীন জানান, এটি একটি ভালো উদ্যোগ। আমরা সরেজমিনে গিয়ে প্রকল্পটি দেখে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। প্রকল্প ঘুরে দেখা যায় প্রথমে কলাগাছ থেকে বাকল সংগ্রহ করে সেগুলো পরিষ্কার করে মেশিনে দিয়ে থেতলে ফেলা হচ্ছে। তারপর পরিষ্কার পানিতে ভালো করে ধুয়ে রোদে শুকানো হাচ্ছে। এরপরে প্রথকে ব্লিচিং পাউডারের দ্রবণে ডুবিয়ে পানি নিংড়িয়ে আবার হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ও সফনোর মিশ্রিত দ্রবণে ডুবিয়ে পূণরায় রোদে শুকানো হচ্ছে। এবার এটা মোল্ডিং মেশিনে দিয়ে প্রথমে তুলা ও পরে স্পিনিং মেশিনে দিয়ে সুতা উৎপান করা হবে। এই পর্যন্ত এই প্রকল্পে কয়েক মন আঁশ উৎপাদিত হয়েছে। ভারতের বাজারেও এই আঁশের চাহিদা রয়েছে বলে জানান উদ্যোক্তা শাহেদ।

শাহেদ জানান, এই ফাইবার খুব উন্নতমানের ও প্রাকৃতিক। ব্যাগ, জুতা, শোপিচ পণ্য ও শাড়ি কাপড় তৈরিসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। আমরা মোল্ডিং ও স্পিনিং মেশিন বসাতে পারলে আমরা সুতা উৎপাদনে যেতে পারবো। যেহেতু আমাদের জেলায় কলার চাষ বেশি হয় তাই কাঁচামাল অপ্রতুল। যুবসমাজ এই উদ্যোগ গ্রহণ করলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ অর্থনৈতিক পণ্য হিসাবে গড়ে কলার আঁশের সুতার একটি বিশাল বাজার তোলা সম্ভব।

(একে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test