E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাচন অফিস

নির্বাচন অফিসারসহ স্টাফদের ঘুষ বাণিজ্যের একাধিক ভিডিও ভাইরাল

২০২২ মার্চ ২৫ ১৬:৩৪:০৩
নির্বাচন অফিসারসহ স্টাফদের ঘুষ বাণিজ্যের একাধিক ভিডিও ভাইরাল

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাচন অফিসারসহ অফিসের স্টাফদের ঘুষ বাণিজ্যের একাধিক ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম তার অফিসে টুম্পা নামে এক অফিস স্টাফের পাশে দাড়িয়ে ওপেন ঘুষ গ্রহণ করতে দেখা গেছে। অপরদিকে অফিস স্টাফ টুম্পাসহ আরো একজনকেও ঘুষ গ্রহণ করতে দেখা গেছে। জানা যায়, অফিস চলাকালে প্রতিদিন সেবা গ্রহীতাদের নিকট থেকে তারা এভাবেই অবৈধ পন্থায় হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। দেখার যেন কেউ নেই।  

ভোটার তালিকায় নাম উঠানো, সংশোধন ও স্থান পরিবর্তনসহ সব কাজে তাকে ঘুষ না দিলে কোন কাজই হয় না। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে এ উপজেলার হাজারও সেবাপ্রার্থী। ভুক্তভোগীরা বিষয়টিকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বিভিন্ন সেবাপ্রার্থীদের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম সরকারি সকল নিয়মকে উপেক্ষা করে নিজের মত কাজ করে চলেছে। ঘুষ ছাড়া কোনো কাজে হাত দেয় না তিনি। তার কাছে ঘুষ বাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট হওয়ায় প্রকাশ্যে অফিসে দাঁড়িয়ে ঘুষ নিয়ে পকেট ভরেন তিনি।

এনআইডি স্থানান্তরে সরকারি কোনো ফি না থাকলেও তিনি টাকা ছাড়া তা করে দেন না। আর এনআইডি কার্ডে কোনো প্রকার ভুল সংশোধন করতে হলে ৫শ’ থেকে ৫'হাজারেরও বেশী টাকা দিতে হয় তাকে। টাকা না দিলে বিভিন্ন তাল বাহানা করে হয় জেলা নির্বাচন অফিসে অথবা ঢাকা আগারগাঁও যেতে বলে সেবা গ্রহীতাদের। হেস্তনেস্ত হওয়ার চেয়ে ঘুষ দিয়েই এনআইডি সংশোধন করে নিতে বাধ্য হয় অনেকেই।তবে এনআইডি তথ্যের অনলাইন কপি আনতে গেলে কোন রিসিট ছাড়াই তাকে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দিতে হয়। এভাবে উপজেলার সেবাপ্রার্থীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

তবে অনলাইন কপি সংগ্রহ করতে গেলে যেখানে সরকার নির্ধারিত ২৩০ টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে স্লিপ নিয়ে যাওয়ার কথা সেখানে নগদ (ঘুষ) টাকায় করে দেন এই কর্মকর্তা। এতে করে সরকার যেমন হারাচ্ছে অনেক রাজস্ব, তেমনি জনগণ সরকারি ফি দেওয়ার চেয়ে বেশী মূল্য দিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছে অহরহ।

ফেইসবুকে পোষ্ট করা ভিডিওতে টুম্পা নামে এক অফিস স্টাফের পাশে দাড়িয়ে ঘুষ প্রধানকারী উপজেলার ছয়সূতী ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা মোছা. পারভীন বেগম (৪০) বলেন, তিনি তার দুই ভাগিনার দুইটি এনআইডি’র অনলাইন কপি সংগ্রহ করতে নির্বাচন অফিসে যাওয়ার পর নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম প্রকাশ্যে তার নিকট ৬০০ টাকা দাবী করেন। পরে তিনি তাকে নগদ ৫০০ টাকা (ঘুষ) দিয়ে তার নিকট থেকে দুইটি অনলাইন কপি সংগ্রহ করেন।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সোহেল, আরিফ ও স্বপনসহ একাধিক ভুক্তভোগীরা বলেন, টাকা ছাড়া এখানে কোনো প্রকার সেবা নেয়া সম্ভব না। তারা আরও বলেন এনআইডি’র অনলাইন কপি সংগ্রহ করতে গেলে সে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা করে নিচ্ছেন। তারা একটু কম দিতে চাইলেও দিতে পারেননা। কোনো ব্যক্তি তার জাতীয় পরিচয় পত্রের সামান্য ভুলের সংশোধনের জন্য গেলে নির্বাচন অফিসার বলে দেন ৬ মাস লাগবে, তার আগে হবে না। এভাবেই ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদের।

উপজেলার বেশ কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, তৃতীয় ধাপে অনুষ্টিত কুলিয়ারচরে ৫ ইউপি নির্বাচনের কয়েক দিন আগে আলি হায়দার নামক একটি ফেসবুক আইডি থেকে "ইউপি নির্বাচন ঘিরে কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের ঈদ। বছরে অর্ধকোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্যে। বিস্তারিত পত্রিকায় আসছে খুব শীঘ্রই " এবং মোঃ নাঈমুজ্জামান নাঈম নামক একটি ফেইসবুক আইডি থেকে "ইউপি নির্বাচন ঘিরে কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ বিস্তারিত আসছে " এ দুইটি লিখা পোস্ট করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের ঘুষ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়গুলো। এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিংবা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন প্রকার ব্যবস্থা না নেওয়ায় এখন তার অফিসে দাড়িয়ে ওপেন ঘুষ গ্রহণ করার সাহস পেয়েছেন উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।

ফেসবুকে প্রথম ভিডিও পোষ্টকারী সোহেল আরমান (৪৫) নামক এক সেবা গ্রহীতা বলেন, কয়েকদিন আগে আমার চোখের সামনে পারভীন নামে এক নারীর কাছ থেকে ওপেন ৫০০ টাকা ঘুষ নিতে দেখেছি আমি। যার প্রমাণ আমার পোষ্ট করা ভিডিও। তিনি আরো বলেন, এসব ঘুষের টাকা দিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে গিয়ে আমোদ ফুর্তি করে বেড়ান তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ ভালুকা "গ্রীন অরণ্য পার্ক"-এ স্ব-পরিবারে বেড়াতে যান।

এভাবে প্রকাশ্যে ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে জানতে উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে কোন ভাবেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

টুম্পা নামে এক অফিস স্টাফের চেয়ারের পাশে দাড়িয়ে অফিস চলাকালীন নিয়মিত প্রকাশ্যে ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ আশ্রাফুল আলম বলেন, কোন উপজেলা নির্বাচন অফিসে কোনো প্রকার নগদ টাকা লেনদেনের সুযোগ নেই। সবকিছুর জন্য ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে স্লিপ জমা দেয়ার পর কাজ করে দেওয়ার নিয়ম। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এসএস/এসপি/মার্চ ২৫, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test