E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিল্প বর্জ্য গিলে খাচ্ছে খাইঞ্জার হাওরের কৃষি জমি! 

২০২২ মার্চ ৩০ ১২:৪৭:৫৮
শিল্প বর্জ্য গিলে খাচ্ছে খাইঞ্জার হাওরের কৃষি জমি! 

মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) এর বিভিন্ন শিল্প কারখানা থেকে পলিতিন, প্লাষ্টিকসহ দূষিত বর্জ্য পার্শ্ববর্তী খাইঞ্জার হাওরের কৃষি জমিতে পরে গিয়ে প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে হাওরের কৃষি জমি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ আর হতাশা রয়েছে। বিসিক শিল্প নগরীর বিভিন্ন কারখানার মধ্যে দু একটি কারখানায় ইটিপি স্থাপন হলেও অধিকাংশ কারখানা কর্তৃপক্ষ বর্জ অপসারণের জন্য নিজস্ব কোন প্লান্টেশন না থাকায় এসব বর্জ ছোটখাটো খাল ও ড্রেন দিয়ে প্রবেশ করছে হাওরের কৃষি জমিতে। ফলে দুর্গন্ধ ছড়ানোর পাশাপাশি দুষিত হচ্ছে হাওরের পরিবেশ। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে বর্জ আর হাওরের পানি একাকার হয়ে দুষিত হচ্ছে হাওরের পরিবেশ, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জেনেও কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় হতাশা বাড়ছে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে।

জানা যায়, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গোমরা এলাকায় গড়ে উঠা বিসিক শিল্প নগরীতে খাদ্য সামগ্রী, ক্যামিকেলসহ প্রায় ৩৮টি বিভিন্ন প্রকারের শিল্প কারখানা চালু রয়েছে। এসব শিল্প কারখানার বর্জ অপসারণের জন্য নিজস্ব কোন ব্যবস্থাপনা না থাকায় বিসিক শিল্প নগরীর সীমানা পেড়িয়ে পলিতিন ও প্লাস্টিকের বর্জ ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের হাওরে। ছড়িয়ে পড়া এসব পলিতিন আর প্লাস্টিকের বর্জ অনেক সময় সড়কের পাশের খোলা জায়গায় কিছুটা জ্বালানো হলেও ড্রেন ও খালের পানির সাথে মিশে গিয়ে হাওরে গিয়ে পড়ছে অধিকাংশ পলিতিন আর প্লাস্টিকের বর্জ। শুধু প্লাস্টিক আর পলিতিন নয়, রাবার ও ক্যামিকেল কারখানার বিশাক্ত বর্জও গিয়ে পড়ছে পাশের হাওরের কৃষি জমিতে। বর্জ গুলো হাওরের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হেক্টর কৃষি জমিতে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে দীর্ঘদিন যাবত ওই হাওরের বেশ কিছু কৃষি জমিতে ধান উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। কৃষকরা চাষাবাদের জন্য জমিতে নামতে গিয়ে দুষিত বর্জ লেগে চর্মসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে বিসিক কর্তৃপক্ষ অনেকটা নির্বীকারই বলা যায়। স্থানীয় কৃষকদের বক্তব্য, বর্জের কারনে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে তাই বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর যথাযত ব্যবস্থা নিলে হয়তো এর একটি সুরাহা হবে।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুব্রত কান্তি দত্ত মনে করেন, বিসিক শিল্প নগরীর বর্জের কারনে জমিতে বুরো ফসল নষ্ট হচ্ছে, পাশাপাশি সেই জমিতে কৃষক নামলে তাঁর চর্মসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ চড়িয়ে পড়ছে। কাজেই এই বর্জ যাতে ফসলের মাঠে না যায় সেদিকে নজর রাখা জরুরী। এ বিষয়টি পরিবেশ অদিদপ্তরের আওতাভুক্ত আর কৃষকরাও অভিযোগ করেছেন, আমরা বিষয়টি বিসিক কর্তৃপক্ষকে দ্রুতই জানাবো।

নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক স্থানীয় এক কৃষক বলেন, বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষকে বারবার বলা হলেও কোন প্রদক্ষেপ নেয়া হয়না, এমনকি পত্রিকায় এনিয়ে রিপোর্ট হলেও অবস্থার কোন পরিবর্তন না হওয়ায় আমাদের আর কোন আগ্রহ নেই কথা বলার।

ওই হাওরে দীর্ঘদিন যাবত বুরো ও আমন চাষাবাদ করে আসছেন স্থানীয় কৃষক ছকিল মিয়া ও আব্দুল হক। সরেজমিন আলাপকালে তীব্র ক্ষোভ আর হতাশা প্রকাশ এদুই কৃষক বলেন, কারখানার বর্জের সাথে পলিতিনসহ এসিডের পানি এসে পড়ছে হাওরে, বিশাক্ত বর্জের কারনে চাষাবাদ করলে সেগুলো জ্বলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেকারনে কোনভাবেই চাষাবাদ করা সম্ভব হয়না। ময়লার কারনে শুধূ যে চাষাবাদ নষ্ট হচ্ছে তাই নয়, চাষাবাদে নামতে গিয়ে হাতে পায়ে জ্বালাপোড়া,চুলকানিসহ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।

কৃষক ছকিল মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমিসহ অনেকেই এই হাওরে অনেকদিন যাবত চাষাবাদ ছেড়ে দিয়েছি। কয়েকবছর আগে প্রায় ১৭ থেকে ১৮ কিয়ার জায়গা জুড়ে ধান রোপন করেছিলাম, পরবর্তীতে ময়লার পানির কারনে সবগুলো ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চাষাবাদ ছেড়ে দিয়েছি।

এবিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে বিসিক শিল্প নগরীর উপ-ব্যবস্থাপক মো: বিল্লাল হোসেন ভূইয়া বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, শিল্প নগরীতে মোট ৬৩টি শিল্প কারখানার মধ্যে বর্তমানে চালু রয়েছে ৩৮টি, চালু থাকা কারখানা কর্তৃপক্ষকে বর্জ শোধানাগার বা ইটিপি প্ল্যান্ট দ্রুত চালু করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যাতে বিশাক্ত বর্জ বাহিরে না যায়।

তিনি আরও জানান, বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধবতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, সরেজমিন পরিদর্শন করে পরবর্তীতে এবিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বর্জ নিয়ে বিসিক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি রয়েছে দাবী করে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো: বদরুল হুদা বলেন, এখানে দুই থেকে তিনটি প্রতিষ্ঠানে ইটিপি করা হয়েছে, অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতেও যেন দ্রুত বর্জ অপসারণের নিজস্ব ব্যবস্থা থাকে সেটি আগেই বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমি সরেজমিন গিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

(একে/এসপি/মার্চ ৩০, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test