E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সচ্ছলেরা পেয়েছেন টিসিবির কার্ড, বঞ্চিত অসচ্ছলেরা!

২০২২ মার্চ ৩০ ১৭:০৬:৩২
সচ্ছলেরা পেয়েছেন টিসিবির কার্ড, বঞ্চিত অসচ্ছলেরা!

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : গরুর দুধ বেচে চলে আবু তাহেরের সংসার। থাকেন টিনের একটি ছাপরায়। সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবির পণ্য কেনার ফ্যামিলি কার্ড পাননি তিনি। একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারা চৌধুরী। বেসরকারি একটি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক তিনি। শহরে তাঁর বহুতল পাকা বাড়িও আছে। অসচ্ছল তাহের না পেলেও সচ্ছল এই নেত্রীর নামে টিসিবির কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ঠিকই। টিসিবির কার্ড পাওয়া না পাওয়া নিয়ে বিপরীত এই চিত্র ঠাকুরগাঁও পৌর এলাকার।

টিসিবি রংপুর কার্যালয়ের উপ-ঊর্ধ্বতন কার্যনির্বাহী প্রতাপ কুমার জানিয়েছেন, উপকারভোগী নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনসংখ্যা, দারিদ্র্যের সূচক বিবেচনায় রেখে তালিকা তৈরি করার কথা। কিন্তু ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় নীতিমালা ভেঙে চলমান এই কর্মসূচির তালিকায় আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তিদের নামে কার্ড বরাদ্দের অভিযোগ উঠেছে।

নিজের নামে কার্ডের কথা শুনে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারা চৌধুরী বলেন, ‘আমি কারও কাছে কার্ড চাইনি। আর আমি তো কার্ড পাওয়ার যোগ্যদের মধ্যে পড়িও না। এরপরও আমার নামে কীভাবে এল, বলতে পারছি না।’

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সারা দেশের মতো ঠাকুরগাঁওয়ে ৯২ হাজার ৬৮৮টি পরিবারের মধ্যে টিসিবির পণ্য কেনার কার্ড বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় দেওয়া হয়েছে ৭ হাজার কার্ড। টিসিবির ডিলাররা এই কার্ডধারীদের কাছে ‘প্যাকেজ’ হিসেবে তিনটি পণ্য (দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি চিনি, দুই কেজি মসুর ডাল) ৪৬০ টাকায় বিক্রি করছেন।

গত সোমবার ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় বড় মাঠে বেলা ১১টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, টিসিবির পণ্যের জন্য নারী ও পুরুষদের পৃথক দুটি দীর্ঘ লাইন। প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে তাঁরা লাইনে দাঁড়িয়েছেন। সবার হাতে হাতে কার্ড।

দুপুর ১২টার দিকে দেখা যায়, উপকারভোগীদের লাইনে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারপাড়া এলাকার বাসিন্দা সফিকুল ইসলামকে দাঁড়াতে দেখা যায়। সে সময় লাইনে দাঁড়ানো আমিনুল ইসলাম নামে আরেক ব্যক্তি বললেন, সফিকুল ইসলাম এলাকার একজন ধনী ব্যক্তি। তাঁর বহুতল বাড়ি ও অনেক জমিজমা আছে। তিনি এই কার্ড পেলেন কীভাবে? গতকাল মঙ্গলবার সকালে সরকারপাড়ায় গিয়ে আমিনুল ইসলামের কথার সত্যতা পাওয়া গেল। সফিকুলের বাড়িটি দোতলা। তার ওপর তিনতলা উঠছে।

সরকারপাড়া এলাকার বাসিন্দা নাসিমা বেগম বলেন, এ রকম অনেক ধনীকে টিসিবির কার্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁরা পাওয়ার যোগ্য হয়েও কার্ড পাননি।

ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের ট্যাগ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জেলা বাজার অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা রতন কুমার রায়। জানতে চাইলে রতন বলেন, শুধু ৪ নম্বর ওয়ার্ডেই নয়, সব ওয়ার্ডেই কিছু সচ্ছল ব্যক্তি টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড পেয়েছেন। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।

সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের বড় ভাই আনসারুল হককে টিসিবির পণ্য কিনতে দেখা যায়। সে সময় শহরের নরেশ চৌহান সড়কের বাসিন্দা আল নাসির বলেন, শহরের নরেশ চৌহান সড়কে আনসারুল হকের দোতলা বাড়ি ও দোকানঘর এবং গ্রামে জমিজমা আছে।

আনসারুল হকের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর ছোট ভাই আবুল কালাম আজাদ মুঠোফোনে বলেন, তাঁর ভাই চিনিকলে চাকরি করতেন। আড়াই বছর আগে অবসর নিয়েছেন। অবসরের পর যে সুবিধা পাওয়ার কথা, তা এখনো পাননি। তাই তিনি একপ্রকার কষ্টেই দিন পার করছেন। সেই কারণে তাঁকে টিসিবির একটি কার্ডের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সরকারি চাকরিজীবী, ইট ব্যবসায়ী, কলেজশিক্ষক, অবসরে যাওয়া স্কুলশিক্ষক, ঠিকাদারদের মতো সচ্ছল ব্যক্তিদের টিসিবির পণ্য কিনতে দেখা গেল।

৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৯০টি কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুদাম সরকার বলেন, খুব কম সময়ের মধ্যে তালিকা করতে হয়েছে বলে কিছু কিছু ভুল থেকে যেতে পারে। আর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারা চৌধুরীর নামে কার্ড থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কে বা কারা তাঁর নামে কার্ড দিয়েছে, তা বলতে পারবেন না।

ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মেয়র আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, যেকোনো মানবিক সহায়তার কার্যক্রম পরিচালনা করতে গেলে কিছু ভুলভ্রান্তি থেকে যায়। পাওয়ার যোগ্য নন, এমন ব্যক্তিরা টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড পেয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অভিযোগটি যাচাই-বাছাই করে তাঁদের কার্ড বাতিল করা হবে।

(এফআর/এসপি/মার্চ ৩০, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test