E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

একাধিক বাছাইয়ে ভুয়া প্রমাণের পরও ‘মুক্তিযোদ্ধা’ তালিকায় নাম!

২০২২ এপ্রিল ১০ ১৪:৪৪:৫১
একাধিক বাছাইয়ে ভুয়া প্রমাণের পরও ‘মুক্তিযোদ্ধা’ তালিকায় নাম!

তুষার কান্তি বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : একাধিক যাচাই-বাছাই ও তদন্তে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ দাবি ভুয়া প্রমাণিত হয়। এ প্রেক্ষিতে ভাতা বন্ধ এবং গৃহীত ভাতা ফেরতের নির্দেশনা দেয় স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু তারপরও সর্বশেষ প্রকাশিত সমন্বিত তালিকায় তার নাম ওঠেছে।

‘ভাগ্যবান’ এ ব্যক্তি হলেন গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর গ্রামের মৃত আব্দুল হক শেখের ছেলে আব্দুল ওয়াদুদ শেখ। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বিত তালিকায় ৫২২৪ ক্রমিকে তার নাম রয়েছে। এতে পরিচিতি নম্বর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ০১৫৫০০১১৯৮৭। তালিকায় এ নাম দেখে বিস্মিত কাশিয়ানী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা।

কাশিয়ানী উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার সহ ১০ মুক্তিযোদ্ধা এ ব্যাপারে জামুকা, দুদক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের সাথে প্রমাণের কাগজ পত্র সংযুক্ত করেছেন।

কাশিয়ানী উপজেলার ১০ মুক্তিযোদ্ধার স্বাক্ষরিত অভিযোগ বলা হয়েছে, আব্দুল ওয়াদুদ শেখ আদৌ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। কিন্তু অসদুপায় ও জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি মুক্তিযোদ্ধা বনে যান। একই সঙ্গে তার মরহুম পিতা আব্দুল হক শেখ এবং ছোট ভাই কাওছার শেখের নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় ওঠান। এমনকি নিজে এবং সহোদরের নামে নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও উত্তোলন করেছেন। তারা ৩ জন লাল তালিকাভুক্ত ও ভাতা গ্রহণ করার বিষয়ে স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের স্মারক নং-০৫.৩০.৩৫৪৩.০১০.০১.০০৫.১৪-১২৪৩(৩) তারিখ:-০৩/১২/২০১৬ মাধ্যমে ওই ৩ জনের নাম ও পরিচয় উল্লেখপূর্বক তাদের মুক্তিযোদ্ধা সঠিকতা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ৩ সদস্যের একটি কমিটি করে দেন। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে। অপর দুই সদস্য হলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোক্তার হোসেন ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো. ইনায়েত হোসেন। কমিটির কাছে অভিযুক্তরাও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি বলে স্বীকারোক্তি দেন। পরবর্তীতে কমিটির প্রতিবেদনে ওই ৩ জন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। তারা মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেতে পারেন না বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া ২০১৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় নেতা ইসমত কাদির গামার নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটির তদন্তেও ওই ৩ জন অমুক্তিযোদ্ধা প্রমাণ হয়। তাদের নাম উপজেলা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ওঠায়নি। পরে অভিযুক্তদের আপীলের পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও জামুকার প্রতিনিধি শাজাহান খান এমপির সভাপতিত্বে যাচাই-বাছাই এবং আপিলে তাদের নাম বাতিল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

এ অবস্থায় কাশিয়ানী ইউএনও কার্যালয়ের স্মারক নং- ০৫.৩০.৩৫৪৩.০১০.০০.০০১.০১৬-৪৭২(২) তারিখ:-২২/০৮/২০১৯ মাধ্যমে আব্দুল ওদুদ এবং তার সহোদর কাওছার শেখ কর্তৃক অবৈধভাব গৃহীত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রতিজন ২,৯৩,০০০/-টাকা করে মোট ৫,৮৬,০০০/-টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরৎ প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়। অন্যথায় সরকারী পাওনা টাকা আদায়ের জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও পত্রে উল্লেখ করা হয়। তবে অদ্যাবধি সেই টাকা ফেরৎ দেওয়া হয়নি। রহস্যজনক কারণে এ বিষয়ে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থাও গৃহীত হয়নি। বরং অভিযুক্তরা অবৈধ পন্থা ও জালিয়াতির মাধ্যমে তাদের নাম সমন্বিত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। অভিযোগকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার বলেন, ৭১ সালে আব্দুল ওয়াদুদের পিতা আব্দুল হক শেখ মানসিক রোগী ছিলেন। যুদ্ধের সময় আব্দুল ওয়াদুদ বাড়ি থেকেই বের হন নি। আর তার ভাই কাওছার শেখ কৃষি কাজ করত। মুক্তিযুদ্ধ কি? তা সে জানত না। ৩টি যাচাই-বাছাই ও তদন্তে তাদের ‘মুক্তিযোদ্ধা’ দাবি ভুয়া প্রমাণিত হয়। পরে মোটা অংকের টাকা ব্যয়ে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) অসাধু চক্রকে ম্যানেজ করেই অসাধ্যকে সাধন করেছেন আব্দুল ওয়াদুদ শেখ।

অভিযুক্ত আব্দুল ওয়াদুদ শেখ বলেন, একাধিক যাচাই বছাইয়ে আমাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। এমনকি আমাদের ভাতার টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। এসবের বিরুদ্ধে আমি আপিল করি। এ কারণে ভাতার টাকা ফেরত দেইনি। আপিলে আমার ও আমার ভাইয়ের নাম সমন্বিত তালিকায় ভুক্ত হয়েছে। তিনি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে বলেন, গত বছরের জুন থেকে আমাদের ভাতা বন্ধ রয়েছে। এখন মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম এসেছে। তাই বন্ধ ভাতা চালু করার জন্য আমি আবেদন করব।

সদ্য বিদায়ী কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রথীন্দ্র নাথ রায় বলেন, একাধিক যাচাইয়ে আব্দুল ওয়াদুদ ও তার ভাই এবং পিতা মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ পড়েন। এ কারণে তাদের ভাতা বন্ধ করে গ্রহীত ভাতা ফেরত দিতে বলা হয়। এ ব্যাপারে তারা আপিল করেছে বলে জানায়। আপিল নিপ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা টাকা ফেরত দেবে না বলে আমাদের অবহিত করে।

এ ব্যাপারে জামুকার মহা পরিচালক জহিরুল ইসলামের সেলফোনে (০১৭৩০০০৩৯৯৮) গত ৭ দিন ধরে বাববার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। এ কারণে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

(এমএইচএ/এএস/এপ্রিল ১০, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৬ মার্চ ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test