E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সিলেটের হাওর এলাকায় পানি কমছে, কৃষকের মুখে হাসি

২০২২ এপ্রিল ১০ ১৬:৫৫:৫৮
সিলেটের হাওর এলাকায় পানি কমছে, কৃষকের মুখে হাসি

আবুল কাশেম রুমন, সিলেট : সিলেট জুড়ে গত ৪ দিন ধরে হঠাৎ করে উজান থেকে আসা পানিতে তলিয়ে যায় বেশ কয়েকটি হাওর। যে পরিমান বৃষ্টি হওয়াতে হাওর এলাকা তলিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সে পরিমান বৃষ্টিপাত না হলে ভারতে প্রচুর পরিমান বৃষ্টি ফলে বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চল তিলেয়ে গেছে। এতে ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে সিলেটের হাওর এলাকার কৃষি ফলন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে নলুয়ার হাওরের কৃষকেরা। রোববার ভোর থেকে পানি লনুলয়া হাওরের পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমতে দেখে কৃষকেরা নৌকা নিয়ে আধা পাকা ধান কাটা শুরু করেছেন।

পানি কমলেও আবারও ভারী বৃষ্টিপাতে হুমকির মুখে পড়তে পারে হাওররক্ষা বাঁধ। এ আশংকায় কৃষকরা হাওরপারের কৃষকদের মাঝে আতঙ্কের শেষ নেই। যদিও কয়েক দিন ধরে পানি কমতে থাকায় কৃষকরা নতুন করে আশায় বুক বেঁধেছেন। জানা গেছে, গত কয়েক দিনের পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের সকল নদ-নদী পানিতে ভরপুর হয়ে যায়। হঠাৎ করে আসা ঢলের পানিতে হাওরের বাঁধগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে। গেল ৪ দিনে জেলার অন্যতম বড় হাওর দিরাই উপজেলার চাপতির হাওরসহ ছোটোবড় মোট ২১টি হাওরের ফসল তলিয়ে যায়। ঘাম ঝরানো শ্রমের সোনালী ফসল হারিয়ে হাওরপারে শুরু হয় কান্নার রোল। হাওরগুলোর ফসল তলিয়ে যাওয়ার পর নদ-নদীর পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। গত কয়েক দিনে ১ দশমিক ০৭ মিটার পানি কমেছে বলে পাউবো সূত্র জানিয়েছে। পানি কমতে শুরু করায় আতঙ্কের মধ্যে কৃষকরা আশার আলো রেদখছেন।

পাউবোর তথ্যমতে, শনিবার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টায় সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি রেকর্ড করা হয় ৪ দশমিক ৮২ মিটার। পানির এ প্রবাহ ছিল বিপদসীমার নিচে। এর আগে বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৫ দশমিক ৪৬ মিটার। তবে শনিবার ও রবিবার সুনামগঞ্জে কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। শনিবার সন্ধ্যা ৬টার আগের ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ২৬ মিলিমিটার। এর আগে গত বুধবার ৭৫ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়। এর আগের দিন মঙ্গলবার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩৪ মিলিমিটার। চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত কমে আসায় সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানিও ধীরে ধীরে কমছে।

অবশ্য আজ ও আগামীকাল চেরাপুঞ্জিতে আবারও ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে বলে পাউবো সূত্র জানিয়েছে। আবারও ভারী বৃষ্টিপাত হলে হাওরের বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়তে পারে।

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গেল ৬ দিনে জেলার অন্যতম বড় হাওর দিরাই উপজেলার চাপতির হাওরসহ মোট ১৪টি হাওরের ফসল তলিয়ে গেছে। তলিয়ে যাওয়া হাওরে মোট জমির পরিমাণ ৫ হাজার ১০ হেক্টর। এই জমি থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের কথা ছিল। তবে, কৃষি অধিদপ্তরের এই পরিসংখ্যানের সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই বলে স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন।

কৃষি অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, দিরাই উপজেলার চাপতির হাওর ডুবে ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর, তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওর ও এরালিয়া হাওর ডুবে ৯৫ হেক্টর, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কালনার হাওর ডুবে ১০০ হেক্টর, ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনারথাল হাওর ও টাঙ্গুয়ার হাওর ডুবে ১ হাজার ৬৫ হেক্টর, শাল্লা উপজেলার বাগাইর হাওর, কৈয়ারবন হাওর ও গজারিয়া হাওর ডুবে ২০০ হেক্টর, দোয়ারাবাজার উপজেলার হুগলিবিল হাওর ডুবে ২০ হেক্টর এবং ছাতক উপজেলার গোরাপুর ও গইজ্জারবিল হাওর ডুবে ৩০ হেক্টর জমির ইরি বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।

(একেআর/এসপি/এপ্রিল ১০, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test