E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পানির নিচে ফসল, ভাঙন অব্যাহত 

থামছে না তিস্তার চরাঞ্চলের কৃষকদের কান্না! 

২০২২ এপ্রিল ১৩ ১৬:১৬:৩৬
থামছে না তিস্তার চরাঞ্চলের কৃষকদের কান্না! 

প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট : আগাম বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের কারণে কুড়িগ্রামের রাজারহাটের তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের উঠতি ফসল পানির নিচে হাবু-ডুবু খাচ্ছে। সেই সাথে নদী ভাঙন অব্যাহত থাকায় তিস্তাপাড়ের মানুষের বুক ফাঁটা কান্নায় কাটছে নির্ঘুম রাত। এছাড়াও বৈরি আবহাওয়ায় প্রতিরাতে শিলা বৃষ্টি ও ঝড় হওয়ায় উঠতি ইরিবোরো ফসল নিয়ে পুরো উপজেলার কৃষকরা দুঃচিন্তায় রয়েছেন। ব্যাপক ফসল হানির আশংকা করছেন কৃষকরা।

এদিকে কয়েকদিনের অব্যাহত বৃষ্টিতে উপজেলায় বোরো ধান ৬হেক্টর, পিঁয়াজ ৭হেক্টর, পাট ৫হেক্টর , ভুট্টা ১হেক্টর, চিনাবাদাম ১ হেক্টর, তরমুজ, শাক-সবজি আক্রান্ত হয়েছে বলে উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন।

আজ বুধবার (১৩ এপ্রিল) সরেজমিনে কয়েকটি ইউনিয়নে ঘুরে দেখা যায়, তিস্তার নিচু চরে লাগানো চাষিদের বিভিন্ন ফসলাদি পানিতে নিমর্জ্জিত হয়ে এখন পচা গন্ধ ছড়িয়েছে। এবারে চাষিরা বাদাম, পিঁয়াজ, পটল, ঝিঙা, মরিচ, করলা, শসা, চিচিঙ্গা, কালজিরা, ধনিয়া, পালং শাকের বীজ, মিষ্টি কুমড়া, বোরোধানসহ বিভিন্ন ফসল লাগায়। চৈত্র মাসের এই অসময়ের বৃষ্টিতে নীচু চর প্লাবিত হয়ে যায়। অনেকে ধার-দেনা আর ঋণ করে সার, কীটনাশক, বীজ কিনে হাজার হাজার টাকা খরচ করে। এখন ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হওয়ায় কৃষকদের কান্নায় কাটছে নির্ঘুম রাত।

ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াসাম গ্রামের কৃষক মজিদুল হক জানান, প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ করে আড়াই একর জমিতে পিঁয়াজ আবাদ করেছি। মাত্র ৭-৮ মণ পিঁয়াজ তুলতে পেরেছি। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সব তলিয়ে গেছে। এখন আমার আসল টাকাই উঠল না।

একই এলাকার রামহরি গ্রামের আফতার উদ্দিন দেড় একর জমিতে বোরোধান লাগায়। অব্যাহত বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে পঁচে গেছে। ঋণ করে ধান আবাদ করে এখন আফতার উদ্দিনের কপালে পুড়ছে।
মেদনীপুর এলাকার কৃষক ইউপি সদস্য শহিদুল বলেন, বন্যায় শুধু ফসলের ক্ষতি হয় নাই। আমার দেড় একর বোরোধানি জমি তিস্তার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এখন নদীর কিনারে বাড়ি। যেকোন মহুর্তে ভেঙ্গে যাবে। এখন যাই কই, আর খাইবা কি!

ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস প্রামাণিক জানান, আমার এলাকার কৃষক চরম ক্ষতির মুখে রয়েছে। একদিকে নদী ভাঙন আর অন্যদিকে বন্যায় কৃষক হারাচ্ছে তার বসতবাড়িসহ ফসলাদি। ঋণে জর্জরিত কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে সরকারকে আহবান জানান এ জনপ্রতিনিধি।

এ ব্যাপারে বুধবার (১৩এপ্রিল) রাজারহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সম্পা আক্তার বলেন, ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করার কোন নির্দেশনা এখনো পাইনি। তবে আউস মৌসুমের জন্য কৃষকদের প্রলোদনা এসেছে এগুলো দেয়া হবে।

বৃষ্টিতে ক্ষতির কথা স্বীকার করে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আব্দুর রশীদ জানান, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের তালিকা প্রস্তুত করা শুরু হয়েছে। তবে বৃষ্টিপাত বেশি হলে ক্ষতির সম্ভাবনা আরো বাড়তে পারে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকদের আউশ মৌসুমে সরকারি প্রণোদনায় অন্তর্ভুক্ত করার কথা জানান তিনি।

(পিএস/এসপি/এপ্রিল ১৩, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test