E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

শাশুড়িসহ ৩ শিশুকে পুড়িয়ে হত্যায় জামাতার মৃত্যুদণ্ড 

২০২২ এপ্রিল ১৩ ১৬:৫৯:২৮
শাশুড়িসহ ৩ শিশুকে পুড়িয়ে হত্যায় জামাতার মৃত্যুদণ্ড 

তুষার কান্তি বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে শাশুড়িসহ ৪ জনকে পুড়িয়ে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় জামাতা আজাদ মোল্যাকে (৪৭) মৃত্যুদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের  আদেশ দিয়েছে আদালত। আজ বুধবার দুপুরে গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোঃ আব্বাস উদ্দীন এ রায় দেয়। 

মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আজাদ মোল্যা গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চরমানিকদাহ গ্রামের বেলায়েত মোল্যার ছেলে। রায় ঘোষনার সময় পুড়িয়ে ৪ জনকে হত্যায় মৃত্যু দন্ডাদেশ প্রাপ্ত আজাদ মোল্যা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

মামলার বরাত দিয়ে ওই আদালতের বেঞ্জ সহকারী মোঃ মাহাবুবুর রহমান জানান, আজাদ মোল্যা প্রায় ২৭ বছর আগে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ডুমদিয়া গ্রামের শরিফা বেগমকে বিয়ে করেন। এ দম্পত্তির ৪টি ছেলে সন্তান রয়েছে। স্ত্রী অন্য পুরুষের সাথে পরকিয়া করে বলে স্বামী সন্দেহ করে আসছিলো। এ নিয়ে স্বামী আজাদ স্ত্রী শরিফাকে প্রায়ই মারপিট ও অত্যাচার-নির্যাতন করত। স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে শরিফা মাঝে মধ্যেই সন্তানদের নিয়ে বাবারবাড়ি চলে যেতেন। বিগত ২০১৪ সালের ১৫ মে আজাদ শশুরবাড়ি গিয়ে তার স্ত্রীকে জোর করে তার বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করেন। ওই দিন শরিফা তার স্বামীর সাথে স্বামীর বাড়ি যেতে অনীহা প্রকাশ করেন। এ ঘটনায় স্বামী আজাদ ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রীকে জ্বা্লিয়ে পুড়িয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে দু’ ছেলেকে জোর করে বড়িতে নিয়ে আসেন।

এ ঘটনার ২ দিন পর ১৭ মে আজাদ মোল্যার শাশুড়ি ফুড়িয়া বেগম (৭০), বড় শ্যালিকা আনোয়ার ছেলে আমিনুর (১৪) অপর শ্যালিকা রানির জমজ ছেলে-মেয়ে তামিম (৫) ও তনিমা (৫) সহ অন্যান্যরা একটি ঘরে ঘুমিয়ে ছিলে। ওই দিন রাত ১২ টার দিকে আজাদ তার সহযোগিদের নিয়ে ওই ঘরে কেরসিন বা প্রেট্রল ঢেলে আগুন দেয়। আগুন দাউদাউ করে জ্বলতে দেখে শরিফা ও রানির আত্মচিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। আগুনে পুড়ে ঘরের মধ্যেই ফুড়িয়া বেগম, আমিনুর ও তামিম মারা যায়। দগ্ধ তনিমাকে গোপালগঞ্জ আড়াই শ’ বেড জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির ২ ঘন্টার মধ্যে মার যায়। আগুনে ঘরটি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয় । স্বাক্ষীরা আজাদ মোল্যা ও তার সহযোগিদের নদীতে ঝাঁপদিয়ে পালিয়ে যেতে দেখেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।

বেঞ্জ সহকারী মাহবুবুর রহমান আরো জানান, এ ঘটনায় ফুড়িয়া বেগমের ছেলে সাইফুল গাজী ২০১৪ সালের ১৮ মে বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরর পর পুলিশ প্রধান অভিযুক্ত আজাদ মোল্যাকে গ্রেফতার করে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি (তদন্ত) সেলিম রেজা ২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট আজাদ মোল্যার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। গ্রেফতারের পর থেকে আজাদ জেল হাজতে ছিল।

স্বাক্ষ্য প্রমান গ্রহন শেষে বিজ্ঞ বিচারক আজাদ মোল্যাকে অভিযুক্ত করে মৃত্যুদন্ড ও ১০ হাজার টাক অর্থদন্ডে দন্ডিত করেন। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এপিপি শহিদুজনজামান পিটু, ফজলুল হক খান খোকন, সামসুন্নাহার ও আসামী পক্ষে ছিলেন এ্যাড. মোঃ ফারহান মোল্লা।

মামলার বাদী সাইফুল গাজী বলেছেন, আদালতের মাধ্যমে আমরা চাঞ্চল্যকর এ মামলায় ন্যয় বিচার পেয়েছি। এখন দ্রুত রায় কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।

এপিপি শহিদুজনজামান পিটু বলেন, এ রায়ের মাধ্যমে ভিকটিমের পরিবার সঠিক বিচার পেয়েছে। আসামী পক্ষের এ্যাড. মোঃ ফারহান মোল্লা জানিয়েছে, এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।

(টিকেবি/এসপি/এপ্রিল ১৩, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৬ মার্চ ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test