E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

মুক্তিযুদ্ধের স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচনে ঢাকায় প্রস্তুতি সভা আগরতলাবাসীর

২০২২ এপ্রিল ১৯ ১৩:৫৩:১৯
মুক্তিযুদ্ধের স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচনে ঢাকায় প্রস্তুতি সভা আগরতলাবাসীর

গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে আবারও আন্তর্জাতিকমানের একটি 'মুক্তিযুদ্ধের স্মারকগ্রন্থ' প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী সংসদ আগরতলাবাসির উদ্যোগে স্মারকগ্রন্থটি প্রকাশ হতে যাচ্ছে। আগামি ১৫ জুলাই ঢাকায় আন্তর্জাতিকমানের এই স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে।

এ উপলক্ষে ঢাকার সেগুনবাগিচার তোপখানা রোডের চট্টগ্রাম ভবন মিলনায়তনে শনিবার একটি প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভা থেকে একটি আহ্বায়ক কমিটিও গঠন করা হয়।

বাংলাদেশের শুদ্ধতার কবি খ্যাত জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত, কবি অসীম সাহাকে আহ্বায়ক ও বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পী শাহাদাৎ হোসেন নিপুকে সদস্য সচিব করে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির যুগ্ম আহ্বায়করা হলেন- কবি আসলাম সানী, শাহজালাল ফিরোজ ও মাহজাবীন রেজা চৌধুরী। গঠিত আহ্বায়ক কমিটি পরে আলোচনা করে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ও কয়েকটি উপকমিটি গঠন করবেন বলে প্রস্তুতি সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ঢাকায় অনুষ্ঠিত ওই প্রস্তুতিমূলক সভায় ‘বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটি, আগরতলা’র সভাপতি শিক্ষাবিদ ও বঙ্গবন্ধু গবেষক ড. দেবব্রত দেবরায় ও স্মারকগ্রন্থের প্রধান সম্পাদক আগরতলার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক অধ্যাপক ড. মুজাহিদ রহমানের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেন।

প্রতিনিধি দলের অন্যান্যরা হলেন- লেখক নিয়তি রায় বর্মন, ড. দিলীপ সরকার, ড. বীথিকা চৌধুরী, কবি মৌসুমী কর, নন্দিতা ভট্টাচার্য, গল্পকার বিল্লাল হোসেন, কণ্ঠশিল্পী স্বর্ণিমা রায়, কবি জহর দেবনাথ, সমাজকর্মী বিশ্বজিত রায় চৌধুরী, শিবানী ভট্টাচার্য ও প্রিয়তিশা দেব রায়।

জানা গেছে, প্রাণবন্ত ওই প্রস্তুতিমূলক সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট লেখক ও কবি অসীম সাহা। আবৃত্তিশিল্পী শাহাদৎ হোসেন নিপুর সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধের আন্তর্জাতিক স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের অন্যতম উদ্যোক্তা, আগরতলার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. দেবব্রত দেবরায়, স্মারকগ্রন্থের প্রধান সম্পাদক অধ্যাপক ড. মুজাহিদ রহমান, কবি আসলাম সানী, ফিরোজ আহমেদ, ড. বীথিকা চৌধুরী, লেখক নিয়তি রায় বর্মন, সমাজ সেবক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাদিদ রেজা চৌধুরী, লেখক খোরশেদ আলম বিপ্লব ও ডি কে সৈকত প্রমুখ।

সভায় ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত আরও উপস্থিত ছিলেন, কবি অঞ্জনা সাহা, কবি মাহবুবা লাকি, রংপুরের পীরগঞ্জের সুলতান আহমেদ সোনা, টাঙ্গাইলের মনোজ কান্তি সরকার, সিরাজগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক মান্নান রায়হান, কলকাতার মলয় মুখোপাধ্যায়, সংগীতশিল্পী মহাদেব ঘোষ, চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাদা মহিউদ্দিন, নড়াইলের সৈয়দ খাইরুল আলম, কথা সাহিত্যিক সিরাজুল ইসলাম মুনির, অধ্যাপক রোকসানা আক্তার সাথী, অধ্যাপক জাকির হোসেন জামাল, পটুয়াখালীর মাসুদ আলম বাবুল, রিতা আক্তার, ড. সবুজ শামীম আহসান, খাগড়াছড়ির শাহনাজ সুলতানা, আবৃত্তিশিল্পী রুপশ্রী চক্রবর্তী, কবি রোকেয়া ইসলাম ও মোহাম্মদ সেলিম উজ্জামান প্রমুখ।

উদ্বোধনী বক্তব্যে ড. দেবব্রত দেবরায় বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে আমরা আগরতলাবাসী আবারও আরেকটি আন্তর্জাতিক স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি। গ্রন্থটিতে তিন শতাধিক বিশিষ্ট লেখকের লেখা থাকবে। কলকাতার একটি প্রেস থেকে এ আন্তর্জাতিক স্মারকগ্রন্থটি ছাপা হবে। এ গ্রন্থটি ছাপাতে আমরা ইতিমধ্যেই একটি কমিটি গঠন করেছি। মূলত সেই কমিটির সদস্যদের আর্থিক সহায়তায়ই এ স্মারকগ্রন্থটি প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এটি প্রকাশ করতে বাংলাদেশ বা ত্রিপুরা সরকারের কারও কাছ থেকেই আমরা কোনো ধরণের আর্থিক অনুদান নিচ্ছি না। মূলত বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসেই আমাদের এ মহতী উদ্যোগ।

বঙ্গবন্ধু গবেষক খ্যাত ড. দেবব্রত বলেন, 'আপনারা জানেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর আমরা ঢাকার জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে প্রথম আন্তর্জাতিক স্মারকগ্রন্থটি প্রকাশ করি। পরে কলকাতা, দিল্লি, শিলচর ও ত্রিপুরাতেও গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন উৎসব করা হয়। এবারও আগের মতো করে দ্বিতীয় বারের মতো আমরা এ স্মারকগ্রন্থটি প্রথমে ঢাকায় মোড়ক উন্মোচন করব। এরপর কলকাতা, দিল্লি ও আগরতলায় এ উৎসব উদযাপন করা হবে।

সভায় আগরতলার বিশিষ্ট মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ও স্মারকগ্রন্থটির প্রধান সম্পাদক অধ্যাপক ড. মুজাহিদ রহমান বলেন, 'ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের এক জাতি স্বত্তায় অভিন্ন হৃদয় এবং এক অভিন্ন আত্মার সম্পর্ক রয়েছে। আমরা পৃথক দুটি দেশে বসবাস করলেও একই কৃষ্টি, সংস্কৃতি, পরম্পরা, একই ইতিহাস এবং একই রকম অনুভব হৃদয়ে ধারণ করি। আমাদের চিন্তন, আমাদের মননে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করি। সবচেয়ে বড় কথা আমরা একই ভাষায় কথা বলি, একই ভাষায় চিন্তা করি, আমরা গর্বিত যে বাংলা আমাদের মাতৃভাষা।

অনিষ্ঠানে বিগত ২০১৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রয়াত রেজাউল হক চৌধুরীর ছেলে সাদিদ রেজা চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, স্মারকগ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচনে আমার বাবা যেভাবে আপনাদের পাশে ছিলেন, আমিও সেভাবেই আপনাদের পাশে আছি এবং থাকবো। আপনারা আমার প্রয়াত বাবা ও আমাদের জন্য আশীর্বাদ করবেন।

সভার সভাপতি শুদ্ধতার কবি অসীম সাহা বলেন, বঙ্গবন্ধু স্মরণে ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আগরতলাবাসী যে অনুকরণীয় উদ্যোগ নিয়েছে, সেটি এক কথায় অতুলনীয় ও প্রশংসনীয়। এ জন্য তাঁদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ, ঋণী। ঢাকায় আগামি জুলাইয়ে অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর আন্তর্জাতিক এ স্মারকগ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচনে তাই আমরা সার্বিকভাবে তাঁদেরকে সহযোগিতা করব।

সভা শেষে আগরতলা থেকে আসা প্রতিনিধি দলটি ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর’পরিদর্শন করে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এরপর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিতে গিয়েও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এ প্রতিনিধি দলটি।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ড. দেবব্রত দেবরায় ও অধ্যাপক ড. মুজাহিদ রহমানের নেত্বত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশের আখাউড়ায় এসে পৌঁছলে, দৈনিক বাংলা ৭১ এর বিশেষ প্রতিনিধি, নবীনগরের কথার সম্পাদক, সাংস্কৃতিক সংগঠক গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু এবং প্রথম আলোর সাবেক প্রতিনিধি আখাউড়ার সিনিয়র সাংবাদিক দুলাল ঘোষ ও আখাউড়া ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন বেগ শাপলুর নেতৃত্বে স্থানীয় বিশিষ্টজনেরা আখাউড়ায় প্রতিনিধি দলটিকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। পরে আখাউড়া ডাক বাংলোতে প্রতিনিধি দলটি স্থানীয় সুধীজনের সঙ্গে তাঁদের বাংলাদেশ সফর নিয়ে একটি মতবিনিময় সভা করেন। ওই মতবিনিময় সভায় জেলা পরিষদ সদস্য নাজিম উদ্দিন, আখাউড়ার সিনিয়র সাংবাদিক বিশ্বজিৎ পাল বাবু, ঝুটন বনিক, আত্মীয়'র প্রতিষ্ঠাতা সমীর চক্রবর্তী, ছাত্রলীগ নেতা হৃদয় ঘোষসহ বিশিষ্ট জনেরা উপস্থিত ছিলেন। গত ১৭ এপ্রিল প্রতিনিধি দলটি আগরতলায় ফিরে গেছেন।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ১৯, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test