E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় চোখ হারালেন শাহিনুর!

২০২২ এপ্রিল ২১ ১৯:২৩:০৬
ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় চোখ হারালেন শাহিনুর!

দিলীপ চন্দ, ফরিদপুর : ফরিদপুর চক্ষু ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় চােখ হারালাে শাহিনুর। শাহিনুরের জীবন ছিলাে আর দশজনের মতোই সুস্থ-স্বাভাবিক। স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ভালােই কাটছিলাে দিনগুলাে। হঠাৎ বছর তিনেক আগে বাম চােখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে। দ্বারস্ত হােন চক্ষু চিকিৎসকের কাছে। চিকিৎসা বাণিজ্যের নামে চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় চােখ হারিয়ে ব্রেইন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে জীবন শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন তিনি।

ফরিদপুরে আনােয়ারা-হামিদা চক্ষু হাসপাতাল থেকে শুরু করে বাংলাদেশ আই হসপিটাল, শেষ হয় বাংলাদেশ জাতীয় ক্যান্সার হাসপাতালে। কিন্তু এখন তাকে বাঁচাতে প্রয়ােজন অর্থ। এতদিন বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডাক্তারদের দ্বারস্ত হয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন তিনি।

শাহিনুর বেগম (৪০) ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুর এলাকার মির্জা গালিবের স্ত্রী। চােখে পানি পড়া নিয়ে ২০১৮ সালর ১২ই মে ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুর এলাকায় অবস্থিত আনােয়ারা-হামিদা চক্ষু হাসপাতালের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ও কনসালটেন্ট ডাঃ মােঃ মোহসিন বেগের দ্বারস্ত হােন। সঠিক রােগ নির্ণয় না করে বার বার অপারেশন ও ভুল চিকিৎসায় তার চোখ হারাতে হয়েছে বলে অভিযােগ শাহিনুরের।

এ ব্যাপারে তিনি ফরিদপুর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে সেখান থেকে এখনো কোন সদুত্তর পাননি বলে জানান।

শাহিনুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে একটি জরাজীর্ণ ঘরে তাদের বসবাস। তাদের বাসায় পৌছানাে মাত্র টের পেয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসেন তিনি। চােখে কালাে চশমা, চশমা খুলতেই দেখা যায় করুণ অবস্থা। কপাল থেকে চামড়া কেটে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে বাম চােখের উপর। এ সময় তিনি বের করে দেখান প্রতিটি হাসপাতালের ব্যবস্থাপত্র ও ছাড়পত্র।

শাহিনুর বেগম এ প্রতিবদককে বলেন, প্রায় তিন বছর আগে আমার বাম চােখে পানি পড়তে শুরু করে। এরপর আমি বাড়ির পাশে ডাঃ মােঃ মােহসিন বেগকে দেখাই। তিনি দেখে ঔষধ লিখে দেন। দুই মাস পরও পানি পড়া না কমলে তিনি একই হাসপাতালের ডাঃ মোঃ আজম এর নিকট রেফার করেন। তখন তিনি বলেন, আমার বাম চােখের নেত্রনালীতে সমস্যা হয়েছে এবং জানান চােখের অপারেশন ছাড়া ঔষধ দিয়ে কাজ হবে না।

এরপর গত ২০শে জুলাই ২০১৮ তারিখ ডাঃ মােহসিন বেগ ও ডাঃ আজম আমার চােখের অপারেশন করেন। এরপর থেকে আমার চােখ ফুলে উঠে এবং কিছু সমস্যা অনুভব করতে থাকি। আবারও ডাঃ মােহসিন বেগের কাছে গিয়ে বললে আমাকে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করান। এরপরও চােখের সমস্যার সমাধান না হওয়ায় আমাকে বাংলাদেশ চক্ষু হাসপাতালের ডাক্তার মোঃ আজিজুর রহমানকে এনে দ্বিতীয়বারের মতাে গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখ নেত্রনালীর অপারেশন করেন। এ সময় আমার চােখের নিচে নাকের হাড় কেটে ফেলে। এরপর থেকে আরও খারাপ অবস্থা হতে থাকে। তারপরও দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে অবস্থার উন্নতি না হলে আমাকে বাংলাদেশ আই হসপিটালের প্রফেসর ডাঃ গােলাম হালদারের নিকট রেফার করেন।

তিনি পরীক্ষা করে জানান যে, নেত্রনালীর কােনো সমস্যা হয়নি, চােখের ভিতর টিউমার হয়েছে। এতদিন যা হয়েছে তা সঠিক রােগ নির্ণয় না করে ভুল চিকিৎসা দিয়েছেন।

তিনি আরাে বলেন, আমার নাকের হাড় কেটে ফেলায় সেখানে ইনফেকশন হয়। এরপর আমি পরীক্ষা করে জানতে পারি সেখানে ক্যান্সার হয়েছে। এরপর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি হলে উক্ত হাসপাতালের ডাক্তার আমার চােখের টিউমারের অপারেশন করেন। এরপর চােখের ইনফেকশন দূর করার জন্য গত ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখ জাতীয় নাক, কান, গলা ইনস্টিটিউট এর চিকিৎসকেরা আমার চােখ তুলে ফেলেন। বর্তমানে আমার ব্রেইনে ক্যান্সার শনাক্ত হয়েছে। আমার চিকিৎসার জন্য প্রচুর টাকা প্রয়ােজন।

ডাক্তার মােহসিন বেগের ভুল চিকিৎসায় আমার সব শেষ হয়ে গেছে। মৃত্যুর জন্য আমার দিন গুনতে হচ্ছে। আমার চিকিৎসার জন্য আমার ছেলের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে। ছেলে-মেয়ে দুটাের ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তায় আছি।

শাহিনুরের স্বামী মির্জা গালিব বলেন, আমার স্ত্রীর যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। তারপরও আমি ডাক্তার মােহসিন বেগের কাছে গিয়ে বিষয়টি জানিয়ে স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য কিছু আর্থিক সহযোগিতা চাইলে আমাকে তিনি বের করে দেন। এই ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার জন্য আমার স্ত্রীর জীবন আর মৃত্যুর পথে।অর্থের অভাবে হয়তো তাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারব না।

এ বিষয়ে আনোয়ারা হামিদা চক্ষু হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও কনসালটেন্ট ডাক্তার মহসিন বেগের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

(ডিসি/এসপি/এপ্রিল ২১, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test