E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত মোগল স্থাপত্যে নির্মিত মৌলভীবাজার টাউন ঈদগাহ 

২০২২ এপ্রিল ২৯ ১৬:৫৮:১৫
সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত মোগল স্থাপত্যে নির্মিত মৌলভীবাজার টাউন ঈদগাহ 

মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : গত বছরে প্রাণঘাতী করোনায় প্রতিদিনই আতঙ্কে কেটেছে দেশের অন্যান্য জনপদের মতো মৌলভীবাজার শহরের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার সাধারণ মানুষের। করোনার দুটি বছরে রমজানে মসজিদে জামাতে নামাজ আদায়, রোজাসহ সাভাবিক ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় প্রশাসন কর্তৃক নানা কড়াকড়ি আরোপ ছিলো স্বাভাবিক ব্যাপার। ভয় আর আতঙ্ক ছিলো সর্বত্র, শহরের বিশাল ঈদগাহ মুসল্লিদের জন্য প্রস্তুত হলেও বিধি-নিষেধের বেড়াজালে এদুটি বছরে শহর ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকার বিপুল সংখ্যক মুসল্লিরা বঞ্চিন হন ঈদ জামাতসহ ঈদের সামগ্রীক আনন্দ উৎসব থেকে। এবছর করোনায় মুত্যুশুন্য বাংলাদেশে স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় ফিরছে দেশ,নেই বিধিনিষেধ আর আতঙ্ক। একমাস সিয়াম সাধনা শেষে ফের ৩ মে মঙ্গলবার ঈদগাহে আনন্দে উৎসবের সাথে মানুষ ঈদুল ফিতরের জামাত আদায় করবেন সে লক্ষ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে মোগল আমলের মুসলিম আধুনিক স্থাপত্যশৈলী সমৃদ্ধ সদ্য সংস্কার হওয়া মৌলভীবাজারের সর্ববৃহৎ ও প্রাচিনতম টাউন ঈদগাহ।

এখন মুসল্লীদের বরণে পুরো প্রস্তুত নান্দনিক এই ঈদগাহ টি। এক কথায় প্রবাসী অধ্যুসিত মৌলভীবাজারবাসীর জন্য গর্ব আর অহঙ্কার করার মতো একটি অনন্য স্থাপনা হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে সদ্য পূর্ণ সংস্কার হওয়া শহরের সবচেয়ে বড় এ ঈদগাহ।

জানা গেছে ২০১৭ সালে ঈদগাহের জমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনসহ শুরু হয় এর সংস্কার কাজ। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে চলা সংস্কার কাজ শেষ হয়ে এখন পুরোপুরি প্রস্তুত ঈদ জামাতের জন্য। পাঁচবছরে অতিরিক্ত জমি ক্রয় ও নির্মান খরচসহ এই উন্নয়নের পেছনে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬ কোটি টাকারও বেশি অর্থ। দেশি ও প্রবাসী ছাড়াও শহরের ব্যবসায়ী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিরা সর্বাত্মক অর্থ সহায়তায় এগিয়ে আসেন। এমনকি রিক্সা চালকও অর্থ দিয়ে সহায়তায় এগিয়ে আসেন বলে জানিয়েছেন পৌর মেয়র ফজলুর রহমান।

বৃহস্পতিবার রাতে মৌলভীবাজার টাউন ঈদগাহ প্রাঙ্গণে ঈদগাহ এর সার্বিক উন্নয়ন প্রসঙ্গে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে মেয়র ফজলুর রহমান জানান, অনেক কষ্টের পর সবার সহযোগিতায় মৌলভীবাজারবাসী পেল গর্বের একটি স্থাপনা। সেই সাথে বাস্তবায়িত হয়েছে এই স্থাপনা ঘিরে একটি সপ্নের।

মেয়র ফজলুর রহমান জানিয়েছেন, সংস্কার হওয়া ঈদগাহের নির্মাণকাজে দেশী ও ইতালী থেকে আমদানি করা মূল্যবান দামি দামি মার্বেল পাথর দিয়ে এর মিম্বর, গম্বুজ ও বেশ কয়েকটি মিনারসহ বড় দুটি ফটক প্রস্তুত করা হয়েছে। ফটকের আংশিক ডিজাইন সৌদি আরবের জান্নাতুল বাকির প্রবেশ পথের প্রধান গেইটের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও নির্মান শৈলীতে মধ্যপ্রাচ্য, মিশর, মালেশিয়াসহ আরব দেশগুলোতে মোগল আমলের স্থাপত্যশৈলীর আংশিক অনুসরণ করা হয়েছে। মিনার নির্মাণেও সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা শরীফের মিনার এর অনুকরণে আংশিক নির্মিত হয়েছে।

শুক্রবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়,ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে শ্রমিকরা ঈদগাহের বাহিরের সড়কে তোরণ নির্মাণ ও লাইটিং কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বর্তমানে বর্ধিত অংশ ছাড়াও ঈদগাহের বাহিরের মূল সড়কে বিশাল প্যান্ডালের কাজও চলমান। সেখানেও মুল্লিদের নামাজের ব্যবস্থা করছেন কর্তৃপক্ষ। ঈদগাহের মূল মাঠে এক সাথে ১৫ হাজার মুসল্লী জামাতে অংশ নিতে পারবেন বলে ধারনা সংশ্লিষ্টদের। তবে মাঠ ও মাঠের বাহিরের মূল সড়ক মিলে একসাথে ৫০ হাজার মুসল্লী জামাতে নামাজ আদায় করতে পারবেন। ওই সড়ক দিয়ে চলতি পথে রাস্তার একপাশে বিশাল বেড়িলেইক আর অপর পাশে ঈদগাহের দিকে দৃষ্টি পড়লে প্রথমে চোখে পড়বে মোগল আমলের স্থাপত্যশৈলী অপূর্ব সমাহার আর নান্দনিক ডিজাইনের সব কারুকাজে ভরপুর আধুনিক টাউন ঈদগাহের দিকে।

মৌলভীবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র মরহুম আলহাজ্ব মাহমুদুর রহমানের মেয়র থাকাকালে প্রথমবারের মতো সংস্কার কাজ শুরু হয় শহরের কেন্দ্রীয় এ ঈদগাহের। সর্বশেষ মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহামানের সার্বিক তত্তাবধানে দীর্ঘ সংস্কার শেষে ঈদুল ফিতরের জামাত নির্ভিগ্নে পালনে মুসল্লিদের জন্য সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করেছেন পৌর কর্তৃপক্ষ। ঈদহাহে মুসল্লিদের স্বাগত জানাতে শাহমোস্তফা সড়কের পাশে তোরণ নির্মাণ ও নানা রঙের পেষ্টুন দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো সড়ক। জানা গেছে বর্ধিত ঈদগাহ পূর্ণ সংস্কার হওয়ার ফলে বাড়বে মুসল্লিদের সংখ্যা।

এদিকে প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদের তিনটি প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে এই ঈদগাহে। ঈদের নামাজের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৬টায়,দ্বিতীয় জামাত সকাল সাড়ে ৭টায় ও সবশেষ তৃতীয় জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্টিত হবে। এতে প্রথম জামাতে ইমামতি করবেন শহরের দেওয়ানি জামে মসজিদের খতিব মাওলানা সৈয়দ মুহিদ উদ্দিন, দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করবেন, পশ্চিমবাজার জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মোঃ মুহিবুর রহমান ও সবশেষ তৃতীয় জামাতে ইমামতি করবেন সুলতানপুর জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব বরেণ্য আলেম মুফতি মাওলানা শামসুজ্জোহা। ইতিমধ্যে পৌর কর্তৃপক্ষ ঈদ জামাত সুষ্টুভাবে সম্পন্নের লক্ষে বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে মতবিনিময় করেছেন। আলেম ও ইমামদের সাথেও মতবিনিময় করেছেন।

এবছর ঈদজামাতে মাস্ক পরিধান করে আসার নির্দেশনা দিয়ে মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মোঃ ফজলুর রহমান বলেন, নামাজের নির্দিষ্ট আসন পূর্ণ হলে পরবর্তী জামাতে অংশ নেয়ার জন্য ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে মুসল্লিদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।এছাড়া আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে মসজিদে জামাত অনুষ্টিত হবে। এছাড়াও শহরে প্রায় অর্ধশতাধিক মসজিদ ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত রাখা রয়েছে।

শাহমোস্তফা (রহঃ) দরগাহ এর মোতাওয়াল্লী সৈয়দ খলিল উল্ল্যাহ ছালিক জুনেদ বলেন, এ্ ঈদগাহ মৌলভীবাজারের অনেক প্রাচিনতম একটি ঈদগাহ। বর্তমানে সংসদ সদস্য, মেয়র ও দরগাহ কমিটি মিলে এ ঈদগাহের অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন। তিনি বলেন, একসময় শহর কেন্দ্রিক ঈদ জামাত দরগাহ প্রাঙ্গলে অনুষ্টিত হলেও ১৯৩৩ সালের দিকে এ ঈদগাহ স্থাপিত হলে পরবর্তী সময় থেকে ওই ঈদগাহেই ঈদ জামাত অনুষ্টিত হয়ে আসছে।

(একে/এসপি/এপ্রিল ২৯, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test