E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সরকারি গাড়ি নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা!

২০২২ মে ০৭ ১৮:০৮:১১
সরকারি গাড়ি নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা!

তারেক হাবিব, হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে উপজেলার সচেতন মহলে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। যদিও সরকারি গাড়ির অপব্যবহার করা ও ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার না করতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের। অথচ হবিগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন চৌধুরীর তার ব্যক্তিগত কাজেই বেশিরভাগ সময় ব্যবহার করছেন সরকারি গাড়ি। এতে একদিকে যেমন জ্বালানি তেল বেশি যাচ্ছে সরকারি কোষাগার থেকে, তেমনি ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

অনুসন্ধান বলছে, প্রায় ৪ বছর আগে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন মো. দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী। তার নিজ জেলা পাশের বিভাগ ঢাকার নরসিংদীতে হওয়ায় নিজ বাড়ি ও তার শ্বশুরবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ান এই কর্মকর্তা। তবে সুকৌশলী এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সরকারি গাড়ী ব্যবহারে তার চালক দিয়ে জেলার বাইরে বের হন। তিনি এর আগে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। হবিগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানকালে সরকারের পক্ষ থেকে তাকে সরকারি কাজে ব্যবহারের জন্য কালো রঙের উন্নতমানের একটি গাড়ি দেয়া হয়। নিয়ম রয়েছে সরকারি কাজ ছাড়া জেলার বাইরে গাড়ি নিয়ে যেতে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ও সংশ্লিষ্ট কারণ থাকতে হবে। অথচ ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোঃ দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী তার নিজ জেলাসহ যেকোন জায়গায় ব্যক্তিগত কাজে নিয়মিত যাতায়াত করেন। হবিগঞ্জ জেলা থেকে নরসিংদী শহরের দুরত্ব প্রায় ১১৩. ৫০ কিলোমিটার। সেখানে তার নিজ বাড়ি। আবার সেখান থেকে তার শ্বশুরবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ান এই কর্মকর্তা। সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুরের পর হবিগঞ্জ অফিস থেকে বের হয়ে আবার ফেরেন শুক্রবার রাতে। এসব কারণে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করায় জ্বালানি তেল লাগছে বেশি। অন্যদিকে ব্যক্তিগত কাজে গাড়ি ব্যবহার করায় বদনাম ছড়াচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিভাগের। গাড়ির চালক ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘স্যার আমাকে সাথে নিয়ে ঈদের দিন রাতে এসেছেন নরসিংদী। আমি নিয়মিত স্যারকে নিয়ে আসি, আবার হবিগঞ্জ ফিরতে হয়। স্যারের গ্রামের বাড়ি নরসিংদী তার চাচাত বোনকে তিনি বিয়ে করেছেন।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দেলোয়ারের প্রতিবেশী স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিয়মিত বৃহস্পতিবার থেকে ,শনিবার ও সরকারি ছুটির দিনেও এই অফিসারের বাসার সামনে একটি কালো রঙের সরকারি গাড়ী দেখা যায়। নিজ বাড়ী থেকে অন্যান্য এলাকায়ও যেতে দেখি। তবে সরকারি গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলেও জানান তারা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নরুল হক বলেন, ‘সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের কোন নিয়ম নেই। একান্তই যদি কোন জিবন-মরনের প্রশ্ন আসে এবং সরকারী গাড়ি ব্যবহারের প্রয়োজন হয় সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করতে হবে’। অভিযুক্ত হবিগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘মায়ের অসুস্থ্যতার জন্য নরসিংদী এসেছি। আমি ছুটিতে আছি এটা কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। তবে গাড়ির বিষয়টি অবগত করিনি’।

এদিকে, অনুসন্ধান বলছে, গত ৪ বছর আগে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) হিসেবে যোগদান করেন তিনি। এর আগে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অবৈধ প্রত্যয়ণ বানিজ্যসহ হবিগঞ্জ শহরের প্রাইভেট ক্লিনিক হাসপাতালে অ্যানেস্থেসিয়া (রোগীকে অস্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অজ্ঞান করা) করতে দেখা যায় তাকে। অ্যানেস্থেসিয়া করার যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকলেও বাড়তি টাকা কামাতে শহরের প্রাইভেট ক্লিনিক হাসপাতালে নিয়মিত যাতায়াত থাকে তার।

(টিএইচ/এএস/মে ০৭, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test