E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

মৌলভীবাজারে পর্যটকদের ঢল, লাউয়াছড়ায় চারদিনে এসেছেন ১১ হাজার পর্যটক

২০২২ মে ০৭ ১৮:১৬:১৪
মৌলভীবাজারে পর্যটকদের ঢল, লাউয়াছড়ায় চারদিনে এসেছেন ১১ হাজার পর্যটক

মো. আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : করোনায় নানা বিধি-নিষেধের কারনে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ- শ্রীমঙ্গলসহ জেলার পর্যটন শিল্পে ধ্বস নেমেছিল বিগত দুটি বছরে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন এই খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা,তবে ওই দুটি বছরে মানুষের আনাগুনা একদম কম থাকায় এখানকার বনগুলোর জীববৈচিত্রসহ বন্যপ্রাণীরা ছিলো অনেকটাই স্বস্তিতে। এবছর এই সঙ্কট কাটিয়ে ফের সরগরম হয়ে উঠছে চা-কন্যার দেশ শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের পর্যটন স্পটগুলো।

এ বছর ঈদুল ফিতরে টানা নয়দিনের ছুটিতে দেশ। এই সুযোগে রেইন ফরেষ্টখ্যাত কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান,প্রকৃতির নয়নাভিরাম মাধবপুর লেইক, বড়লেখার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, হাকালুকি হাওর, শ্রীমঙ্গলের সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা, অসংখ্য চাবাগান, হামহাম জলপ্রপাত,উঁচু উঁচু পাহাড়-টিলা, লেমন গার্ডেন রিসোর্ট ও ও পাঁচতারকা মানের গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গল্ফসহ ছোট বড় অসংখ্য রিসোর্ট গুলোতে বিপুল সংখ্যক দেশী-বিদেশী পর্যটক এই ঈদুল ফিতরে ঘুরতে এসেছে। সবচেয়ে বেশি পর্যটক এসেছেন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের টিকেট কাউন্টারের একাউন্টিং কর্মকর্তা আফজালুল হক জানিয়েছেন, এবারের ঈদুল ফিতরের পরবর্তী চারদিনে এখানে দেশি-বিদেশীসহ মোট ১১ হাজার ২শত ৭১ জন পর্যটক এসেছেন। এতে চারদিনে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ৫৷ লক্ষ ২হাজার ৮শত ২ টাকা। ট্যুরিস্ট পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এবারের ঈদ উপলক্ষ্যে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জে প্রায় পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি পর্যটক এসেছেন।

বিশাল এই বনে বিপুল সংখ্যক পর্যটক আসায় এখানকার জীববৈচিত্র বেশ হুমকির মুখে পড়েছে। ১২৫০ হেক্টর আয়তনের এ বনটি জীববৈচিত্রে ভরপুর। বনটিতে রয়েছে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণী।

শনিবার (৭ মে) ঈদের পঞ্চম দিনে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়,লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের প্রধান ফটকের সামনে পর্যটকদের বহনকারী যানবাহনে ঠাসা। ভিতরে প্রবেশ করেই দেখা যায় পুরো রাস্তা জুড়ে পর্যটকের দীর্ঘ লাইন। সবাই বনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বেশি সংখ্যক লোকসমাগমের কারনে উচ্চ শব্দ আর যানবাহনের প্রচন্ড আওয়াজে মনে হয়েছে এখানকার জীববৈচিত্র হুমকির মুখে। শুধু তাই নয় পর্যটকদের ফেলে যাওয়া পলিতিন আর নানা প্লাস্টিক বর্জের কারনে ক্ষতি হচ্ছে বনের পরিবেশের। তবে বন ঘুরতে আসা অধিকাংশ পর্যটকদের আক্ষেপ, নানা জাতের উদ্ভিদ আর নয়নাভিরাম সবুজ প্রকৃতি উপভোগ করলেও দেখা মিলেনি বন্যপ্রাণীর। তাদের ধারনা হয়তো অতিরিক্তি পর্যটক আর উচ্চ শব্দের কারনে আতঙ্কে বনের ভিতরে চলে গেছে বন্যপ্রাণীরা।

ঢাকা থেকে ঈদে লাউয়াছড়ায় ঘুরতে এসেছেন মো: সাজেদ নামে এক ব্যবসায়ী। বেশ ক্লান্ত দেখা যায় তাঁকে। বনের প্রকৃতির আদ্রতা বেশি থাকায় শরীর থেকে ঘাম ঝরছিলো তাঁর। এসময় বনের ভিতরে বসে সেখানে মদিনা বাউল নামের এক বাউল শিল্পীর গান শুনছিলেন তিনি।

কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুরতে এসেছি,সবাই ঘুরছে আমিও ঘুরছি, এখানকার নির্মল প্রকৃতি উপভোগ করছি। তিনি বলেন,এর আগেও কয়েকবার এসেছি তবে কোন বন্যপ্রাণীর দেখা পাইনি।

নারায়নগঞ্জের একটি টেক্সটাইল চাকুরী করেন সাব্বির নামের এক তরুণ, ঈদে স্ত্রী নিয়ে লাউয়াছড়া ঘুরতে এসেছেন। লাউয়াছড়া বনের ভিতরে রেললাইনের প্লাটফর্মে দেখা হয় এই দম্পতির সাথে। এসময় তিনি বলেন, মাত্র এসেছি পুরোটা ঘুরে দেখবো, এখানকার প্রকৃতি খুবই নির্মল।

সিলেট এমসি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন,ঈদে মানুষের আনাগুনা বেশি হওয়ার কারনে বন্যপ্রানী বনের অনেক ভিতরে চলে গেছে। নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন,এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা চোখে পড়ার মতো,আমরা খুশি তবে সম্ভবত জাফলংয়ের ঘটনার কারনে বাড়তি নিরাপত্তা।

ট্যুরিষ্ট পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. ওসমান গনি বলেন,শুধু জাফলংয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নয় এর আগে থেকে আমাদের এখানে পর্যটকের নিরাপত্তার জন্য চারস্থর বিশিষ্ট টিম গঠন করা হয়েছে। আমাদের সিভিল আছে,সাদা পোশাকে আছে,হোন্ডা পার্টি আছে আবার টহলেও আছে। ইতিপূর্বে আমাদের এখানে কোন অনাখাঙ্খিত ঘটনা ঘটেওনি,আগামীতেও এরকম কোন ঘটনা ঘটবেনা ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন,সম্প্রতি জাফলংয়ে পর্যটকদের উপর যে হামলার ঘটনা ঘটেছে তাঁর কোন প্রভাব এখানে পড়েনি।

এদিকে সবকিছু ছাঁপিয়ে এবারের ঈদে পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিলো নজিরবিহীন। ট্যুরিষ্ট পুলিশের টহল ছাড়াও কয়েকটি জায়গায় নিরাত্তাতল্লাসী চৌখি বসানো হয়েছে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে। প্রতিটি স্পটেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিলো চোখে পড়ার মতো। ধারণা করা হচ্ছে সম্প্রতি সিলেটের জাফলংয়ে পর্যটকদের উপর হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতেই এমন বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছেন প্রশাসন।

পুলিশ প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশের সাথে সমন্বয় করে বিশেষ নিরাপত্তা বিধানে কাজ করছে পুলিশ। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পর্যটন স্পটগুলোতে ইউনিফর্ম পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি চালানো হচ্ছে।

শ্রীমঙ্গল ট্যুরিস্ট পুলিশের ওসি মো: আতিকুর রহমান জানান,প্রচুর পর্যটক আসায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়,তবে এর পিছনে জাফলংয়ের ঘটনার কারন রয়েছে বলেও স্বীকার করেন ট্যুরিস্ট পুলিশের এ কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন মৌলভীবাজার জেলা সমন্নয়ক সালেহ সোহেল বলেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জীববৈচিত্র্যকে কঠিন হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে পর্যটক। বন রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। এর আগেও বনে অতিরিক্ত পর্যটক প্রবেশ করেছেন। বনের পরিবেশ ঠিক রেখে পর্যটককে প্রবেশ করাতে হবে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এবার অতিরিক্ত পর্যটক হওয়ায় হুমকিতে বন্যপ্রাণী এ বিষয়টি সত্য। আগামীতে পর্যটকদের জন্য অনলাইন টিকেটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

(একে/এএস/মে ০৭, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test