E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মোবাইলে পরিচয়, প্রথম দেখাতেই অপহরণ

আড়াই মাস আটকে রেখে কিশোরীকে ধর্ষণ!

২০২২ মে ০৮ ১৭:৪৭:৪৬
আড়াই মাস আটকে রেখে কিশোরীকে ধর্ষণ!

সোহেল সাশ্রু, ভৈরব : কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে এক কিশোরীকে অপহরণ করে প্রায় আড়াই মাস আটকে রেখে চেতনানাশক প্রয়োগ করে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক পাদুকা শ্রমিকের বিরুদ্ধে। 

অভিযুক্ত পাদুকা শ্রমিক সমির মিয়া (৫০) কুলিয়ারচর পৌরশহরের তাঁতারকান্দি গ্রামের মৃত মো. তারা মিয়ার ছেলে।
৮ মে রোববার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে ধর্ষিতা কিশোরীসহ তার মায়ের সাথে কথা হলে ধর্ষিতা কিশোরী অভিযোগ করে বলে, অভিযুক্ত সমির মিয়ার সাথে অপরিচিত মোবাইল নম্বরে তার পরিচয় হয়।

পরিচয়ের একপর্যায়ে সমির তাকে কল করে উপজেলার দ্বাড়িয়াকান্দি বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা করতে বলে। সমিরের ডাকে সাড়া দিয়ে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টার দিকে ওই কিশোরী দ্বাড়িয়াকান্দি বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখে লোকটি তার বাবার বয়সী। এসময় সে সমিরের সাথে কথা না বলে চলে আসতে চাইলে রুমালে চেতনানাশক দিয়ে তার মুখে চাপ দিয়ে ধরে অজ্ঞান করে গাজীপুর সাইনবোর্ড এলাকায় একটি বস্তিতে নিয়ে যায় তাকে।

পরবর্তীতে সেখানে তাকে আড়াই মাস আটকে রেখে বিভিন্ন সময় খাবারের সাথে চেতনানাশক কিছু মিশিয়ে তাকে অজ্ঞান করে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে পাদুকা শ্রমিক সমির মিয়া। এসব বিষয় বুঝতে পেরে ওই কিশোরী বাঁধা নিষেধ দিলে সমির ওই কিশোরীর এক মাত্র বড় ভাই (২৫) ও তার মাসহ কিশোরীকে খুন করার হুমকি দেয়। এমন কি ওই কিশোরীকে একাধিক বার নির্মমভাবে মারধোর করে ভয় ভীতি দেখিয়ে প্রতিদিনই জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। আর সবকিছুতে সমিরকে সহযোগীতা করে তিনজন লোক। কিশোরীর ধারণা চেতনানাশকে অজ্ঞান হয়ে থাকার সময় সহযোগী তিনজন ব্যক্তিও তাকে ধর্ষণ করেছে বলে মনে হয়। জ্ঞান ফিরলে তার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ থাকতো বলেও সে জানায়।

কিশোরীর মা বলেন, আড়াই মাস আগে আমার মেয়ে যখন নিখোঁজ হয় তখন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করি। কিন্তু আমি গরিব মানুষ অন্যের বাসায় কাজ করে বাপ মরা এতিম মেয়েটিকে নিয়ে কোন রকম বেঁচে আছি। মেয়েটি নিখোঁজ হওয়ার পর তাকে খোঁজার সামর্থ্য আমার ছিলো না। সমিরের পরিবার সূত্রে জানতে পারি সমিরই আমার কিশোরী মেয়েকে অপহরণ করে গাজীপুর সাইনবোর্ড এলাকায় নিয়ে গেছে। ঈদের আগে সমির একা বাড়ি ফিরলে বিষয়টি কুলিয়ারচর থানা পুলিশকে জানাই। পরে ঈদের আগের দিন পুলিশ সমিরকে হুমকি-ধামকি দিলে ঈদের পরদিন ৪ মে বুধবার দুপুরে মেয়েটি বাড়ি ফিরে আসে। মেয়েটি বাড়ি আসার পরই তার সাথে হওয়া সব ঘটনা আমাকে খুলে বলে।

কিশোরীর মা তার সহজ সরল মেয়ের এতবড় সর্বনাশের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করে আরো বলেন, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল শনিবার দিবাগত রাত থেকে বিষয়টি আপোষ মীমাংসার জন্য তাদের চাপ প্রয়োগ করে আসছে। চাপের মুখে মেয়ে নিয়ে আতংকে দিনাতিপাত করছে সে। অপহরণের পর আটকে রেখে মারধোর ও নির্যাতনের অসংখ্য চিহ্ন শরীরে রয়েছে বলে দেখায় মেয়েটি।

এ ঘটনায় ওই কিশোরীসহ তার মা স্থানীয় তিনজন সাংবাদিকের সহযোগিতায় গত ৭ মে শনিবার কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেল (ওসিসি) তে একটি লিখিত অভিযোগ করলে ওসিসি’র প্রোগ্রাম অফিসার এম এ বাকী বিল্লাহ ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার ভিকটিমকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার জন্য কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর একটি চিঠি প্রদান করেন।

এ ঘটনায় ৮ মে রোববার বিকালে ধর্ষিতা কিশোরী বাদী হয়ে কুলিয়ারচর থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলা নং-০২।

এ বিষয়ে কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ঘটনায় কুলিয়ারচর থানায় একটি মামলা রুজু হয়েছে। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং অভিযুক্তকে গ্রেফতারের জোর চেষ্টা চলছে।

(এস/এসপি/মে ০৮, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test