E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চরপাথরঘাটায় ইভিএম নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোটাররা

২০২২ মে ১৯ ১৬:২২:৩১
চরপাথরঘাটায় ইভিএম নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোটাররা

জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় এলাকাবাসী ও প্রার্থীরা। ইভিএমে ভোট দেওয়ার বিষয়ে ভোটার ও প্রার্থীদের মাঝে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তবে ইভিএমে ভোট দেওয়া নিয়ে নির্বাচন কমিশন মগ ভোটিংসহ সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করবেন বলে জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়।

অষ্টম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন কর্ণফুলীর ১টি ইউনিয়নে ১৫ জুন ইভিএমে অনুষ্ঠিত হবে। ইভিএমে কীভাবে ভোট দিতে হয়, তা জানেন না ইউনিয়নের ২২ হাজারেরও বেশি ভোটার। ইভিএমে সঠিকভাবে ভোট দিতে পারবেন কি না তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। এই পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে। নির্বাচন অফিস সূত্র মতে, চরপাথরঘাটা ১ নং (খ) ইউনিয়নে ২২ হাজার ৭২৩ জন ভোটার ৯টি কেন্দ্রে ৭৪টি বুথে প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট দেবেন।

চরপাথরঘাটা খোয়াজনগর এলাকার ইসমাইল ও বাদশা মিয়া বলেন, আমরা তেমন লেখাপড়া জানি না। শুনেছি এবার নাকি ভোট হবে মেশিনে। কিভাবে মেশিনে ভোট দিবো জানি না। কারণ কোথাও এখনো দেখানো হয়নি। ইভিএমে কিভাবে ভোট দেওয়া যায়।’ ইছানগর এলাকার আজাদ ও ইদ্রিস বলেন, আগে সিল মেরে ভোট দিয়েছি। এখন নাকি মেশিনে ভোট দিতে হবে। মেশিন তো আমরা বুঝি না। তাই চিন্তা ভাবনায় আছি। চরপাথরঘাটা ১নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদ মিয়া ও নুরুন্নবী বলেন, আমরা মানুষের মুখে এমনও শুনতেছি। ইভিএমে ভোট নাকি একটা মার্কায় দিলে আরেকটায় ওঠে যায়। কতটুকু সত্য জানি না।

ইভিএমের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে সিটি নির্বাচনের ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করা চরপাথরঘাটার এক শিক্ষক মোঃ সাইফুদ্দীন বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে ভোটারদের মাঝে দ্বিধাদ্বন্দ রয়েছে। বিভিন্ন প্রার্থী ও তার কর্মী-সমর্থকরা গুঞ্জন সৃষ্টি করছে যে, ভোট দিবে একখানে যাবে অন্যদিকে। আসলে তা সঠিক নয়। এখানে ব্যালট দখলের মতো কোন ঘটনা নেই। শুধু প্রিঙ্গার নয়, এনআইডি কার্ডের নম্বর না মিললে ভোট দেওয়ার জন্য মেশিন ওপেন হয় না। সুতরাং এটা নিরাপদ ও সুরক্ষিত বলা যায়।’

একই ইউনিয়নের খোরশেদ আলম বিপ্লব বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে সংশয় দূর করতে ট্রায়াল ভোট এবং বিভিন্ন স্থানে প্রজেক্টরের মাধ্যমে প্রচার করা গেলে ইভিএম নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। সাধারণ মানুষকে আস্থায় নিয়ে আসতে পারলে সমস্যা কেটে যাবে।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলার সিনিয়র নির্বাচন অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘চরপাথরঘাটায় প্রথমবারের মতো ইভিএম-এ ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এটা নিয়ে জনগণের মাঝে আগ্রহ আছে, কিছু প্রশ্নও আছে। ইভিএমে আস্থার জায়গাটি হলো ভোট দেওয়ার পর এটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে গণনা করে। আমরা সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মাঠে কাজ করব শিগগিরই।’

নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কিভাবে কাজ করে

নির্বাচন কমিশনের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর মমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, ইভিএমের মূলত তিনটি অংশ। ডেটা যাচাই করার যন্ত্র বা কন্ট্রোল ইউনিট, ব্যালট যন্ত্র এবং মনিটর। ডেটা যাচাই যন্ত্রটি কাজ শুরু করবে দুটি অ্যাকসেস কার্ডের মাধ্যমে। এর একটি থাকবে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে, অন্যটি সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে। প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের কাছে একটি পিন নম্বর থাকবে, তা ব্যবহারের মাধ্যমে ভোটারের সংরক্ষিত তথ্য জানা যাবে। মেশিনটির একটি অংশে ভোটারের আঙুলের ছাপ দেওয়ার জায়গা আছে। সেখানে আঙুলের ছাপ দেওয়া হলে ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত হবে।

তিনি আরও বলেন, আঙুল ছাড়াও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর এন্ট্রি দিয়ে ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে। ভোটার পরিচয় নিশ্চিত হলে তা মনিটরে দেখা যাবে। মনিটরটি ভোটকক্ষের এমন স্থানে স্থাপন করা হবে, যেখান থেকে ভোটারের পরিচয় সম্পর্কে রিটার্নিং কর্মকর্তা, দুই দলের পোলিং এজেন্ট ও ভোটার নিজে দেখতে পারবেন।

ভোটার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেলে ভোটারকে ভোট দেওয়ার গোপন কক্ষে পাঠানো হবে। সেখানে চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সংরক্ষিত নারী সদস্যকে ভোট দেওয়ার জন্য তিনটি আলাদা ব্যালট যন্ত্র থাকবে। ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেলে ব্যালট যন্ত্রের মনিটর স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করবে। তখন বিভিন্ন প্রার্থীর নাম এবং প্রতীক দেখা যাবে। অন্য সময় এই যন্ত্র নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকবে।

ব্যালট যন্ত্রে প্রত্যেক প্রার্থীর নাম ও প্রতীকের পাশে আলাদা সাদা বোতাম থাকবে। বোতামে চাপ দিলে যন্ত্র থেকে স্বয়ংক্রিয় বার্তায় বলা হবে, ‘আপনার পছন্দের প্রতীক নিশ্চিত হলে সবুজ বাটন চাপুন’। এরপর নিচে থাকা সবুজ বোতাম চেপে ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। একই ভোটার যদি আবার ভোট দিতে আসেন, তবে যন্ত্র জানাবে যে তাঁর ভোটটি ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে এবং জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টায় ভোটারকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করা হবে।

ইভিএম সম্পর্কে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল শুক্কুর বলেন, ‘ইভিএম ব্যবহারে প্রার্থী ও ভোটার দুপক্ষই লাভবান হবে। ভোটার কম সময়ে ভোট দিতে পারবেন। তিনি বলেন, অনেক সময় ব্যালট পেপারে সঠিক জায়গায় সিল পড়ে না, কখনো ভাঁজ করার ফলে সিলের দাগ অন্যদিকে পড়ে ব্যালট বাতিল হয়, ইভিএম ব্যবহারের ফলে এই সমস্যা আর থাকছে না।

(ওএস/এসপি/মে ১৯, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test