E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ওষুধ সংকট

২০২২ মে ২১ ১৭:৪৩:১১
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ওষুধ সংকট

অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে পাঁচ মাস ধরে গ্যাষ্ট্রিকের ওষুধ নেই। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে বেশ কিছু জীবনরক্ষাকারী ওষুধের সাপ্লাই বন্ধ রয়েছে। রাষ্ট্র মালিকানাধীন এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) গ্যাষ্ট্রিকের পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করতে পারছে না। এদিকে সরকারি ওষুধ না পেয়ে হতদরিদ্র রোগীরা ফিরে যাচ্ছেন। অনেকেই হাসপাতালের ওষুধ না পেয়ে কিনতেও পারছেন না। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ওমিপ্রাজল, প্যান্টোপ্রাজল, এন্টাসিড, ভিটামিন বি ও ডায়াবেটিসের ওষুধ মেটফরমিন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। ফার্মাসিষ্ট ও ভাণ্ডাররক্ষকরা বলছেন বগুড়া এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি (ইডিসিএল) থেকে এ সব জীবনরক্ষাকারী ওষুধ সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু চাহিদা থাকার পরও দিতে পারছে না। ফলে প্রতিনিয়ত রোগী ও প্রভাবশালীদের কাছে নাজেহাল হতে হচ্ছে হাসপাতালের স্টাফদের।

ঝিনাইদহ আড়াই’শ বেড জেনারেল হাসপালের স্টোরকিপার সানোয়ার হোসেন জানান, আমি নতুন যোগদান করেছি। যোগদান করার পর থেকেই দেখছি কিছু ওষুধ ভাণ্ডারে নেই। আমরা সর্বক্ষণ ইডিসিএলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছি। সরবরাহ করলেই হাসপাতালের ফার্মেসি ও ইনডোরে সাপ্লাই দেওয়া হবে। তিনি বলেন ইতিমধ্যে আমরা ৫০ হাজার এন্টাসিড, ৩০ হাজার ওমিপ্রাজল ও ৫০ হাজার পেনটোপ্রাজল পেয়েছি। শনিবার থেকে সেগুলো দেওয়া হবে।

হাসপাতালের ফার্মাসিষ্ট রুহুল আমিন জানান, সপ্তাহে আমাদের এক লাখ করে গ্যাষ্ট্রিকের ওষুধ লাগে। সেই হিসেবে বছরে ৫২ লাখ দরকার হয়। তিনি বলেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা প্রতিটি রোগী গ্যাসের বড়ি নেয়। ফলে সপ্তাহে দশ থেকে পনের হাজার গ্যাসের বড়ি প্রয়োজন হয়। তিনি বলেন জরুরী ভাবে কিছু ওষুধ (গ্যাষ্ট্রিকের)পাওয়া গেছে। তা হয়তো ৫/৬ দিন চলতে পারে।

ফার্মাসিষ্ট রুহুল আমিন বলেন, ৪/৫ মাস ধরে গ্যাসের কোন ওষুধ ছিল না। এ সময়টা তাদের অনেক নাজেহাল হতে হয়েছে। বিশেষ করে কিছু প্রভাবশালী রোগী তাদেরকে নানা ধরণের গালমন্দও করেছেন। অভিযোগ পাওয়া গেছে বিভিন্ন ক্লিনিকের দালাল, হাসপাতালের স্টাফ ও হাসপাতালে ইর্ন্টানি করতে আসা শত শত শিক্ষার্থী প্রতিদিন গ্যাস্ট্রিকসহ বিভিন্ন আইটেমের ওষুধ নিয়ে থাকেন। তাদের কারণে দ্রুত ভান্ডারের ওষুধ ফুরিয়ে যায়। বিশেষ করে গ্যাসের বড়ির সংকট দেখা দেয়। এর আগে হাসপাতালের আশেপাশে বেসরকারী ক্লিনিকে কর্মরর্ত ম্যাটস, আইএইচটি ও নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীরা চিকিৎসকের সাক্ষর জাল করে এন্টিবায়োটিক ওষুধ উত্তোলনের সময় ধরা পড়ে। কিন্তু তাদের কোন শাস্তি দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই চক্রটি এখনো একই ভাবে ওষুধ উত্তোলন করে যাচ্ছে। হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোর থেকে দেদারছে ওষুধ উত্তোলনের প্রবণতা রোধ করা না গেলে প্রয়োজনের সময় রোগীরা বিপদে পড়তে পারেন বলেও অনেকে মন্তব্য করেন।

ব্যাপারীপাড়ার হতদরিদ্র সবুরা খাতুন নামে এক রোগী বলেন, গত ৫ মাস ধরে তিনি হাসপাতাল থেকে কোন গ্যাসের বড়ি পাননি। ধারদেনা করে তাকে বড়ি কিনে খেতে হয়েছে।

পাগলাকানাই এলাকার রুহুল শেখ জানান, বাজারে একটা গ্যাসের বড়ি ৮/১০ টাকা দাম। হাসপাতাল থেকে তিনি কোন ওষুধ পাননি। বিষয়টি জানতে হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ রেজাউল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়, কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।

সিভিল সার্জন ডাঃ সুভ্রা রানী দেবনাথ জানান, তিনি তো হাসপাতালের দায়িত্বে নেই। তবে যতদূর জানি ওষুধ কেনার জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে সব রকমের ওষুধ সাপ্লাই আছে বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন ক্লিনিকের দালাল, হাসপাতালের স্টাফ ও ইর্ন্টানি করতে আসা শিক্ষার্থীদের দেদারছে ওষুধ দেওয়া ঠিক হচ্ছে না। এটা দ্রুত নিয়ন্ত্রন করা দরকার।

(একে/এসপি/মে ২১, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test