E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ফুলবাড়ীতে জমে উঠেছে লিচুর বাজার, দাম চড়া

২০২২ মে ৩০ ১৬:২৯:৪৭
ফুলবাড়ীতে জমে উঠেছে লিচুর বাজার, দাম চড়া

ফুলবাড়ী প্রতিনিধি : দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে জমে উঠেছে মৌসুমী রসালো ফল লিচুর বাজার। লিচুর জন্য দিনাজপুর জেলা দেশবাসীর কাছে বিখ্যাত। বিভিন্ন জাতের লিচুর ডালা সাজিয়ে বেচাকেনা চলছে ফুলবাড়ী পৌরশহরের বিখ্যাত লিচু বাজার নিমতলা মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায়। 

সেই লিচু দিনাজপুরের জেলার সর্বত্রই কমবেশি বানিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করা হচ্ছে। কিন্তু গত বছর লিচুর দাম কিছুটা কম থাকলেও এ বছর দাম একটু চড়া দামে বেচাকেনা হচ্ছে। এ কারণে লিচু এখনও নি¤œআয়ের মানুষসহ হতদরিদ্র পরিবারগুলোর কাছে নাগালের বাইরে থেকে গেছে। অতিরিক্ত খড়াসহ বেশি বৃষ্টিপাতের কারণে লিচুর ফলন কম হওয়ায় এ বছর দাম একটু বেশি যাচ্ছে এমনটাই বলছেন স্থানীয় লিচু বিক্রেতাদের।

স্থানীয় ব্যবসায়িরা বলছেন, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সুস্বাদু ও রসালো মিষ্টি স্থানীয়ভাবে চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়ে থাকে। এতে আশানুরুপ লাভ পাওয়া যায় লিচু বাগান মালিকসহ ব্যবসায়িদের। কিন্তু গত দু’বছর মহামারী করোনার প্রভাবের কারণে চাহিদা মতো অন্যান্য স্থানে লিচু পাঠানো না যাওয়ায় স্থানীয় বাজারে লিচুর দাম কম ছিল। কিন্তু এ বছর করোনামুক্ত পরিবেশ থাকায় লিচু স্থানীয় বাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে বলে দাম একটু বেড়তির দিকে।

সরেজমিনে ফুলবাড়ী পৌরশহরের লিচু বাজার নিমতলা মোড়, রেলঘুমটি, টিটির মোড়, কালীবাড়ী এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রত্যেক এলাকাতেই সারি সারি টুকড়ি বা ঝুড়িতে লিচুর পসরা সাজিয়ে সকাল থেকে রাত অন্তত ১১ টা পর্যন্ত বেচাকেনা চলছে লিচুর। ক্রেতাদেরও ভিড় থাকছে লিচুর বাজারে। বর্তমানে বোম্বাই, চায়না থ্রি, বেদেনা ও মাদ্রাজি জাতের লিচু প্রত্যেকটি লিচু বাজারে বেচাকেনা চলছে। বাজারে ১০০ মাদ্রাজি লিচু বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা দরে। একইভাবে বোম্বাইল লিচু ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, চায়না থ্রি প্রকার ভেদে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা এবং বেদেনা জাতের ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা শ’দরে বিক্রি হচ্ছে।

স্থানীয় লিচু ব্যবসায়ী মেহেদুল ইসলাম ও জাহিদুল ইসলাম বলেন, গত বছরগুলোতে করোনার কারণে এলাকার বাহিরে লিচু পাঠানো যায়নি বলে বিগত দু’বছর লিচুর দাম কম ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় লিচু স্থানীয় বাজারে বেচাকেনার পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লিচু পাঠানো যাচ্ছে বলেই এ বছর লিচুর দাম একটু বাড়তি দিকে। তাছাড়া অতিরিক্ত খরা ও বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় লিচুর ফলন কমে যাওয়াটাও দাম বৃদ্ধিও একটি কারণ।

নিমতলা মোড়ের লিচু বাজারে লিচু কিনতে আসা আলাদিপুর গ্রামের তারাপদ রায় বলেন, এ বছর লিচুর খুব চড়া। গত বছর বোম্বাই জাতের যে লিচু দেড়’শ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেই লিচু এবছর আড়াই’শ টাকা শ’দরে বিক্রি হচ্ছে। চড়া দামের কারণে বেদেনা ও চায়না থ্রি জাতের লিচুতে তো হাত দেয়াই যাচ্ছে না। তবে মৌসুমী ফল পরিবারের লোকজনকে খেতেই হবে তাই বোম্বাই জাতের ১০০ লিচু ২৫০ টাকায় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়ীতে।

অপর ক্রেতা রিপন গুহ বাবু বলেন, বাজারে লিচুর ঝুড়ি বা টুকড়িতে ভর্তি। কিন্তু দাম অত্যন্ত চড়া হওয়ায় ৬৩ টাকায় ২৫ টি বোম্বাই লিচু ু কিনে বাড়ী ফিরতে হচ্ছে। তার অভিযোগ, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত লিচু দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারে লিচু দাম চড়া হয়েছে।

এদিকে প্রতিদিন বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি লিচু যাচ্ছে রাজধানী ঢাকায়। স্থানীয় ব্যক্তি বিশেষ তাদের ঢাকায় বসবাসরত আত্মীয়-স্বজনকে এবং অনেকেই তাদের বন্ধু-বন্ধবসহ শুভাকাঙ্খিদের কাছে মৌসুমী রসালো ফল লিচু পাঠিয়ে থাকছেন।

স্থানীয় করতোয়া কুরিয়ার সার্ভিসের এজেন্ট আনিছুর রহমান বলেন, অন্যান্য সময়ের চেয়ে আম লিচুর সময়ে মালামাল বেশি বহন করতে হয়। এজন্য অনেক সময় গাড়ির সংখ্যাও এ লাইনে বাড়াতে হয়। একই অবস্থার কথা জানান, সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের স্থানীয় প্রতিনিধি নাহিদ হাসান মাজিদ। তবে অন্যান্য সময়ের চেয়ে এ সময় আয় বেশি হয় বলেও জানান তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, উপজেলা পৌর এলাকাসহ ৭ ইউনিয়ন এলাকায় ৬৮ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। প্রতি হেক্টরে সাড়ে ৪ দশমিক ৭১ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে কৃষি বিভাগ থেকে। লিচুর বাগান মালিক ও চাষিরা যেন আর্থিকভাবে লোকসানের মুখে না পড়েন সেজন্য লিচু বাজারজাত করণের বিষয়ে খোঁজখবর রাখা হচ্ছে কৃষি বিভাগ থেকে।

(এম/এসপি/মে ৩০, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test