E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পদ্মা সেতু ষড়যন্ত্র 

গণপিটুনিতে নিহত রেণুর পরিবার দ্রুত বিচার চায়

২০২২ জুন ১৭ ১৭:৪৬:৪৯
গণপিটুনিতে নিহত রেণুর পরিবার দ্রুত বিচার চায়

প্রদীপ কুমার রায়, রায়পুর : স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের অপেক্ষা আর মাত্র ৬ দিন। সেতুকে ঘিরে গুজবে ছেলেধরা সন্দেহে চার বছর আগে ঢাকায় গণপিটুনীর শিকার হয়ে মারা যান তাসলিমা বেগম রেণু। তাঁর গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে। সর্ব কনিষ্ঠ মেয়ের নির্মম মৃত্যুতে আজও কাঁদছেন বৃদ্ধা ছবুরা খাতুন (৭৫)। মাকে খুঁজে ফিরছে দুই কোমলমতি সন্তান তাহসিন আল মাহির (১৩) ও তাসমিম মাহিরা তুবা (৭)। তাঁরা এ ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যা মামলাটির দ্রুত বিচার চায়। 

মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই তুবা তার মায়ের বড় বোনের (খালা) সাথে থাকে এবং তাঁকেই মা বলে ডাকে। এখন পড়ালেখা করছে প্রথম শ্রেণীতে। অপরদিকে মাহিরকে ভর্তি করা হয়েছে মাইল স্টোন স্কুলে। সেখানে হোস্টেলে রেখেই চালানো হচ্ছে তার পড়াশোনা। নিহত তাসলিমা আক্তার রেনু ইডেন কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেছিলেন। বিয়ের পর তিনি ব্র্যাক ও আড়ংয়ে চাকরি করতেন। ছেলে মাহিরের বয়স যখন দেড় বছর, তখন তিনি চাকরি ছেড়ে দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সনে ছেলেধরা গুজবে সারাদেশে ২১টি গণপিটুনির ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যু হয়। ২০ জুলাই রাজধানীর উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তুবাকে ভর্তির বিষয়ে তথ্য জানতে যান তাছলিমা আক্তার রেণু। সেখানে উপস্থিত কয়েকজন নারী তাঁকে ছেলেধরা সন্দেহ করে এই গুজব বাহিরে ছড়িয়ে দেন। মুহুর্তেই বিভিন্ন বয়সী কয়েকশ’ নারী-পুরুষ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়েন। তাঁদের রোষানল থেকে রক্ষা করতে রেণুকে দোতলায় প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। উশৃংখল লোকজন সেখানকার লোহার গেইট ভেঙে রেণুকে টেনে-হিঁচড়ে নিচে নামিয়ে এনে এলোপাতাড়ি লাথি, কিল, ঘুষি ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন।

ওই ঘটনায় নিহতের ভাগিনা সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু বাদি হয়ে অজ্ঞাত ৫০০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক আব্দুল হক ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দুইজনের বিরুদ্ধে দোষীপত্র দাখিল করেন। ঢাকার ৬ষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফাতিমা ইমরোজ ক্ষনিকার আদালতে মামলার বিচার কাজ চলছে। মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।

রেণুর বৃদ্ধা মা ছবুরা খাতুন বলেন, আমি মৃত্যু পথযাত্রী। আমার ৫ মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ রেণু ছিলো আমার অতি আদরের। আমার নাড়ি ছেড়া ধনকে হারিয়ে আজ আমি নি:স্ব। পদ্মা সেতু চালু হচ্ছে জেনে খুব খুশি হয়েছি। তবে আমার মেয়ের বিচার দেখে যেতে পারবো কীনা এ নিয়ে হতাশ। তাই আমার জীবদ্দশায় আমি আমার মেয়ের হত্যাকারীদের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি দেখে যেতে চাই।

মামলার বাদী ও নিহত তাসলিমা আক্তার রেনুর ভাগনে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু বলেন, ‘গুজব’ আমার খালার প্রাণ কেড়ে নিলেও ষড়যন্ত্রকারীরা পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ থামিয়ে রাখতে পারেনি। যে পদ্মা সেতুর জন্য আমার খালাকে জীবন দিতে হয়েছে, আজ সেই সেতু উদ্বোধনের ক্ষণ গননা চলছে। কাঙ্খিত সেতুর উদ্বোধনের সাথে সাথে গুজব রটনাকারী ও আমার খালার হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখতে পারলে আমরা আরো বেশি খুশি হতাম। শান্তনা দিতে পারতাম তাঁর অবুঝ দুই শিশু সন্তানকে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে গেলে খালার বিচার না পাওয়ার বিষয়টি আমাদেরকে আরো কষ্ট দেবে। আমরা চাই দ্রুত মামলাটির বিচার কার্যক্রম শেষ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।

(পিকেআর/এসপি/জুন ১৭, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test