E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সরিষাবাড়ীতে আ'লীগের সম্পাদক প্রার্থী বিতর্কিত নেতা, নেতাকর্মীদের ক্ষোভ

২০২২ জুলাই ০৩ ২৩:৫৩:৩২
সরিষাবাড়ীতে আ'লীগের সম্পাদক প্রার্থী বিতর্কিত নেতা, নেতাকর্মীদের ক্ষোভ



রাজন্য রুহানি, জামালপুর : জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার মহাদান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনের প্রার্থী হওয়ায় দলের উচ্চ পর্যায়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতক ওই নেতাকে যেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করা না হয় নেতাকর্মীরা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সেদিকেও।

বিগত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। এবার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন হওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়ে দলের ভাবমূর্তি পুনরায় ক্ষুণ্ণ করার পাঁয়তারা করছেন। লিখিত অভিযোগে এসব উল্লেখ করা হয়।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর ২৩ জুন তারিখে প্রেরিত ওই অভিযোগে এসব তথ্য জানা যায়।

দলীয় সূত্র জানায়, গত ২৮ জুন মহাদান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রি-বর্ষিক সম্মেলন স্থানীয় সানাকৈর বাজারে অনুষ্ঠিত হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরীসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে শান্তিপূর্ণভাবে ওই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় মহাদান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক নেতা তাদের প্রার্থিতা ঘোষণা করায় কমিটি ঘোষণা ছাড়াই সম্মেলন শেষ করা হয়। নতুন কমিটিতে সভাপতি পদে তিনজন প্রার্থীর মধ্যে কে হতে যাচ্ছেন নতুন সভাপতি এ নিয়ে ওই তিন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে কোন মতবিরোধের কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

কিন্তু দলের অপর গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন নয়জন। এই নয়জনের মধ্যে সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও বিগত ২০২১ সালের ইউপি নির্বাচনে চেয়াম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুনও রয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক পদে বাকি আটজন প্রার্থীরা হলেন- ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এমদাদুল হক লাল মিয়া, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. আনোয়ার হোসেন ও আব্দুর রাজ্জাক শাহিন, সাবেক কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম, সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মো. মোজাফফর হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মমিনুল ইসলাম মিন্টু ও হাসানুল কবীর তরফদার রিপন, এনামুল কবীর বাবলু।

কিন্তু সাধারণ সম্পাদক পদে এই নয়জন প্রার্থীর মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনকে নিয়ে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাকে সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন না করার জন্য গত ২৮ জুন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের আগেই নানা অভিযোগ তুলে ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছিল।

ওই অভিযোগে জানা যায়, বিগত ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনেও বিএনপি-জামাত জোটের প্ররোচনায় বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছিলেন আব্দুল্লাহ আল মামুন। কিন্তু দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে সেবার তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু ওই নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থীকে সহযোগিতাও করেন। বিগত ২০২১ সালেও ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন। তিনি ঘোড়া প্রতীকে মাত্র ৩৯০ ভোট পান। আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে সুবিধা ভোগ করা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে জামালপুর-৩ আসনের এমপি সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি এবং মধুপুর আসনের এমপি ড. আব্দুর রাজ্জাক সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে মহাদান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা আব্দুল্লাহ আল মামুনকে আওয়ামী লীগের একজন বিশ্বাসঘাতক উল্লেখ করে এ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত না করার জন্য জোরালো দাবি জানিয়েছেন তাদের লিখিত অভিযোগনামায়। এমনকি তাকে ছাড়া বাকি আটজন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরাও এক হয়েছেন। দলীয় শৃংখলা বজায় রেখে স্থানীয় রাজনীতিকে সচল রাখার লক্ষ্যে আব্দুল্লাহ আল মামুন ছাড়া অন্য যে কাউকে সাধারণ সম্পাদক করার ক্ষেত্রে কারো কোন দ্বিমত নেই বলে জানিয়েছেন বাকি আটজন প্রার্থী।

অভিযোগ প্রসঙ্গে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন এ প্রতিবেদককে বলেন, ইউপি নির্বাচনে আমি চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছিলাম। কিন্তু দলের প্রয়োজনে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে নির্বাচনের দুই দিন আগে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াই। তখন আমাকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ দেওয়ার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ আশ্বাস দিয়েছিলেন। আমার সাথে বিএনপি জামাতের কোনোরূপ সংশ্লিষ্টতা নাই। আমি আওয়ামী লীগের একজন একনিষ্ঠকর্মী। বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক। তাই আমি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছি। এই পদে যারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা কোনো ওয়ার্ডের নেতা হওয়ারও যোগ্যতা রাখে না। আমার বিষয়টি আমি জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের ওপর ছেড়ে দিয়েছি।

সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছানোয়ার হোসেন বাদশা এ প্রতিবেদককে বলেন, মহাদান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থিতা নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামাত সংশ্লিষ্টতা ও ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে দলীয় বিশৃংখলা সৃষ্টির অভিযোগ পেয়েছি। স্থানীয় নেতাকর্মী স্বাক্ষরিত অভিযোগের বিষয়গুলো উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মহাদান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদসহ পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনো ঘোষণা করা হয়নি। জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের পরামর্শক্রমে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ যাচাই-বাছাই করে খুব শিগগির নতুন কমিটি ঘোষণার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

(আরআর/এএস/জুলাই ০৩, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test