E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নবীনগর আ.লীগের রাজনীতিতে ‘অশনি সংকেত’ বলছেন কেউ কেউ

নবীনগরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আবারও বিভক্ত ‘বুলবুল ও বাদল গ্রুপ’! 

২০২২ জুলাই ১৩ ১৬:২৫:৪৬
নবীনগরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আবারও বিভক্ত ‘বুলবুল ও বাদল গ্রুপ’! 

গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে আবারও 'বাদল ও বুলবুল গ্রুপ' স্পষ্তই বিভক্ত হয়ে গেল। মঙ্গলবার একটি ঈদ পুনর্মিলনীকে কেন্দ্র করে এ বিভক্তি আবারও দেখা দিয়েছে।

মূলত: স্থানীয় সংসদ সদস্য এবাদুল করিম বুলবুলের উপস্থিতিতে নবীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগ ও সকল অঙ্গ সংগঠের ব্যানারে আয়োজিত নবীনগরে অনুষ্ঠিত গতকাল মঙ্গলবারের বহুল আলোচিত "ঈদ পুনর্মিলনী সভা"টি নিয়েই বিভক্তি হওয়ার বিষয়ে নবীনগরের সর্বত্র এখন আলোচনার ঝড় বইছে। বলা যায়, এটি এখন 'টক অব দ্যা নবীনগর' এ পরিণত হয়েছে।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে তীর্যকভাবে নানা আলোচনা ও সমালোচনা। তবে আলোচিত ঈদপুনর্মিলনী সভাটি স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি ও সুধী সমাজের উপচে পড়া স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণে একটি সফল সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে বিভিন্ন মহল থেকেও বেশ জোরেসোরেই আলোচনা হচ্ছে।

জানা গেছে, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি এডভোকেট সুজিত দেবের সভাপতিত্বে ওই ঈদ পুনর্মিলনী সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা আওয়ামীলীগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ওই ঈদ পুনর্মিলনী বিশাল প্রাণবন্ত দীর্ঘ সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে বলা হলেও, আলোচিত সভাটিতে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক সাংসদ ফয়জুর রহমান বাদল ও তাঁর অনুসারী অধিকাংশ নেতা কর্মীকে গতকালের সভায় উপস্থিত থাকতে দেখা না যাওয়ায়, সভাটি নিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও দেখা দিয়েছে। যদিও উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির, মেয়র এডভোকেট শিব শংকর দাসসহ উপজেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ পর্যায়ের অধিকাংশ নেতাকেই গতকালের সভাতে মাননীয় এমপি এবাদুল করিমের পাশে সর্বক্ষণই দেখা গেছে।

সভা শেষে গতকাল সন্ধ্যায় উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের এর পক্ষ থেকে সাংসদ এবাদুল করিমের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।

সাংসদ এবাদুল করিমের কাছে প্রশ্ন ছিলো- ব্যানারে উপজেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত এই গুরুত্বপূর্ণ ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্বয়ং উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ফয়জুর রহমান বাদল অনুপস্থিত কেন?

সাংসদ এবাদুল করিম এর উত্তরে উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে বললেন, "দেখুন, মূলত দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে 'আত্মিক সংযোগ' ঘটানোর জন্যই এটি পূর্ব নির্ধারিত একটি ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান ছিলো। তবে আমি জেনেছি, আজকে দলীয় সভাপতি বাদল ভাইয়ের আরেকটি নবীনগর পূর্ব ইউনিয়নে পারিবারিক একটি প্রোগ্রাম ছিলো। তাই আজকের সভায় তাকে (বাদল) আর আমরা ডিস্টার্ব করিনি। কিন্তু এটি ঠিক, বাদল ভাই আজকের সভায় থাকলে, আরও ভালো হত। তবে আমরাতো কেবল শুরু করলাম। দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে এ ধরণের দলীয় 'গেট টুগেদার' এখন থেকে আমরা আরও করবো। তখন বাদল ভাইসহ সকলকেই আপনারা দেখতে পাবেন ইনশাল্লাহ।

এক প্রশ্নের জবাবে সাংসদ এবাদুল করিম বলেন, দেখুন, দলীয় গ্রুপিং রাজনীতিতে একটা স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে গেছে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে গ্রুপিং পছন্দ করিনা, আধিপত্যে বিশ্বাস করিনা। কিন্তু এটি সত্য, এরপরও দলে নানাভাবে গ্রুপিং হয়ে যায়। এটি আমাকে ভীষণ কষ্ট দেয়। কারণ, আমি কখনও চাইনা বঙ্গবন্ধু তথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যার দল আওয়ামীলীগে কোন প্রকার গ্রুপিং থাকুক!"

এদিকে রাতে এ বিষয়ে দলীয় সভাপতি ফয়জুর রহমান বাদল মুঠোফোনে তাঁর প্রতিক্রিয়ায় এ প্রতিবেদককে বলেন, 'দেখুন, এটি আওয়ামীলীগের ব্যানারে করা হলেও, উপজেলা আওয়ামীলীগ এ সভার সঙ্গে জড়িত ছিলো না। এটি নিতান্তই এমপি সাহেব তথা বুলবুল ভাইয়ের ব্যক্তিগত উদ্যোগে করা একটি ঈদ পুনর্মিলনী ছিল। কারণ, উপজেলা আওয়ামীলীগের আয়োজনে এ সভা হলে, সবার আগেতো দলটির 'সভপতি' হিসেবে অন্তত আমার জানার কথা ছিলো। কই, গতকালের ঈদ পুনর্মিলনীর বিষয়ে কেউতো আমাকে কোন কিছুই জানায়নি। বুলবুল ভাই নিজেওতো আমাকে একটা ফোন দিতে পারতেন?

:অথচ, আমিতো দলের সব বিষয়ে এমপি সাহেবের (বুলবুল) সাথে সর্বক্ষণ যোগাযোগ করে সকল প্রোগ্রাম সেট করি। কারণ, আমি মনে করি, এমপি সাহেব আমাদের অভিভাবক। তাই বুলবুল ভাইয়ের পরামর্শ নিয়েই আমরা সবকিছু করতে চাই। আমি সবসময়ই এমপি বুলবুল ভাইকে সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি।'

এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই জনপ্রিয় সাংসদ বাদল বলেন, 'নবীনগরে কে কতটা জনপ্রিয়, সেটি নবীনগরবাসীই সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন। আমি আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার একজন কর্মী হয়ে গত টার্মে নবীনগরে কি কি করেছি, সেটি দলমত নির্বিশেষে নবীনগরবাসি সকলেই কমবেশী অবগত আছেন। সুতরাং আমার বিশ্বাস, নবীনগরবাসী যথাসময়ে আমার সেইসব কাজের মূল্যায়ন করবেন।"

এদিকে উপজেলার রতনপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কমিটি ভেঙ্গে নতুন আহবায়ক কমিটি গঠনেরও সমালোচনা করে বর্তমান সাংসদ এবাদুল করিম বুলবুল দৈনিক বাংলা ৭১ কে বলেন, 'এটি কোনভাবেই দলীয় গঠনতান্ত্রিকভাবে করা হয়নি। এ ধরণের আকস্মিক সিদ্ধান্ত নেয়াটা ঠিক হয়নি। তাই আমি মনে করি, রতনপুরে আওয়ামীলীগের পূর্বের কমিটিই বহাল আছে।'

তবে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক সাংসদ ফয়জুর রহমান বাদল দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, "বর্ধিত সভায় জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলার শীর্ষ নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে তাঁদের কনসার্ণ নিয়ে দলীয় গঠনতন্ত্রের আলোকেই রতনপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের বিতর্কিত কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন আহবায়ক কমিটি করে দেয়া হয়েছে। পূর্বের কমিটির আর কোন অস্তিত্ব নেই।"

এদিকে কমিটি বাতিল নিয়ে দুই শীর্ষ নেতার পাল্টাপাল্টি এরকম বক্তব্য ও গতকালের ঈদ পুনর্মিলনী সভার পর বিষয়টিকে নবীনগরে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে "অশনি সংকেত" হিসেবে আখ্যায়িত করে স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন,'আগামি সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে 'বুলবুল ও বাদল গ্রুপ' আবারও নতুন করে স্পষ্টত চরমভাবে বিভক্ত হয়ে গেল!

সামনের সংসদ নির্বাচনে এ ধারা বহমান থাকলে, নবীনগরে আওয়ামীলীগের প্রতিপক্ষরাই লাভবান হয়ে হয়তো নতুন করে আবারও জাতীয় সংসদে আওয়ামীলীগ বিরোধীরাই নেতৃত্ব দিতে পারেন বলে স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা ইঙ্গিত দিচ্ছেন।

(জিডি/এসপি/জুলাই ১৩, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test