E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাণীশংকৈল ইউপি নির্বাচন

প্রতীকে আ.লীগ, স্বতন্ত্রে বিএনপি

২০২২ জুলাই ১৬ ১৫:০৯:৫০
প্রতীকে আ.লীগ, স্বতন্ত্রে বিএনপি

রাণীশংকৈল প্রতিনিধি : আনারস প্রতীকের একটি পোষ্টারে মনতাজ আলী নামে মুরব্বী ধরনের একজন মানুষের ছবি । তার পাশেই লেখা রয়েছে সভাপতি ৩নং হোসেনগাঁও ইউপি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল(বিএনপি)। ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন পরিষদের(ইউপি) নির্বাচনে ঠিক এভাবেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন বিএনপি’র মূল ধারার সংগঠনের নেতারা। অথচ বিএনপির নীতি-নির্ধাকরা বলছেন এ সরকারে অধীনে কোন নির্বাচনে বিএনপির কেউ অংশগ্রহণ করবে না। এদিকে তিনটি ইউনিয়নে বিএনপির মূল ধারার নেতারাই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন। এতে প্রচার প্রচারণায় নামছেন বিএনপির ওয়ার্ড পযায়ের নেতারাও। প্রতিকে নির্বাচন না করলেও স্বতন্ত্রে তারা নির্বাচনে কোমর বেধেঁ নেমেছেন।অন্যদিকে দলীয় প্রতিকে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করছেন আ’লীগের নেতারা।

উপজেলা নির্বাচন অফিস ও দলীয় সুত্রে জানা গেছে, তিনটি ইউনিয়নে আ’লীগের দলীয় প্রতিকে নির্বাচন করছেন ৩ নং হোসেনগাঁও ইউনিয়নে, ইউনিয়ন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি,৮নং নন্দুয়ার ইউনিয়নে ইউনিয় আ’লীগের যুগ্ন সম্পাদক আব্দুল বারী,৫নং বাচোর ইউনিয়নে ইউনিয়ন আ’লীগের সম্পাদক জিতেন্দ্র নাথ রায়। অন্যদিকে ৩ নং হোসেনগাঁও ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি এমজি রব্বানী ঘোড়া প্রতিক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করছেন। দলীয় প্রতিকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করায় তাকে সম্প্রতি দল থেকে বহিস্কার করেছে জেলা আ’লীগ।

এদিকে বিএনপি দলীয় প্রতিকে অংশ গ্রহণ না করলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে চেয়ারম্যান পদে নেমেছেন কোমর বেধেঁ। ৩ নং হোসেনগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির ইউনিয়ন শাখা সভাপতি মমতাজ আলী আনারস প্রতিকে ভোট করছেন। ৫ নং বাচোর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির ইউনিয়ন শাখা সভাপতি আবু জাহিদ ঘোড়া প্রতিকে এবং ৮ নং নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির ইউনিয়ন শাখা সভাপতি জমিরুল ইসলাম মোটরসাইকেল ও সাংগঠনিক সম্পাদক বাদশাহ আলম আনারস প্রতিকে তাদের সমর্থিত নেতাকর্মিদের নিয়ে ভোটের মাঠে রয়েছেন।

অন্যদিকে ৩ নং হোসেনগাঁও ইউনিয়নে স্বতন্ত্র হিসাবে চেয়ারম্যান পদে সুজন মুর্মূ চশমা প্রতিকে, ৮নং নন্দুয়ারে জামায়াত সমর্থিত মাওলানা সহিদুল্লাহ ঘোড়া প্রতিকে বাচোর ইউনিয়নে জাতীয় পার্টি সমর্থিত আজিজুল ইসলাম মোটরসাইকেল ও আকতারুল ইসলাম ঘোড়া প্রতিকে নির্বাচন করছেন। এছাড়াও স্বতন্ত্র ভোট করছেন জৌতিষ চন্দ্র রায় চশমা প্রতিকে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিএনপির ওয়াড পযায়ের নেতারা তাদের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা করছেন। তারা বলছেন,স্থানীয় নির্বাচনে আমরা স্বতন্ত্র অংশ গ্রহণ করেছি। এখানে দলীয়ভাবে তো আর করিনি। স্থানীয় নির্বাচনে কোন দল নেই। আমাদের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে তাই আমরা কাজ করছি। হোসেনগাঁও ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শান্ত বলেন, আমাদের স্থানীয় ভোটারদের মনোনীত প্রার্থী মনতাজ আলীর পক্ষে আমরা কাজ করছি। আমরা কোন দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছি না। তাছাড়া দলীয়ভাবে যেহেতু বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেনি। তাই আমরা পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছি।

নন্দুয়ার ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও চেয়ারম্যান প্রার্থী জমিরুল ইসলাম বলেন, আমি গতবার দলীয় প্রতিকে নির্বাচন করে বিজয় লাভ করেছিলাম। এবারে দল নির্বাচন করছে না। তবে স্থানীয় সমর্থকদের চাপের কারণে তাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করতে হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন,দলের তেমন কোন চাপ নেই।

হোসেনগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও চেয়ারম্যান প্রার্থী মনতাজ আলী বলেন, সাধারণ মানুষের চাহিদার কারণে তিনি ভোটে দাড়িয়েছেন। বিএনপির নেতাকর্মিদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও তার জন্য প্রচারণায় অংশ গ্রহণ করছেন।

বাচোর ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি ও চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু জাহিদ বলেন, ভোটে অংশ গ্রহণ করেছি স্থানীয় কারণে এখানে দলের কোন হিসাবে নেই। দল এ বিষয়ে কোন সহায়তা তিনাকে করছেন না বলে তিনি জানিয়েছেন।

নৌকা প্রতিকের হোসেনগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী মতিউর রহমান বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন। তবে স্বতন্ত্রভাবে, তা যেভাবে নির্বাচন করছে করুক একটি অংশগ্রহণ মূলক সুষ্ঠ নির্বাচন হোক এটাই আমার চাওয়া।

নৌকার নন্দুয়ার ইউনিয়নের আব্দুল বারী ও বাচোর ইউনিয়নের জিতেন্দ্র নাথ বলেন,বিএনপি মুখে বলে নির্বাচন করবো না । কিন্তু ইউনিয়ন পযায়ের মুল ধারার নেতারা স্বতন্ত্রে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছে। তাদের দলীয় নেতাকর্মিরাও কাজ করছে। বিএনপি নির্বাচনে এসেছে ভোট করছে এটা আমাদের ভালো লাগছে। আমরা তাদের সাধূবাদ জানাই, এবং একটি অবাধ সুষ্ঠ ভোট অনুষ্ঠিত যেন হয় সেই জন্য তাদেরও সহায়তা চান নৌকার এ প্রার্থীরা।

উপজেলা নির্বাচন অফিস সুত্রে জানা যায়, তিনটি ইউনিয়নে মোট ১৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী অংশ গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে আ’লীগের মনোনীত নৌকা প্রতিকের তিনজন, অন্য ১২ জন প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসাবে নির্বাচন করছে। তিনটি ইউনিয়নে সাধারণ মহিলা আসনে মোট প্রার্থী ৪৫ জন এবং সাধারণ আসনে ৮৭ জন অংশ গ্রহণ করেছেন। তিনটি ইউনিয়নে মোট ভোটার ৬১ হাজার ১৪৮ জন। ভোট গ্রহণ হবে আগামী ২৭ জুলাই।

উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বকুল মজুমদার বলেন, কেউ দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেনি। তবে দলের কেউ স্থানীয় কারণে ভোটে অংশ গ্রহণ করলে তার দায় দায়িত্ব সে নিবে। দল কোনভাবেই ওই প্রার্থীর কোন দায়িত্ব নেবে না। ওয়ার্ড পযায়ের নেতারা সক্রিয়ভাবে অংশ নিলেও তারা দলীয় ব্যানারে অংশ গ্রহণ করতে পারবে না। এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এ নেতা আরো বলেন, কেউ তার নির্বাচনী পোষ্টারে দলের পরিচয় লেখলে সেটির সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ।

উপজেলা আ’লীগের অন্যতম সদস্য তারেক আজিজ বলেন, বিএনপি দলীয়ভাবে অংশ গ্রহণ না করলেও স্বতন্ত্রভাবে দলবল নিয়ে ভোটের মাঠে রয়েছেন। এবং তারা বিএনপির প্রার্থী এ হিসাবে বিএনপি সমর্থকদেরও নিকটও ভোট প্রার্থনা করছেন। তাদের ওয়ার্ড পযার্য়ের নেতারা কোমর বেধেঁ নির্বাচনে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন, এ জন্য তাদের সাধুবাদ জানাই। তবে পানি ঘোলা করে না খেয়ে পরিস্কার পানি খেলে জনগণও ভালোভাবে নিতো। দু-নীতির কারণে জনগণের কাছে তারা প্রতারক হিসাবে চিণ্হিত হয়েছে।

(কেএস/এসপি/জুলাই ১৬, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test