E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চামড়া পাচারে সক্রিয় ভারতীয় সিন্ডিকেট

২০১৪ অক্টোবর ০৪ ১০:৪০:৫৭
চামড়া পাচারে সক্রিয় ভারতীয় সিন্ডিকেট

নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরসহ উত্তরাঞ্চলে আসন্ন কোরবানির ঈদকে ঘিরে ভারতীয় চামড়া বাণিজ্য সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই কোটি কোটি টাকার অর্থলগ্নি করেছেন এই অঞ্চলে। এবারো কোরবানির ঈদের চামড়ার ৮০ ভাগই সীমান্ত চোরাচালানিদের দখলে চলে যাওয়ার শঙ্কায় দিশেহারা স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। সরকারি তরফে এ বিষয়ে কোনো কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় সিন্ডিকেটটি এখন বেপরোয়া বলে জানিয়েছেন সংশি¬ষ্টরা।

তার ওপর ঢাকা নাটোরসহ দেশের ট্যানারিগুলোতে ৪০০ কোটিরও বেশি টাকার পাওনা ও ব্যাংকঋণ না পাওয়ায় অস্তিত্ব সঙ্কটেও আছেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে গত ছয় বছরের ব্যবধানে এই অঞ্চল থেকে ছয় হাজার চামড়া ব্যবসায়ী ব্যবসা বদল করে অন্য ব্যবসায় নেমেছেন। চামড়া শিল্পকে ঘিরে এই অঞ্চলে অর্থনীতির যে মজবুত ভিত্তি রচিত হয়েছিল তা এখন ম্রিয়মাণ। ট্যানারি, গরুর খামারি ও চামড়া ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, গত বছর নাটোর, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় সপ্তাহে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার পিস গরু ছাগলের-চামড়ার বেচাকেনা হতো। আর এসব চামড়া রফতানিসহ বাজারজাতকরণের কাজ শুরু হয় কোরবানির ঈদের মাসখানেক আগে থেকে। এই হিসেবে প্রতি কোরবানির ঈদকে ঘিরে এই অঞ্চলে ৩৭ থেকে ৪০ লাখ পিস চামড়া নিয়ে গড়ে ওঠে ‘চামড়া বাণিজ্য’। সেন্টার ফর স্ট্যাটিসটিকস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিএসডি) এবং চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে প্রকাশ, এই অঞ্চলে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ১৫ হাজার ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এই ব্যবসায় সরাসরি জড়িত। পাশাপাশি রয়েছে ভারতীয় চোরাচালানিদের বিশাল সিন্ডিকেট, ফরিয়া, দালালসহ প্রায় লাধিক শ্রমিক। কোরবানির ঈদ-পরবর্তী প্রায় এক মাস তারা ব্যস্ত থাকেন এই চামড়া নিয়ে।

সূত্র জানায়, এ বছর এই অঞ্চলে প্রতিদিনই গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার চামড়ার বেচাকেনা হচ্ছে। কোরবানির দিন এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে বহু গুণ। বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস ম্যানুফেকচারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএলএলএমইএ) সূত্রে জানা গেছে, গত বছর কোরবানির ঈদে প্রায় ৪৫ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ হয়েছিল। এ বছর এর পরিমাণ অর্ধকোটি পিসে দাঁড়াবে। এর মধ্যে শুধু কোরবানিকে ঘিরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নাটোর আড়ত, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চল থেকেই সংগ্রহ হবে প্রায় ১৫ লাখ পিস।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ছয় বছর ধরে উত্তরাঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে লাগামহীনভাবে চামড়া পাচারের কারণে এই অঞ্চল থেকে দেশীয়ভাবে চামড়া সংগ্রহের হার দিনকে দিন কমছে। এই পেশায় জড়িত ব্যবসায়ীরা পাওনা টাকা না পাওয়া ও ভারতীয় চোরাকারবারিদের সাথে পেরে উঠতে না পেরে পেশা বদল করছেন। উত্তরাঞ্চলের ব্যবসায়ীদের এ রকম নড়বড়ে অবস্থার সুযোগ নিচ্ছে ভারতীয় মহাজনেরা। সীমান্ত সূত্র জানায়, সঙ্ঘবদ্ধ ভারতীয় সিন্ডিকেটটি উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি, নাগেশ্বরী, বড়াইবাড়ি, লালমনিরহাটের মোগলহাট, পাটগ্রাম, বড়খাতা, নীলফামারীর ডোমার, চিলাহাটি, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া, দেবীগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওয়ের রুবিয়া, দিনাজপুরের হাকিমপুর, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, হিলি, রাজশাহীর গোদাগাড়ি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ, শিবগঞ্জ, ভোলাহাটসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পাচার হয়ে যাবে চামড়া ভারতে।

বিশেষ করে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের ওপর ভারতের কুচবিহার জেলার ভারতীয় সিটমহলগুলো দিয়ে অবাধে বাধাহীনভাবে চামড়া চলে যায় ভারতে। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর দাসিয়ারছড়া ছিটমহলে সরেজমিন পরিদর্শনে জানা গেছে, ঈদের দিন থেকে রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথেই চোরাকারবারি চক্রটি সক্রিয় হয়ে উঠবে। পরবর্তী এক মাস ভোর পর্যন্ত চলবে চামড়া পাচারের মহোৎসব। মাথায়, রিকশা, সাইকেল, ভ্যান, ঘোড়া গাড়িসহ বিভিন্ন বাহনে চামড়া নিয়ে সীমান্তের ওপারে নিয়ে যাওয়া হয়। এ জন্য চোরাকারবারিরা এখন থেকেই জনবল সেটিং ও অর্থ ডিস্ট্রিবিউশনের কাজ করছেন। রংপুরের চামড়ার ফড়িয়া ব্যবসায়ী (দালাল) আব্দুল হাকিম জানান, সীমান্তে বিজিবি পুলিশসহ স্থানীয় নেতাদের চুঙ্গির টাকা দিয়েই চামড়া ভারতে চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা প্রতি বর্গফুট কেনে ১০-১৫ টাকা বেশিতে। আমরা যেখানে লাভ বেশি পাবো সেখানেই ব্যবসা করব। রংপুর চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী জানান, এই অঞ্চলের প্রকৃত চামড়া ব্যবসায়ীরা হাত গুটিয়ে বসে আছেন। এই সুুযোগ কাজে লাগিয়ে ঈদুল আজহার মাসখানেক আগে থেকেই ভারতীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা এই অঞ্চলে কোটি কোটি টাকা ছিটিয়ে এজেন্ট নিয়োগ করেছেন। তারা হাটে-বাজারে ফড়িয়া দালালদের মাধ্যমে আগাম টাকা দিচ্ছেন এ দেশীয় এজেন্টদের। শুধু কোরবানির সাত দিনেই এ বছর পাঁচ থেকে সাত লাখ পিস চামড়া চোরাকারবারিরা সীমান্ত গলিয়ে ভারতে নিয়ে যাওয়ার সব বন্দোবস্ত করেছে। রংপুর চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল লতিফ খান বলেন, সরকারের উদ্যোগহীনতার কারণে এ বছরও সীমান্ত গলে পাশের দেশগুলোতে চামড়ার ৮০ ভাগই পাচার হয়ে যাবে। রংপুর চামড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি হারুন অর রশিদ জানান, সরকার বড় বড় ট্যানারিকে কোটি কোটি টাকা ব্যাংকঋণ দেয়। কিন্তু চামড়া ব্যবসায়ীদের কোনো ঋণ দেয়া হয় না। আমি ব্র্র্যাক ব্যাংকের কাছে ১০ লাখ টাকা ঋণের জন্য দেনদরবার করে ব্যর্থ হয়েছি। রাজশাহী জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্র“পের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওহাব বলেন, চামড়া কেনার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। কিন্তু চোরাকারবারিদের কারণে আমরা আছি হতাশায়। ব্যাংকঋণ পেতেও হচ্ছে ঝুক্কিঝামেলা।

(এমআর/অ/অক্টোবর ০৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test