E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শৈলকূপায় তৃণমূল আ.লীগ বলতে কিছু নেই, আছে এমপি হাইলীগ!

২০২২ জুলাই ১৮ ১৫:৪৯:৪৪
শৈলকূপায় তৃণমূল আ.লীগ বলতে কিছু নেই, আছে এমপি হাইলীগ!

স্টাফ রিপোর্টার, শৈলকূপা থেকে ফিরে : শৈলকূপার তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উপর আস্থা নেই ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য আব্দুল হাইয়ের। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অঙ্গীকার পরিপন্থী হয়ে এদেশে বসবাস করার সব রকম যোগ্যতা হারিয়েছে, সেসব চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ, লুটেরা, সুবিধাবাদী ও হাইব্রিডদের সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।। তিনি এলাকার রাজনৈতিক আর্থসামাজিক সাংস্কৃতিক ধর্ম ও মনোজগতকে অন্তঃসারশূন্য করে দিয়েছে যা ক্ষমতার রঙিন চশমা পরে দেখলে বুঝা যাবে না।

তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন সম্প্রীতি, সহমর্মিতা, মানবিক মর্যাদা ও মূল্যবোধের চরমতম অবক্ষয় ঘটেছে আমাদের এলাকায়। এমপি সাহেবের কারো প্রতি কোন আস্থা নেই। বিশ্বাস নেই। পরমতসহিষ্ণুতা, সহনশীলতা ও সৌজন্যবোধ লোপ পাচ্ছে। এসব কিছুর মূলে রয়েছে অবাধ ও অনৈতিক অর্থনৈতিক লিপ্সা ও অবারিত ক্ষমতা। রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক ক্ষমতার যে অবস্থানে রয়েছেন, তিনি যেন ধরাকে সরাজ্ঞান করে সেটির একচ্ছত্র মালিক-মোক্তার হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছেন। এলাকার বিভিন্ন সেক্টরে এতো এতো সাগরসম দুর্নীতি ও লুটপাট হচ্ছে। ভুয়া প্রকল্পের নামে অর্থ আত্মসাত, কমিশন ও ঘুষের সাথে জড়িতদের আশ্রয় প্রশ্রয় ও নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে।

প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক আবেদ আলী জানান, দেশের জনগণ একবাক্যে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন চান। সরকার সেই উন্নয়নে দায়বদ্ধ। আর অল্প কিছু উন্নয়ন করে আব্দুল হাইয়ের আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তোলার কোনো মানে নেই। সে তো নিজের পকেট থেকে অর্থ ব্যয় করে উন্নয়ন করছেন না। উন্নয়নের নামে ১ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয় ১০ কোটি দেখাচ্ছে সে, ১০ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয় ১০০ কোটি টাকা দেখানো হচ্ছে, ২০ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয় ২০০ কোটি টাকা দেখনো হচ্ছে। এরকম শত শত প্রকল্পের নামে হরিলুট করছে এমপি আব্দুল হাইসহ তার নিজস্ব কিছু মানুষ। যারা কখনোই প্রকৃত আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল না। এজন্যই সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাট করছে আব্দুল হাই ও তার অনুসারীরা। হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে সে সুইস ব্যাংক, আমেরিকা, কানাডা, সিঙ্গাপুর, দুবাই, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে এবং সে-বিষয়ে দুদকসহ সরকারের যেনো কোনো মাথাব্যথা নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী বিএনপি-জামায়াত ও জাতীয় পার্টির সরকারের অনুসৃত পথ অনুসরণ করে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদানকারী আওয়ামী লীগ কর্তাব্যক্তিরা প্রকৃত আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে দূরে সরিয়ে দিয়ে অর্থের বিনিময়ে রাজাকার ও দুর্নীতিবাজ পরিবারের সদস্যদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ ও পদোন্নতি দিয়ে তাদেরকে আরো পরিপুষ্ট করে দিয়েছে আব্দুই হাই।

তিনি আরও জানান, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বপ্রদানকারী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের আজ কী অবস্থা। বলা চলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব এখন প্রকৃত আওয়ামী লীগারদের হাতে নেই। আওয়ামী লীগের জেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত নেতৃত্বের সিংহভাগ এখন অ-আওয়ামী লীগারসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী দুর্নীতিবাজ লুটেরা, সমাজবিরোধী, জামায়াত-শিবির, জাতীয় পার্টি, বিএনপি-ফ্রিডম পার্টি তথা সুবিধাবাদীদের হাতে।

সে তার নির্বাচনী এলাকায় আত্মীয়স্বজন ও মতাবলম্বীদের দিয়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনকে সাজিয়ে এমপি-লীগ সৃষ্টি করেছেন। তাই বলা চলে, তৃণমূলে আওয়ামী লীগ বলতে কিছু নেই, আছে এমপি হাইলীগ।

জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নায়েব আলী জোয়ার্দার জানান, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বপ্রদানকারী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের আজ কী অবস্থা। বলা চলে শৈলকূপায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব এখন প্রকৃত আওয়ামী লীগারদের হাতে নেই। আওয়ামী লীগের জেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত নেতৃত্বের সিংহভাগ এখন অ-আওয়ামী লীগারসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী দুর্নীতিবাজ লুটেরা, সমাজবিরোধী, জামায়াত-শিবির, জাতীয় পার্টি, বিএনপি-ফ্রিডম পার্টি তথা সুবিধাবাদী-

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীদের জায়গা করে দিয়েছে আব্দুল হাই । প্রকৃত আওয়ামী পরিবারকে দূরে সরিয়ে দিয়ে অর্থের বিনিময়ে রাজাকার ও দুর্নীতিবাজ পরিবারের সদস্যদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ ও পদোন্নতি দিয়ে তাদেরকে আরো পরিপুষ্ট করে দিয়েছে এমপি আব্দুল হাই।

তৃণমূলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক নেতাকর্মী জানান, স্থানীয় এমপি আব্দুল হাই জনবিচ্ছিন্ন নেতাদের কাছ থেকে এক থেকে দেড় কোটি টাকা নিয়ে তাদের নৌকা উপহার দিয়ে চেয়ারম্যান বানিয়েছেন। প্রকৃত আওয়ামী লীগাররা তো এমপিকে টাকা দিতে পারেনি বা দেয়নি, ফলে তারা দলীয় মনোনয়ন পায়নি।যখনই আবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আসে, একই দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রক্রিয়ায় পর্দার অন্তরালে চলে মনোনয়ন বাণিজ্যের কারসাজি। এই হলো শৈলকূপা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের একটি চিত্র। এমপি আব্দুল হাইয়ের কবলে পড়ে স্থানীয়ভাবে যাবতীয় উন্নয়নের নামে এমপির বশংবদগোষ্ঠী সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট, অনাচার, মাদকব্যবসা, সন্ত্রাসসহ এমপি-রাজত্ব সৃষ্টি করেছেন! তৃণমূলে আওয়ামী লীগ বলতে এখন ঐ এমপি-লীগ দৃশ্যমান আওয়ামী লীগ নয়।

এ সকল অভিযোগ অভিযোগ অস্বীকার করে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য আব্দুল হাই জানান, আমার প্রতিপক্ষরা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমার নিজস্ব কোন গ্রুপ নেই।যারা ধনাঢ্য ব্যক্তি আছে তাদের নিয়ে নিউজ করেন আমার মত গরীব মানুষকে নিয়ে নিউজ করে আপনাদের লাভ নেই। আমি কখনোই কোন ধরনের মনোনয়ন বাণিজ্যের সাথে জড়িত না।আর মনোনয়নের নামে যে টাকা খাওয়া যায় সেটাও আমি জানিনে।

(একে/এসপি/জুলাই ১৮, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test