E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাংবাদিকদের সঙ্গে নবীনগর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের ‘আকস্মিক’ দুটি মতবিনিময় সভা!

২০২২ আগস্ট ০১ ১৬:৪৪:১১
সাংবাদিকদের সঙ্গে নবীনগর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের ‘আকস্মিক’ দুটি মতবিনিময় সভা!

গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ কান্তি কুমার ভট্টাচার্য মহিলা কলেজটির সামগ্রিক পরিবেশ ও শিক্ষার যথাযথ মান উন্নয়নে দলমত নির্বিশেষে সকলের সুপরামর্শ, আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সহযোগিতা চেয়েছেন। গতকাল রবিবার স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে সকাল বিকেল দুই পর্বে দুটি পৃথক মতবিনিময় সভা করে সাংবাদিক সমাজের মাধ্যমে তিনি এ সহযোগতিতা চান। কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের ১০ বছর পূর্তিতে তিনি গতকাল 'আকস্মিক' ভাবে স্থানীয় সাংবাদিকদের মহিলা কলেজে আমন্ত্রণ জানিয়ে পৃথক পৃথকভাবে ওই দুটি মতবিনিময় সভা করেন।

নবীনগরে সাংবাদিকদের পাঁচ পাঁচটি সংগঠনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সঙ্গে শতাধিক সাংবাদিক যুক্ত থাকায় একটি বৈঠকে সকল সাংবাদিকদের স্থান সংকলুন না হওয়ার কারণেই মূলত দুই পর্বে (সকাল বিকাল) সাংবাদিকদের সঙ্গে ওই দুটি পৃথক মতবিনিময় সভা করতে হয়েছে বলে জানান স্বয়ং অধ্যক্ষ।

অধ্যক্ষ কান্তি কুমার ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বলেন, 'আমরা শিক্ষার মান উন্নয়ন নিয়ে সভা সেমিনারে অনেকেই অনেক পরামর্শ, উপদেশ দিয়ে থাকি। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে সেইসব পরামর্শ কিংবা উপদেশগুলো কতটা কাজে লাগাতে পারি, বা পেরেছি সেটি নিজেদেরকে একবার প্রশ্ন করলেই হয়তো সহজে সেই উত্তরটা পেয়ে যাবো। তাই নবীনগর মহিলা কলেজের সামগ্রিক পরিবেশ ও শিক্ষার মান উন্নয়ন সত্যিকার অর্থে যথাযথভাবে কি করে বাস্তবায়ন করা যায়, আজ আমি আপনাদের কাছ থেকে তার একটি সুনির্দিষ্ট তথ্য উপাত্তের আলোকে দিক নির্দেশনা চাই। সেজন্য আমি আপনাদের মাধ্যমে এখানকার অভিভাবকসহ দলমত নির্বিশেষে সকলের উপদেশ, সুপরামর্শ ও আন্তরিক সহযোগিতা চাই।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ বলেন, 'নবীনগর মহিলা কলেজটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় কলেজ, এতে কোন সন্দেহ নেই।তবে নানা কারণে হয়তো আমরা অতীতে কলেজটির সামগ্রিক উন্নয়নে 'যথাযথ' পদক্ষেপ নিতে পারিনি। তবে আগামি দিনে সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় কলেজটির সার্বিক উন্নয়নে যথাযথ উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারলে, কলেজটির ভবিষ্যৎ উজ্জল থেকে উজ্জলতর হবে, এটি আমি হলফ করে বলতে পারি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'হ্যাঁ, আমরা হয়তো আমাদের কাংখিত জায়গায় গত ২৫ বছরে কলেজটিকে নিয়ে যেতে পারিনি। কিন্তু চেষ্টা করেছি। তবে কাংখিত লক্ষে নিতে গেলে সেজন্য আমাদেরকে আরও কাজ করতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে।

স্পষ্টভাষী খ্যাত এই অধ্যক্ষ রাখঢাক না রেখেই বলেন, 'কলেজের ভেতরে ক্যান্সারের কিছু জীবানু রয়ে গেছে। সেগুলো কমছে না। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে মনে হয় বাড়ছে। কলেজের স্বার্থে এসব সম্মিলিতভাবে আমাদেরকে দূর করতে হবে। সেজন্য আপনাদের সকলের সহযোগিতা লাগবে।

দশ বছর দায়িত্ব পালনের নানা অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে কলেজ অধ্যক্ষ বলেন, 'অনেক সময় ইচ্ছে থাকা স্বত্বেও অনেক কাজ করতে পারিনি, পারছিওনা। কারণ বিগত দিনে আমি এই মহিলা কলেজে দেখিনি কোন পলিটিক্যাল সাপোর্ট, দেখিনি কোন প্রশাসনিক সাপোর্ট। বিশ্বাস করুন, এই প্রয়োজনীয় সাপোর্টগুলো যদি আমি পেতাম, তাহলে এই কলেজটা হয়তো আরও অন্যরকম হতে পারতো। তবে আমি আমার দশ বছরের দায়িত্ব পালনকালে কলেজের সামগ্রিক উন্নয়নে বহু দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করার সাধ্যমত চেষ্টা করেছি।

তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর সরকারিভাবে প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত কলেজের পশ্চিম সীমান্তে দ্বিতল ভবন, বঙ্গবন্ধু মঞ্চ, শহীদ মিনার নির্মাণ ছাড়াও কলেজের নিজস্ব ফান্ড থেকে কলেজের মার্কেট নির্মাণসহ ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা আমরা কলেজের সামগ্রিক উন্নয়নে ব্যায় করেছি।

অধ্যক্ষ বলেন, 'কলেজ প্রতিষ্ঠার পর শুরুর দিকে প্রতি বছর কলেজের শিক্ষক কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া বাবদ ৫ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা দেয়া হলেও, বর্তমানে আমার আমলে কলেজের ৩৯ জন শিক্ষক কর্মচারীর বাড়ি ভাড়া বাবদ প্রতি বছর কলেজের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩২ লাখ টাকা আমাদেরকে ব্যয় করতে হচ্ছে।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত একজন সহকারি অধ্যাপক কাম সাংবাদিক বলেন, 'কলেজের এত উন্নয়ন ও এত ভালো ভালো পদক্ষেপ গ্রহণের পরও আমি আমার মেয়েটিকে অত্র কলেজে ভর্তি হতে দেইনি। কেন দেইনি, আমার বিশ্বাস, সেই কারণগুলো অধ্যক্ষ মহোদয় কমবেশী নিশ্চয় জানেন। আমার প্রশ্ন, সেই অজানা কারণগুলো এখনও আছে ?

এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে অধ্যক্ষ কান্তি কুমার ভট্টাচার্য অনেকটা কৌশল করে বলেন, 'সেগুলো তো দেখার দায়িত্ব আপনাদেরও (সাংবাদিক) রয়েছে। আমি মনে করি, সেগুলো সাংবাদিকদের চোখ দিয়েও দেখা উচিৎ। কারণ এটিতো আপনাদেরই কলেজ। আপনারা সেগুলো দেখলে, কলেজেরই উপকার হবে, মঙ্গল হবে। আসলে আমরা যারা শিক্ষকতা করি, আমাদের প্রত্যকের মানসিকতা কিন্তু এক নয়। আবার প্রত্যেকে শিক্ষক হওয়ারও উপযোগী শিক্ষকও নই আমরা।

কলেজের কিছু অভ্যন্তরীণ সমস্যার কথা স্বীকার করে অনেকটা দু:সাহস করে অধ্যক্ষ বলেন, 'এসব সমস্যা কমবেশী সব জায়গাতেই আছে। দেখুন, কলেজটি সৃষ্টি হয়েছে ২৫ বছর। আর আমি আছি ১০ বছর। সুতরাং ২৫ বছর আগে লাগানো গাছগুলোকে আমি তো চেষ্টা করলেও একা নাড়াতে পারবো না। এসব গাছ নাড়াতে হলে, অবশ্যই সামাজিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতা লাগবে।'

এদিকে একটি সার্বজনীন কলেজে নৌকার আদলে 'বঙ্গবন্ধু মঞ্চ' নির্মাণ করা কতটা যৌক্তিক হয়েছে এবং সরকার বদল হলে এই বঙ্গবন্ধু মঞ্চ আদৌ রাখা যাবে কি? একজন উপস্থিত সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ইতিহাসের ছাত্র অধ্যক্ষ কান্তি ভট্টাচার্য সুস্পষ্টভাবে বলেন, 'আমি একজন ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে বলতে পারি, আমরা যে যেই দলই করি না কেন কিংবা যেই আদর্শেই চলি না কেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদের জাতির পিতা। সুতরাং জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই আমরা এটি নির্মাণ করেছি। আমরা মনে করি, কলেজ ক্যাম্পাসে জাতির জনকের নৌকা প্রতীকের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু মঞ্চ কৈরী করে আমরা বঙ্গবন্ধুর প্রতি কিছুটা হলেও ঋণ শোধ করতে পেরেছি। আর এটিই আমার কাছে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বলেও মনে করছি। মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের নানা সুস্বাদু ব্যতিক্রমী আইটেমে আপ্যায়িত করা হয়।

(জিডি/এসপি/আগস্ট ০১, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test