E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বলাইশিমুলে আশ্রয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মাঠ রক্ষার আন্দোলন চরমে

২০২২ আগস্ট ১৪ ১৭:৪৭:৫৬
বলাইশিমুলে আশ্রয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মাঠ রক্ষার আন্দোলন চরমে

সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া : নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল ইউনিয়নের বলাইশিমুল মাঠের পাশে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার আশ্রয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মাঠ রক্ষার আন্দোলন এখন চরমে পৌছেছে। উপজেলা প্রশাসন মাঠের পাশে সর্বশেষ ১২টি ভূমি ও গৃহীন পরিবারের জন্য আধাপাকা ঘর নির্মানের কাজ প্রায় শেষ করেছেন। 

অপরদিকে মাঠের পার্শ্ব থেকে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর অন্যত্র স্থানান্তরের প্রতিবাদে মাঠ রক্ষা আন্দোলনকারীরা জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকার শাহবাগ, ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব ও মাঠ প্রাঙ্গণে দফায় দফায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। উপজেলা প্রশাসন ও মাঠ রক্ষা আন্দোলনকারীরা যার যার অবস্থানে থেকে অনঢ়। এ নিয়ে হচ্ছে মামলা মোকদ্দমাও। রোববার দুপুরে আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন এস.এ.এম রফিকুন্নবী অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ময়মনসিংহ রাজস্ব।

গত ১২ আগস্ট শুক্রবার রাত অনুমান সাড়ে ৪টার দিকে আশ্রয়ন প্রকল্পের ৭ ও ৮ নাম্বার নির্মাধীন ঘরে পাট কাটি ও পাট দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় দূর্বৃত্তরা। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। আগুনে টিন ও কাঠ পুড়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়। আগুন নিভাতে গিয়ে পুলিশের সদস্য আব্দুর রব আহত হন।

এদিকে আগুন দিয়ে অগ্নি সংযোগ করে সরকারের সম্পত্তি বিনষ্ট করার অপরাধে কেন্দুয়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এস.এম মেশকাতুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলার এজাহারে ৬৩ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাতনামা আরো ১৫/২০ জনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে শনিবার কেন্দুয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে জনি মিয়া, জাহাঙ্গীর আলম, আল-আমিনকে গ্রেফতার করে রোববার দুপুরে নেত্রকোণা আদালতে পাঠিয়েছে।

গত ২৮ মে বলাইশিমুল গ্রামের একটি অংশের লোকজন মাঠ রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে। তারা মাঠ থেকে আশ্রয়ন প্রকল্প অন্যত্র সরিয়ে নিতে উপজেলা প্রশাসনের নিকট জোর দাবী রাখেন । পরদিন ২৯ মে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ওই মাঠে এলাকাবাসিকে নিয়ে একটি সমঝোতা মিটিং হয়। ওই মিটিংয়ে মাঠ রক্ষা করে আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মানের কথা চূড়ান্ত হলেও পরে এ কথার আর বাস্তবায়ন হয়নি। গ্রামবাসীর পক্ষে ৩০ মে নেত্রকোণা সহকারি জজ আদালতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ ৪ জনকে বিবাদী করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার শুনানী শেষে খারিজ করে দেয় আদালত। ২ জুন রাতে দূর্বৃত্তরা আশ্রয়ন প্রকল্পের নির্মাধিন কাজ ভাংছুর করলে পরদিন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের উপসহকারি প্রকৌশলী কাজী মাজহারুল ইসলাম বাদী হয়ে বলাইশিমুল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর তালুকদার মল্লিক ও সাবেক মেম্বার হায়দার আহমেদ তালুকদারকে বিবাদী করে অন্তত ৪০ জনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা বেগম জানান, ওই মাঠের পরিমান ১ দশমিক ৮৭ একর। এর মধ্যে ৭৬ শতাংশ জমি বেদখল ছিল। প্রশাসনের মাধ্যমে ওই জমি উদ্ধার করে ৪৬ শতাংশ জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ওই জমিতে ২৩টি ঘর নির্মান কাজ শুরু হয়। জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানান, মাঠের সুন্দর্য্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২৩টি ঘরের পরিবর্তে ১২টি ঘর নির্মান কাজ চালিয়ে যাওয়া হয়।

তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মতেই মাঠ রক্ষা করেই মাঠ প্রাঙ্গণে নির্মান করা হচ্ছে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের স্বপ্নের ঠিকানা। মাঠ রক্ষা করেই চলছে আশ্রয়ন প্রকল্পের নির্মানকাজ। মাঠও রক্ষা হচ্ছে এবং ভূমিহীনদের স্বপ্নের ঠিকানাও হচ্ছে। মাঠ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়কারী আবুল কালাম আল আজাদ তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন মাঠ রক্ষা আন্দোলনকারীদের হেনস্তা করতেই পরিকল্পিতভাবে ভাংছুর ও আগুন দিয়ে নিরিহ ও শান্তিপ্রিয় লোকদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। মাঠ থেকে প্রকল্প স্থানান্তরের দাবির কারণেই উপজেলা প্রশাসন গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি মাঠ রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

কেন্দুয়া থানার ওসি মোঃ আলী হোসেন পিপি এম বলেন, আশ্রয়ন প্রকল্প ভাংছুর ও আগুন দেয়ার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। সর্বশেষ ৬৩ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাতনামা আরো ১৫/২০ জনকে আসামী করে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। কোন গণ গ্রেফতার নয়, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মাঠ রক্ষা ও প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি সহ দুষ্কিৃতকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি করছে এলাকাবাসী ও আওয়ামীলীগের নেতারা।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নূরুল ইসলাম ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক পৌর মেয়র মোঃ আসাদুল হক ভূঞা বলেন, এটা মাঠ রক্ষার আন্দোলন নয়, সরকার বিরোধী আন্দোলন। মাঠ রক্ষা করেই আশ্রয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

(এসবি/এসপি/আগস্ট ১৪, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test