E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

১২ বছর ধরে শিকলে বন্দী মানসিক প্রতিবন্ধী মিলন

২০২২ আগস্ট ১৪ ১৯:০১:০৮
১২ বছর ধরে শিকলে বন্দী মানসিক প্রতিবন্ধী মিলন

আবু নাসের হুসাইন, সালথা : দরিদ্র দিমজুরের ১৬ বছর বয়সি ছেলে মিলন শরিফ। জন্মের বছর তিনেক পর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রথমে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। কিছুদিন পর বন্ধ হয়ে যায় তার কথা বলা। স্বভাবিক চলাচলেও দেখা দেয় নানা সমস্যা। শিশু সন্তানদের এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় অসহায় বাবা-মাকে। পরে বাধ্য হয়ে নিজ সন্তানের পায়ে লোহার শিকল আর তালা দিয়ে বেঁধে রাখতে শুরু করেন তারা।

এরপর থেকে গত ১২ বছর ধরে এভাবেই লোহার শিকলে বন্দী হয়ে রাতে ভাঙ্গা ঘরে আর দিনে খোলা রান্নাঘরে কাটছে মিলনের জীবন। পরিবারের সামর্থ্য অনুযায়ী একাধিকবার স্থানীয় হাসপাতালে আর ফকিরের মাধ্যমে তাকে চিকিৎসা করিয়েও কোনো লাভ হয়নি বলে জানা গেছে। তবে অর্থের অভাবের কারণে ভালো ডা. দেখিয়ে উন্নত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা তার কপালে জোটেনি।

শিকল বন্দী মিলনের দরিদ্র দিনমজুর বাবার নাম হাফেজ শরিফ। অসহায় মায়ের নাম সুফিয়া বেগম। তারা ফরিদপুরের সালথা উপজেলা যদুনন্দী ইউনিয়নের উজিরপুর গ্রামের বাসিন্দা। মিলনকে নিয়ে ওই গ্রামেই থাকেন তার বাবা-মা। তাদের আরও দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেছে কয়েক বছর আগে। আর ছেলেরা কেউ তেমন কোনো কাজকর্ম করে না বলে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন। যেকারণে পরিবারটি আরও অসহায়। কোনো মতে নুন-ভাতে কাটে তাদের জীবন।

শনিবার (১৩ আগস্ট) বিকালে সরেজমিনে উজিরপুর গ্রামে তাদের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, উপরে টিন আর নিচে পাটকাঠির বেড়া দিয়ে তৈরী ছোট একটি ঘর। তাও কয়েক দিন আগে সংঘর্ষের সময় ঘরটির বেড়া ভেঙ্গে দেয় সংঘর্ষকারীরা। সেই ভাঙ্গার ঘরের সামনে রয়েছে একটি খোলা রান্নাঘর। সেই রান্নাঘরের খুটির সাথে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে শারীরিক প্রতিবন্ধী ও মানসিক ভারসাম্যহীন মিলনকে। তিনি রান্নাঘরের দুটি চুলার মাঝে শুয়ে বাচ্চাদের মত একা একা কি যেন বলাবলির চেষ্টা করছেন। সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে শুয়া থেকে উঠে দৌড়া-দৌড়ি ও লাফালাফি শুরু করে।

মিলনের বাবা হাফেজ শরিফ বলেন, ৩ বছর বয়সের কালে আমার ছাউয়াল মিলন নিমনা (নিউমোনিয়া) নোগে অসুক হলে, হে সুময় তারে বোয়ালমারী হাসপাতালে নিয়া চিকিশসা করাই। কিছুদিন পর আমার ছাউয়াল প্রতিবন্দী, বোবা ও পাগল হয়ে যায়। তারপর ওরে চিকিশসা করাইতে আমার ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাহা লাগে। হাওলাদ করে এই টাহা খরচা করি। আমি দিন কামাই করি, দিন খাই, ভাই। আমার তো ওরে চিকিৎসা করানোর কোন সমর্তন নাই। ওর একটা প্রতিবন্ধীর ভাতার কার্ড ছাড়া কিছু নাই। কোনো মিম্বার-চিয়ারমেন ও নেতারা আমার ছাউয়ালের খোঁজখবর কোনো দিন নেয় নাই। তাই ছিলেক দিয়ে ওরে বাইন্দ্যা নাখা ছারা উপায় নাই আমাগো। বাইন্দ্যা না রাখলি সে এদিকওদিক চলে যায়। তারপরেও কয়বার ছিকেল ছিরে ফেলাইছে।

মিলনের মা সুফিয়া বেগম বলেন, ছোটকালে ওর নিমনা (নিউমোনিয়া) হয়। ফহির-ফক্কর ও ডাকতার দিয়া বহুত চিসটা করছি। ভাল হয় না। তাই এহন আর চিসটা-মিসটা করি না। টাহা-পয়সা নাই তাই চিকিশসাও করাই না। চিকিশসা না করবার পাইরা ১২ বছর ধইর‌্যা ছিকেল দিয়ে বাইন্দ্যা রাখছি।

যদুনন্দী ইউপি চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ছোটকাল থেকে. মিলন প্রতিবন্ধী ও মানসিক ভারসাম্যহীন। যেকারণে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়। সরকারের পক্ষ থেকে ওকে একটা প্রতিবন্ধীর ভাতার কার্ড দেওয়া হয়েছে। এখন ওর চিকিৎসার জন্য যদি কোনো সহযোগিতা করা লাগে, তাহলে আমি নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে যতটুকু পারি সহযোগিতা করবো।

(এন/এসপি/আগস্ট ১৪, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test