E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাগেরহাটে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত, পানিবন্দি কয়েক হাজার পরিবার, ইলিশ আহরণ বন্ধ

২০২২ আগস্ট ১৪ ২০:৩৪:১০
বাগেরহাটে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত, পানিবন্দি কয়েক হাজার পরিবার, ইলিশ আহরণ বন্ধ

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বাগেরহাটের নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মোরেলগঞ্জ পৌরসভাসহ মোরেলগঞ্জ, মোংলা, রামপাল, বাগেরহাট সদর, কচুয়া, চিতলমারী ও শরণখোলা উপজেলার শতাধিক পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এই ৭টি উপজেলায় কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

রবিবার দুপুরের জলোচ্ছাসে কয়েক হাজার মাছের খামার ও পুকুর পানিতে তলিয়ে মাছ ভেঁসে গেছে। মোরেলগঞ্জ বাজারসহ ফেরিঘাট থেকে পুরনো থানা ঘাট পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে হু-হু করে পানি ঢুকে মোরেলগঞ্জ পৌরসভার সড়ক, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি পানিতে প্লাবিত রয়েছে। ৬ থেকে ৭ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছাসে এবার তলিয়ে গেছে গোটা সুন্দরবন। সুন্দরবনের সব থেকে উচু এলাকা হিসেবে চিহ্নিত চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রানী প্রজনন ও ট্যুরিজম কেন্দ্রটিও ৪ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে। তবে, করমজল বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রের বন্যপ্রানীরা এখনো নিরাপদ রয়েছে। এখন পর্যটনসহ সব ধরনের বনজীবীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় এতা উচ্চতার জলোচ্ছাসের পানির তোড়ে সুন্দরবনের বাঘ হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর ভাগ্যে কি ঘটেছে বা কেমন আছে তা নিরপেক্ষ কোন সূত্র থেকে জানা সম্ভব হয়নি।

এই অবস্থায় গোটা সুন্দরবনে বাঘ, হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রানী আস্তত্ব সংকটে পড়েছে। এদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল ওঠায় শনিবার রাত থেকে সাগরে ফের ইলিশ আহরণ বন্ধ হয়ে গেছে। তিন নম্বর সংকেতের মধ্যে উত্তাল সাগরে টিকতে না পেরে কয়েক হাজার ফিশিং ট্রলার সুন্দরবনের ছোট নদী-খাল ও বাগেরহাটের বিভিন্ন মৎস্য বন্দরে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। সুন্দরবনের দুবলা জেলেপল্লী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মৎস্যজীবি সংগঠনের নেতারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শাহ ই আলম বাচ্চু জানান, বেড়ীবাঁধ না থাকার কারনে প্রতিটি পূর্ণিমা ও অমাবস্যা তিথিসহ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘু ও নিম্নচাপের প্রভাবে দিনে-রাতে দুইবার করে প্লাবিত হচ্ছে মোরেলগঞ্জ পৌরশহরসহ পানগুছি নদীতীরবর্ত্তী গ্রামগুলো। মোরেলগঞ্জ পৌরসভাসহ পানগুছি নদীর তীরবর্তী বেড়ীবাঁধ না থাকায় মোরেলগঞ্জ উপজেলার খাউলিয়া, বারুইখালী, হোগলাবুনিয়া, বহরবুনিয়া, মোরেলগঞ্জ, বলইবুনিয়া, পঞ্চকরন, তেলিগাতী ইউনিয়নের গ্রামগুলোর কয়েক হাজার বসতবাড়ি, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সড়ক পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ঘরবাড়ী পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এসব পরিবারের অনেকেই রান্না করতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পানিতে এ পর্যন্ত ১০০০টি মৎস্য ঘের ও পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে।

সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা জেলেপল্লী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিলিপ কুমার মজুমদার ও বাংলাদেশ ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সহসভাপতি এম সাইফুল ইসলাম খোকন জানান, সাগরে ঝড়ো হাওয়ার কারনে টিকতে না পেরে রবিবার বিকাল পর্যন্ত কয়েক হাজার ফিসিং ট্রলার সুন্দরবনের দুবলার চর, ছোট ভেদাখালী, বড় ভেদাখালী, অফিস কিল্লা, মাইটের খাল, কচিখালীসহ কাগেরহাটের বিভিন্ন মৎস্য বন্দরে আশ্রয় নিয়েছে।

সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রানী প্রজনন ও ট্যুরিজম কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবির জানান, কেন্দ্রটি গত চার দিনে ২ থেকে ৩ ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। রবিবার দুপুরে ৪ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছাসে করমজল বন্যপ্রানী প্রজনন ও ট্যুরিজম কেন্দ্রটি পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে করমজল বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রের রাস্তঘাটসহ বন্যপ্রাণী রাখার সেডেও পানি ঢুকে পড়েছে। তবে, এখনো করমজল বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রের বন্যপ্রানী হরিণ, কুমির ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির কচ্ছপ বাটাগুর বাসকা নিরাপদ রয়েছে।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম রাসেল জানান, রবিবারের দুপুরের জলোচ্ছাসে জোয়োরের পানিতে এ পর্যন্ত জেলার ৭টি উপজেলার শতশত মৎস্য ঘের ও পুকুর পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মৎস্য খামারীদের নেট দিয়ে পুকুর ও খামার ঘিরে রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরোপনে সংশ্নিট এলাকায় কাজ করছে মৎস্য বিভাগ ।

(এসএকে/এএস/আগস্ট ১৪, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test