E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় জমে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী ধানের চারার হাট

২০২২ সেপ্টেম্বর ২১ ১৮:৪৭:৪১
টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় জমে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী ধানের চারার হাট

মোঃ সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের এলেঙ্গার ঐতিহ্যবাহী ধানের চারার হাট জমে উঠেছে। কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভার শামসুল হক কলেজ মোড়ে ৩৫ বছরের পুরনো এ হাটে প্রতিদিন বেচাকেনার ধুম লেগেছে।সম্প্রতি  বৃষ্টি হওয়ায় অন্য বছরের তুলনায় এবার রোপা আমন ধানের চারা বেচাকেনা বেশি হচ্ছে। তবে সার ও ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে প্রান্তিক কৃষক এবং ডিজেল চালিত সেচ পাম্প মালিকরা উদ্বিগ্ন। তারা সরকারের কাছে ভর্তুকি দাবি করেছেন।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবছর রোপা আমন মৌসুমে জেলায় ৯৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৭২ হাজার ৮১৮ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ করা হয়েছে। গত বছর জেলায় ৯৩ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। এবার জমিতে পানি না থাকায় অধিকাংশ এলাকায় সেচ মেশিনের সাহায্যে আমন চারা রোপন করা হয়েছে।

সূত্রমতে, জেলায় বিদ্যুৎ চালিত ২৫ হাজার ৯১৫টি সেচ পাম্পের মধ্যে এ মৌসুমে দুই হাজার ৭৭৬টি চালু করা হয়েছে। ডিজেল চালিত ৩৩ হাজার ২৬৯টি সেচ পাম্পের মধ্যে তিন হাজার ১১৭টি চালুর করা হয়েছে। তবে ডিজেল ও সারের দাম বাড়ার কারণে আমন চাষে এবার খরচ অনেকটা বেশি হবে। এ কারণে ডিজেল চালিত পাম্পের মালিকরা ভর্তুকি দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাটে বিভিন্ন জাতের আমন ধানের চারায় সয়লাব। চাষীরা দর কষাকষি করে চারা কিনছেন। সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, মুক্তাগাছা, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল, গোপালপুর, ভূঞাপুর, মধুপুর ও সখীপুরসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা চারা কিনে আনেন। সেগুলো জেলার চাষীদের কাছে চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি করছেন। পাশের জেলা মানিকগঞ্জসহ অন্য জেলায়ও চারা বিক্রি হয়। হাটে ব্রি ৩৪, ৪৯, ৫২, ৭১, ৭২, ৭৪, ৭৫, ৮৭, বিআর ১১, ২২, ২৩, বিনাধান ৭, ১৭, ২০ এবং স্থানীয় জাত নাজির শাইল, পাইজাম, বিনাশাইল, স্বর্ণা, কালিজিরা, রনজিত, গাইঞ্জা, পাটজাগ প্রভৃতি ধানের চারা পাওয়া যায়। হাটে ধানের চারা ভেদে প্রতি আঁটি (মুঠি) চারা ৪-৮ টাকা দরে ক্রয় করে ৬-১২ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

সখীপুর উপজেলার ডাবাইল-গোহাইলবাড়ি এলাকার জয়নাতৈল গ্রামের প্রতিবন্ধী মো. হারুন সিকদার জানান, তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে এলেঙ্গা হাটে ধানের চারা বিক্রি করছেন। তিনি বিভিন্ন উঁচু এলাকা থেকে মৌসুম অনুযায়ী ধানের চারা কিনে এনে এলেঙ্গা হাটে বিক্রি করে থাকেন। ধানের চারা বিক্রি করেই তিনি ছেলে ও মেয়ের উচ্চ শিক্ষার খরচ সহ পরিবারের চাহিদা মেটাচ্ছেন।

এলেঙ্গা পৌর সভার মশাজান গ্রামের আকবর আলী, আবু সায়েম, মোহর আলী সহ অনেকেই জানান, তারা দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ধানের চারার ব্যবসা করেন। পাহাড়ি বা উঁচু এলাকা থেকে চারা কিনে এনে এলেঙ্গা হাটে বিক্রি করেন। ১০০ আঁটি চারা বিক্রি করলে ১০০-৩০০ টাকা লাভ থাকে। হাটটি পুরাতন হওয়ায় বেশ পরিচিতি পেয়েছে। টাঙ্গাইলের দক্ষিণাঞ্চলসহ নিচু এলাকার চাষীরা এখান থেকেই ধানের চারা কিনে থাকেন।

কালিহাতীর বাংড়া ইউনিয়নের ইছাপুর গ্রামের আবদুল কাদের জানান, তার নিচু জমিতে চারা তৈরি করলে সামান্য বৃষ্টিতেই নষ্ট হয়ে যায়। তিনি এলেঙ্গা হাট থেকে ধানের চারা কিনে জমিতে চাষ করে বেশি সুবিধা অনুভব করেন। এবার তিনি ১৫০ আঁটি স্বর্ণা ধানের চারা ৯৭৫ টাকায় কিনেছেন।

পৌরসভার পক্ষ থেকে ধানের চারার হাটে খাজনা আদায়কারী রাজু আহমেদ জানান, এলেঙ্গায় যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো। তাই দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা এ হাটে আসেন। ১০০০ টাকায় ৪০-৫০ টাকা খাজনা নেওয়া হয়। আবার কম চারা কিনলে অনেকের কাছে থেকে খাজনা নেওয়াই হয়না।

কালিহাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ জানান, এলেঙ্গা ধানের চারার হাট অনেক পুরাতন এবং জেলার অন্যতম। কেউ কেউ শুধু বিক্রির উদ্দেশে ধানের চারা উৎপাদন করেন। আবার অনেকে নিজের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত চারাগুলো হাটে বিক্রি করেন।

যেসব চাষীরা চারা উৎপাদন করতে পারেন না কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে চারা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করেন তারাই এ হাটের নিয়মিত ক্রেতা। তিনি মাঝে-মধ্যে হাটে গিয়ে চারাগুলো খালি চোখে পরীক্ষা করে দেখে থাকেন। এটা তিনি দায়িত্বের বাইরে বিবেকবোধ থেকে করে থাকেন।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাশার জানান, সারের দাম বৃদ্ধির কারণে কৃষকের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে- এটা স্বাভাবিক। বিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্পে সরকারি ভর্তুকি রয়েছে।যদি ডিজেল চালিত সেচ পাম্প মালিকদেরও ভর্তুকি দেওয়া হয় তাহলে কৃষিখাতে দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে না। কৃষকরা খরচ পুশিয়ে নিতে পারবেন। তিনি আরও জানান, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব আমন মৌসুমে বেশি না পড়লেও আগামী বোরো মৌসুমে পড়বে। কারণ তখন পুরোপুরি সেচ নির্ভর চাষাবাদ হয়।

(এসএম/এসপি/সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test