E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ নিয়ে ৩ বছর পার

নেই টেন্ডার, নেই অধিগ্রহণ, নেই বাসভবন!

২০২২ সেপ্টেম্বর ২৩ ১৫:২৬:৫৯
নেই টেন্ডার, নেই অধিগ্রহণ, নেই বাসভবন!

জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলেন। বরাদ্দের সেই অর্থ উপজেলা এলজিইডি হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে উত্তোলন করে রাখলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী। কিন্তু নেই টেন্ডার, নেই অধিগ্রহণ, নেই বাসভবন।

জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কর্ণফুলী উপজেলাসহ ৫৫টি উপজেলা চেয়ারম্যান/ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নতুন বাসভবন নির্মাণের লক্ষ্যে অর্থ বরাদ্দ প্রদান করা হয়। তালিকায় ১৭নং ক্রমিকে চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন নির্মাণে ৪০ লক্ষ টাকা অর্থ প্রদান করা হয়।

বরং বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন। কিন্তু কর্ণফুলী উপজেলা এখনও দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেনি। টাকা উত্তোলনের সময় সহযোগিতায় ছিলেন তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নোমান হোসেন।

এদিকে, অর্থ উত্তোলনের ৩ বছর অতিবাহিত হতে চললেও ভবন তৈরিতে দৃশ্যমান কোনো কাজ করা শুরু হয়নি। কোনো ধরনের টেন্ডার প্রক্রিয়াও সম্পন্ন না করেই নিয়মবহির্ভূতভাবে নতুন ভবনের টাকা তুলে নিয়েছেন। এতে উপজেলা জুড়ে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, গত ১৯ অক্টোবর স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ১০ (দশ) কার্যদিবসের মধ্যে কাজের অগ্রগতি জানাতে চিঠি দিয়েছেন উপজেলা পরিষদ বরাবর। প্রতি উত্তরে পরিষদ কি জানিয়েছিলো তার ব্যাখ্যা জানা যায়নি।

তবে সূত্রে জানা যায়, গত বছরেই স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয় ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের এক পত্রে ২০১৯-২০ অর্থবছরে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনাদি নির্মাণ/পুনঃনির্মাণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ উপখাতে কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নতুন বাসভবন নির্মাণে ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রদানের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বরাবর নির্দেশ দেওয়া হয়। এ প্রেক্ষিতে উপজেলা পরিষদের অনুকূলে বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় দেওয়া হয়।

বরাদ্দকৃত অর্থ গত বছরের ৩০ জুন উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে প্রত্যয়ন দিয়ে উত্তোলন করেছেন উপজেলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী ও তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। প্রদত্ত প্রত্যয়নে বলা হয়, ‘কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বাসভবন নির্মাণ করণের বরাদ্দ পাওয়ার পর নানা কারণে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করা সম্ভব হয় নাই। এমতাবস্থায় সময় মতো টাকা তুলে না রাখলে বরাদ্দকৃত অর্থ লেফট হয়ে যেতে পারে বিধায় উক্ত বিলের টাকা উত্তোলন করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদের যৌথ হিসাব নম্বরে জমা করা হবে এবং পরবর্তী বিধি মোতাবেক কার্যক্রম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কাজ বাস্তবায়ন করা হবে, এই বিলের ব্যাপারে হিসাবরক্ষণ অফিসের কোনো দায়ভার থাকিবে না’।

অথচ বরাদ্দকৃত অর্থ উত্তোলনের ৬ মাস পার হতে চললেও নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু না হওয়ায় নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। অনেকে দাবি তুলেছেন, সরকারি টাকা এভাবে কারো ব্যক্তিগত একাউন্টে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে কিনা।

উপজেলা স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ভবনের নির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা প্রত্যয়নপত্র দিয়ে গত জুন মাসে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে উত্তোলন করে নিয়েছেন।

কর্ণফুলী উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘এ বিষয়ে তিনি অবগত নন। খোঁজ নিয়ে জানাব।’

বরাদ্দের সর্বৈব স্বীকার করে কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের সিদ্ধান্তে টাকা গুলো বরাদ্দ হয়। কোন কারণে কাজ করতে না পারলে বরাদ্দ পাওয়া অর্থ সরকারি একাউন্টসের কাছে জমা রাখা হয়। এটার নিয়ম হলো ইউএনও সাহেব ও উপজেলা চেয়ারম্যান ঐ একাউন্ট থেকে অন্য একাউন্টে সরিয়ে রাখে। তবে ৪০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পাবার পরও কেন বাসভবন নির্মাণ ও জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি তার ব্যাখ্যা দেননি উপজেলা চেয়ারম্যান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) না থাকায় জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মু. মাহমুদ উল্লাহ মারুফ বলেন, ‘এ বিষয়ে কোন তথ্য আমার কাছে নেই। তবে সরকারি অর্থ কারো সরানোর সুযোগ নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’

(জেজে/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test