E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাবার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী বরাবর ছেলের অভিযোগ

বঙ্গবন্ধুর খুনি ডালিমকে পালাতে সহযোগিতা করে বরিশালের ইসমাইল

২০২২ অক্টোবর ০১ ১৮:০০:০৮
বঙ্গবন্ধুর খুনি ডালিমকে পালাতে সহযোগিতা করে বরিশালের ইসমাইল

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারী খুনি মেজর ডালিমসহ অন্যান্য সহযোগীদের দেশ ছেড়ে পালাতে নিজে গাড়ি চালিয়ে বিমান বন্দরে পৌঁছে দিয়েছিলেন বরিশালের ইসমাইল মিয়া। বিমান বন্দরে প্রবেশের পূর্বে খুনি ডালিম ও তার সহযোগীরা বিমান বন্দরের সামনের ফুল গাছের মধ্যে তাদের ব্যবহৃত অস্ত্র ফেলে বিমানে গিয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রায় ৪৭ বছর পর বিষয়টি জানতে পেরে নিজের বাবার বিচারের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ইসমাইল মিয়ার ছেলে ছেলে মোস্তফা কামাল মিয়া।

আজ শনিবার দুপুরে নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের উকিলবাড়ি সড়কের রফিক মেম্বারের বাড়ির বাসিন্দা মোস্তফা কামাল মিয়ার লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, তার বাবা জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার বিদ্যানন্দপুর ইউনিয়নের ভাসানচর গ্রামের মৃত মোঃ আসমান আলী মিয়ার ছেলে ইসমাইল মিয়া। বর্তমান তারা নগরীর ২৫ নং ওয়ার্ডের উকিলবাড়ি সড়কের রফিক মেম্বারের বাড়িতে বসবাস করে আসছেন।

মোস্তফা কামাল বলেন, আমি যখন জানতে পারি আমার বাবা ইসমাইল মিয়া বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঘাতকদের সাথে জড়িত ছিলেন, তখন আমার বাবাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি আমার বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

তিনি আরও বলেন, আমার বাবা ইসমাইল মিয়া ১৯৬০ সালে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে (পিডিবি) ড্রাইভার পদে চাকরিতে যোগদান করেন। ১৯৬৩ সালে তার চাকরি নিয়মিত হয়। ২০০১ সালে তিনি অবসরগ্রহণ করেন। এরআগে ইসমাইল মিয়া ১৯৭২ সালে রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কোয়াটারে উঠেন। ১৯৭৭ সালে কোয়াটার ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করেন।

মোস্তফা কামাল বলেন, আমি পেশায় একজন এ্যাম্বুলেন্স চালক। সে সুবাধে অন্যান্য চালকদের সাথে আমার সখ্যতা গড়ে ওঠে। সে সুবাধে আমার সাথে পরিচয় হয় তৎকালীন সময়ের স্বাস্থ্য বিভাগের ড্রাইভার বর্তমানে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স মালিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি ফিরোজ আলমের। সভাপতি ফিরোজ আলমের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠার একপর্যায়ে আমাকে বলেন, তুমি কি ড্রাইভার ইসমাইল মিয়ার ছেলে? তখন আমি হ্যা বলি। এরপর ফিরোজ আলম আমাকে বলেন, তুমি তোমার বাবার অতীত ইতিহাস জানো। তখন সে আমাকে বলেন, তৎকালীন সময়ে কোন একদিন জেলা প্রশাসনের রিকুজেশন ডিউটিতে আমরা কয়েকজন ড্রাইভার একত্রিত হই। তখন এরশাদ শাসনামল পরবর্তী বিএনপি ক্ষমতার আমলের সময়ের কথা। আমরা ডিউটির মধ্যে অন্যান্য গাড়ির ড্রাইভাররা খোশ গল্পের একপর্যায়ে তোমার বাবা ইসমাইল মিয়া বলে ওঠে, এ দেশে কখনো আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসতে পারবেনা। ওই সময় অন্যান্য ড্রাইভাররা তার কথার প্রতিবাদ করে ইসমাইলের কাছে এ বিষয়ের ব্যাখ্যা জানতে চায়।

এক পর্যায়ে দাম্ভিকতার সুরে ইসমাইল মিয়া বলেন, যেদিন বঙ্গবন্ধুসহ তার পুরো পরিবারকে হত্যা করে মেজর ডালিমসহ অন্যান্যরা বিদেশে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। সে সময় আমার গাড়িতে তাদেরকে বিমানবন্দের পৌঁছে দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রগুলো বিমানবন্দরের পাশের ফুলবাগানে ফেলে রেখে তারা বিমানে উঠে যায়। ইসমাইল মিয়া আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে আরো বলেন, পরবর্তীতে আমার নামের সাথে মিল থাকায় ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতি থেকে ইসমাইল নামের আরেক ব্যক্তিকে ধরে আনা হয়।

মোস্তফা কামাল আরও বলেন, আমি যখন জানতে পারি আমার বাবা ইসমাইল মিয়া বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঘাতকদের সাথে জড়িত ছিলেন, তখন আমার বাবাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি আমার বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

পায়অন্তু না পেয়ে বঙ্গবন্ধু প্রেমিক মোস্তফা কামাল তার বাবার এসব অপকর্মের সঠিক তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি করে বরিশালের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগের ব্যাপারে ইসমাইল মিয়ার ব্যবহৃত (০১৭১১-১১১২১৯) নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তা বন্ধ করে রাখায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

(টিবি/এসপি/অক্টোবর ০১, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test