E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সুব্রত সাংমার মৃত্যুতে অশান্ত দূর্গাপুর

২০২২ অক্টোবর ১০ ১৭:১২:১০
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সুব্রত সাংমার মৃত্যুতে অশান্ত দূর্গাপুর

তুষার বাবু, নেত্রকোণা : গত ২৯ সেপ্টেম্বর ‘রাজনৈতিক বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তারের জেরে' দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত হওয়ার ১০ দিনের মাথায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আদিবাসী সুব্রত সাংমা (৪০)। হামলার শিকার হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন গারো সম্প্রদায়ের সাবেক এই জনপ্রতিনিধি।

নিহতের বড় ভাই দুর্গাপুর উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইমন তজু বলেন, জানান, হামলায় আহত হয়ে আমার ভাই নয় দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শনিবার দুপুর সোয়া ১২টায় তিনি মারা গেছেন। সাবেক এই ইউপি চেয়ারম্যানের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সম্পূর্ণ দূর্গাপুর উপজেলা জুড়ে ক্ষোভ দেখা দেয়। আদিবাসী ফোরামসহ স্থানীয়রা হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিতে দুর্গাপুর সদরের উৎরাইল বাজারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন সুব্রতর অনুসারীরা।

এ ঘটনায় উপজেলার শিবগঞ্জ সহ প্রায় সকল স্থানেই গত রবিবার পর্যন্ত বাজার এবং দোকানপাট বন্ধ ছিলো। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

মামলার বরাতে পুলিশ জানায়, ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় স্থানীয় রাশিমণি বাজার এলাকায় একদল দুর্বৃত্ত সুব্রত সাংমাকে মারপিট করে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে চিকিৎসার জন্য মোটরসাইকেলে করে তাকে উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হচ্ছিল। পথে শিবগঞ্জের সোমেশ্বরী নদীর ঘাট এলাকায় পৌঁছলে আবারও হামলার শিকার হন সুব্রত সাংমা। এ সময় তাকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এই অবস্থায় সুব্রত সাংমাকে উদ্ধার করে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায় স্থানীয়রা। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। হামলার ঘটনায় পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর দুর্গাপুর থানায় মামলা করেন সুব্রত সাংমার বোন কেয়া তজু।

মামলায় বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল, তার দুই ভাই শামীম মিয়া ওরফে শ্যুটার শামীম, বদিউজ্জামানসহ ১৫ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১৬ জনকে আসামি করা হয়। দুর্গাপুর থানার ওসি শিবিরুল ইসলাম বলেন, আগের মামলায় ১২ জন আসামি মঙ্গলবার নেত্রকোণার মুখ্য বিচারিক হাকিম-২ এর আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন।

রোববার দুপুরে উপজেলার রাশিমনি স্মৃতিসৌধ চত্বরে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বহেরাতলী গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়।

এ সময় বক্তব্য দেন ময়মনসিংহ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জুয়েল আরেং, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য রেমন্ড আরেং, নেত্রকোণা জেলা পরিষদ প্রশাসক প্রশান্ত কুমার রায়, সাবেক পৌর মেয়র কামাল পাশা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক, সদস্য বিপ্লব মজুমদার, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি আব্দুল হান্নান, যুবলীগ নেতা ফারুক বাবু।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য রেমন্ড আরেং বলেন, ‘অতি দ্রুত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ প্রশাসনকে তৎপর হতে হবে। যদি পুলিশ প্রশাসন গ্রেপ্তার করতে না পারে আমরা আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের সব নেতাকর্মী রাজপথে নামব।’

দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান বলেন, “বিএনপির আউয়ালের সঙ্গে সুব্রত সাংমার দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ করে আসছিল। আউয়াল এলাকায় সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এর বিরোধিতা করে আসছিলেন সুব্রত সাংমা। শেষ নাগাদ সুব্রত সাংমাকে খুনই করে ফেললেন আউয়াল।’

তিনি জানান, ‘সুব্রত সাংমা স্থানীয় আওয়ামী লীগের একজন বলিষ্ঠ নেতা। তিনি এবার নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে অল্প ভোটের ব্যবধানে আব্দুল আওয়ালের কাছে হেরে যান। এর আগেরবার তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। আমরা এই হত্যার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।’

কুল্লাগড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য নিহত সুব্রত সাংমার ওই ইউনিয়নের বহেরাতলী গ্রামের সুধীর মানখিনের ছেলে।

(টিবি/এসপি/অক্টোবর ১০, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test