E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

স্বপ্নগুলো থেমে গেল নষ্ট রাজনীতিতে!

২০২২ অক্টোবর ১০ ১৭:৪২:২১
স্বপ্নগুলো থেমে গেল নষ্ট রাজনীতিতে!

অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুশাবাড়িয়া গ্রামের বদিউজ্জামান বাদশা, তিন পুত্র সন্তানের জনক। মেধাবী তিন পুত্র সন্তান এর মধ্যে দুটি সন্তান শারীরিক ও মানুষিক প্রতিবন্ধি। এরপরও বদিউজ্জামান বাদশা পার্শ্ববর্তী মাগুরা জেলা শহরে প্রাইভেট পড়িয়ে সন্তানদের মানুষ করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু বয়সের ভারে এখন আর টিউশনিটাও করতে পারেন না। তিন সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে সাদেক পড়ে গিয়ে মাজায় আঘাত পেয়ে আজ প্রায় পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। সাদেক অতি কষ্টে বিএ পাশ করে সরকারি কেসি কলেজে মাস্টার্স পরীক্ষার্থী। আর ১০ জন মানুষের মত চলা ফেরা করতে পরেন না। তাই সংসারে চাকা ঘোরাতে বাড়িতে বসে দুই একটা টিউশনি করেন। জন্ম থেকে এক পায়ে সমস্যা ছোট ছেলে মোক্তারের। এরপর ৫ বছর আগে সেই পা ভেঙ্গে যায়। তার পর থেকে আর স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেনা। এর পরও কৃষি ডিপ্লোমা শেষ করে প্রতিবন্ধী হিসাবে একটি কোম্পানিতে কাজ করছেন।

প্রতিবন্ধী দুই সন্তানের মধ্যে আশার আলো ছিল সাইদুর রহমান মুরাদ। এই ছেলেকে নিয়ে অনেক আশা আর স্বপ্ন ছিল পিতা বাদশা মোল্লার। লেখা-পড়া শেষ করে ভাল চাকুরী করবে বৃদ্ধ পিতা-মাতার পাশে দাড়াবে। বড় ভাইদের সহযোগীতা করবে। কিন্তু নষ্ট রাজনীতির কবলে পড়ে নিভে গেছে প্রাণপ্রদিপ। নিথর দেহটা ময়না তদন্ত শেষে যখন বাড়ির আঙ্গিনায় পৌছায় তখন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন পিতা বদিউজ্জামান বাদশা। অন্যদিকে তৌহিদুল ইসলাম ঝিনাইদহ ভেটেরিনারি কলেজের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী। বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার বলেশ্বরপুর গ্রামে। পৃত্বিহারা তৌহিদুল ঝিনাইদহ ভেটেরিনারি কলেজে শিক্ষা গ্রহন করে জীবন সাজাতে চেয়েছিলেন। তারা দুই ভাই বোন। বড় বোন মমতাজের বিয়ে হয়ে গেছে ৫ বছর আগে। তখন পিতা বেঁচে ছিল তার। হঠাৎ জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পিতা গোলাম মোস্তফা দুই বছর আগে মারা যান। মা জাহানারা একমাত্র পুত্র সন্তানকে আগলে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে আসছিলেন। কিন্তু সে আশা দুরাশায় পরিণত হয়। নষ্ট রাজনীতিতে গা ভাসিয়ে তৌহিদুল এখন ইতিহাস। দলীয় প্রতিপক্ষের হামলা থেকে বাঁচতে তিনিও মুরাদের সহযাত্রী হন। তৌহিদুলের বাড়িতে এখনো শোকের ছায়া। একমাত্র পুত্র হারানো মা জাহানারা নির্বাক।

তৌহিদুলের চাচা মোঃ গোলাম সরোয়ার জানান, সন্তানেরা সুসন্তান হতে গিয়ে নষ্ট রাজনীতির বলি হয়েছেন। সমরেশ বিশ্বাসের পিতা রাখাল চন্দ্র বিশ্বাস একজন কৃষক। যশোরের পালদিয়া গ্রামে তার বাড়ি। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন সমরেশ। বড় বোন মিনাক্ষির বিয়ে হয়ে গেছে। ছোটবোন অনিমা এইসএসসি পাশ করেছে। ছোট ভাই তনুশ্রী বিশ্বাস ৮ম শ্রেনীর ছাত্র। ঝিনাইদহ ভেটেরিনারি কলেজের শিক্ষার্থী হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ছাত্র লীগের। বুক ভরা আশা ছিল সমরেশের। সরকারী চাকরী নিয়ে হাল ধরবেন সংসারের। কিন্তু না। গত শুক্রবার মুরাদ ও তৌহিদের সঙ্গে পরোপারে পাড়ি জমায় সমরেশ। সমরেশের চাচাতো ভাই চন্ডিদাশ বললেন, নেতারা তাদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ছাত্রদের নোংরা রজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেছে। তিনি বলেন, এটা হত্যাকান্ড।

(একে/এসপি/অক্টোবর ১০, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test