E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

এলাকাবাসী ও পরিবারের দাবি 

কাউসার খুনের মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হচ্ছে

২০২২ নভেম্বর ২৯ ১৭:৪৮:২৩
কাউসার খুনের মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হচ্ছে

দিলীপ চন্দ, ফরিদপুর : আজ মঙ্গলবার চরভদ্রাসন উপজেলা ভবনের সামনে কাওছার খানের পরিবার ও এলাকাবাসী একটি মানববন্ধন করেন। উক্ত মানববন্ধনে কাউসার খান হত্যা মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীর পরিবারসহ অনেকেই। স্থানীয়দের দাবি কাউসার খান অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। তার বিরুদ্ধে সমকামিতা বা অন্য কোন ধরনের কোন কিছুই ছিল না।

স্থানীয়দের দাবি, ১৬ বছরের একজন কিশোর কোনভাবেই একা কাউসারকে হত্যা করতে পারে না। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে আরো অনেকেই আছে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। স্থানীয় ও পরিবারের দাবি এই ঘটনার সাথে আরো কেউ যুক্ত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান।

এ বিষয়ে চরভদ্রসন উপজেলার চেয়ারম্যান কাউসার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান, আসলে যে ঘটনার বিবরণ পুলিশ দিয়েছেন এটা আসলে কোনোভাবেই এমনটা হওয়ার কথা না। একা একা একটি কিশোরের পক্ষে কাউসারের মতো যুবককে হত্যা করা কঠিন তাই বিষয়টি প্রশাসন পুনরায় তদন্ত করে এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে আরও কোন ঘটনা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখে ভুক্তভোগীদের সঠিক বিচার নিশ্চিত করার জন্য তিনি জানান।

স্থানীয় অনেকেই বলেন কাউসার খান কোন সমকামিতার সাথে জড়িত ছিল না, তার এই হত্যাকাণ্ডটি অন্যদিকে প্রবাহিত করা হচ্ছে বলে তাদের দাবি। তাদের দাবি বিষয়টি আবারো সঠিকভাবে তদন্ত করে দোষীদের কে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনসহ সকল মহলের কাছে জোর দাবি জানান।

পুলিশের দেওয়া ঘটনার বিবরণ

গত ইং-২৫/১১/২০২২ তারিখ দিবাগত রাত হতে ইং-২৬/১১/২০২২ তারিখ ভোর ০৫:০০ ঘটিকার মধ্যে অজ্ঞাতনামা খুনি বা খুনিরা ডিসিস্ট কাউসার খানকে চরভদ্রাসন থানাধীন চর হরিরামপুর ইউনিয়নের বিশাই মাতুব্বরের ডাঙ্গী সাকিনস্থ জনৈক জিয়ারত শেখের জমির উপর হত্যা করিয়া বালু চাপা দিয়ে রেখে যায়। উক্ত সংবাদ পেয়ে চরভদ্রাসন থানার পুলিশসহ সদর সার্কেল জনাব সুমন রঞ্জন সরকার এবং ডিবির অফিসার ইনচার্জ পর্যাপ্ত সংখ্যক অফিসার ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হত্যাকান্ডের মোটিভ উন্মোচনের জন্য অভিযান পরিচালনা করে। তদন্ত কালে তারা সাফাণ্ডত ইসলাম সিফাত, ও মোঃ শাহিন মোল্লাদ্বয়কে হত্যা কান্ডে জড়িত থাকার ক্লু পেয়ে তাদেরকে হেফাজতে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে সাফাওত ইসলাম সিফাত হত্যাকান্ডে জড়িত মর্মে স্বীকারোক্তি প্রদান করে এবং তার দখল হইতে ডিসিস্টের মোবাইলের পোড়া অংশ বিশেষ, গায়ে পরিহিত জ্যাকেট, পরিহিত শার্ট প্যান্ট ও হত্যা কান্ডে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় ডিসিস্ট কাউসার এর সহিত সাফাওত ইসলাম সিফাত এর সমকামিতার সম্পর্ক ছিল এবং এই সম্পর্ক গড়তে ডিসিস্ট তাকে বাধ্য করেছিল। ডিসিস্ট প্রায়ই তাকে উক্ত কাজে বাধ্য করত। যা সাফাত্তত ইসলাম সিফাতের মোটেই পছন্দ ছিল না। ডিসিস্ট তাকে এই কাজে মিলিত হতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি প্রদর্শন করত। ডিসিস্ট ঘটনার দিন ইং-২৫/১১/২০২২ তারিখ রাত ০৮:০০ ঘটিকার সময় সাফাওত ইসলাম সিফাতকে ফোন করে ডেকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে সিফাতকে সমকামিতা কাজে বাধ্য করিলে উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে ডিসিস্ট তার পকেট হতে সুইচ চাকু বের করে সিফাতকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করিলে সিফাত তার হাত ধরিয়া ফেলে এবং উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ডিসিস্টের গলায় চাকুর আঘাত লাগে এবং ডিসিস্ট মাটিতে উপুর হয়ে পড়ে গেলে সিফাত তার হাত থেকে চাকু কেড়ে নিয়ে ডিসিস্ট এর পিঠের উপর বসে ডিসিস্টের পিঠ, গলা, গর্দান, মাথার পিছনের অংশে উপর্যুপরি আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে।

তার পর মোবাইল ফোন, মোটর সাইকেল এবং চাকু নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। বাড়িতে ফিরে গেলে তার মা-বাবা তাহার গায়ের রক্ত মাখা কাপড় চোপড় দেখে তাকে জিজ্ঞাসা করিলে সে তাদেরকে সবকিছু খুলে বলে । তার বাবা শাহিন মোল্লা হত্যা কান্ডে ব্যবহৃত আলামত ধ্বংস এবং মুছে ফেলে মামলার মোড় ভিন্ন দিকে ঘোরানোর জন্য তার ছেলে সাফাওত ইসলাম সিফাতের পরিহিত জামা কাপড় ধুয়ে ফেলে, জ্যাকেট বসত বাড়ির মাটির মধ্যে পুতে ফেলে এবং ডিসিস্টের মোবাইল পুড়িয়ে ফেলে। চাকু তার বাড়ির পাশে পুকুরের মধ্যে ছুড়ে ফেলে এবং ডিসিস্টের মোটর সাইকেল থানা ফরিদপুরের চানমারি এলাকায় রেখে আসে। এই সংক্রান্তে চরভদ্রাসন থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়।

(ডিসি/এসপি/নভেম্বর ২৯, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

৩০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test