E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কাগজের দাম বৃদ্ধিতে প্রতিবাদ নেই ছাত্র সংগঠনগুলোর!

২০২৩ জানুয়ারি ১৫ ১৮:২২:৪৫
কাগজের দাম বৃদ্ধিতে প্রতিবাদ নেই ছাত্র সংগঠনগুলোর!

অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : বাবু মিয়া পেশায় চা দোকানী। সারাদিন কাজ করে যে টাকা তিনি আয় করেন তা দিয়ে সংসার চালিয়ে কলেজ পড়ুয়া ছেলে ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়া মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। দেশে খাদ্য সামগ্রীর মূল্যের সাথে পাল্লা দিয়ে যে হারে শিক্ষা সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে তাতে করে ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে সংসরা চালনো তার পক্ষে দায় হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন বাবু মিয়া। তিনি বলেন, এক বছর আগে যে খাতা ৭০ টাকা দিয়ে কেনা হতো, এখন সেই খাতা কিনতে হচ্ছে ১০০ টাকায়। 

ঝিনাইদহ সরকারী কেসি কলেজের অর্নাস প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তন্ময় কুমারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রায় এক বছর আগে যখন অর্নাসে ভর্তি হয়েছিলামত তখন বই, খাতা, কলমসহ অন্যান্য সামগ্রীর যে মূল্য ছিলো তা এখন অনেক বেড়েছে। এ জন্য দরিদ্র পরিবার থেকে খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে। না পারছি বলতে না পারছি পড়া-লেখা ছেড়ে দিতে।

চা দোকানী বাবু মিয়া বা শিক্ষার্থী তন্ময় কুমারের মতো হাজারো শিক্ষার্থী ও অভিভাবক শিক্ষা উপকরণের মুল্য বৃদ্ধির ফলে পড়েছেন বিপাকে। রং পেন্সিল থেকে শুরু করে, বই, খাতা, কলম, ব্যবহারিক খাতা, ক্লিপ বোর্ড, জ্যামিতি বক্স সহ সকল পণ্যে দাম বাড়লেও ছাত্র সংগঠনগুলো নীরব ভুমিকা পালন করছে। আগে রাজপথে “বই খাতা কলমের দাম কমাতে হবে কমিয়ে নাও” এমন শ্লোগান তুলে প্রতিবাদ জানানো হতো। এখন ছাত্র রাজনীতির নামে লেজুড়বৃত্তি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় তাদের কোন ভুমিকা পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

এদিকে কাগজের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সব চেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে হতদরিদ্র শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। যেখানে একটি শিক্ষার্থীর পেছনে একজন অভিভাবক মাসে দুই হাজার টাকা ব্যয় করতেন বর্তমানে সেখানে শিক্ষায় ব্যবহৃত পণ্যের দাম বাড়ার কারণে সেই অভিভাবককে মাসে আরো এক হাজার টাকা বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। এতে চাপ বাড়ছে সংসারে।

ঝিনাইদহের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক, ষ্টেশনারি ব্যবসায়ী ও লাইব্রেরি মালিকদের সাথে কথা বলে শিক্ষা সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির এ চিত্র উঠে এসেছে। তারা বলেন, বাজারে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃয় হয় বসুন্ধরা. ফ্রেস ও গুডলাক কোম্পানির পণ্য। কাগজ ব্যবসায়ী রাজিব হোসন জানান, গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে বাজারে কাগজের মুল্য বৃদ্ধি শুরু হয়। অক্টোবরের আগে ডিমাই ২১/৩৪ সাইজের কাগজের দাম ছিল ২২০ টাকা। এখন সেই কাগজ বিক্রি হচ্ছে ৪১০ টাকায়। ডিমাই ২২/৩৫ সাইজের কাগজের দাম ছিল ৩২০ টাকা। এখন বিক্রি ৫১০ টাকা। ২০০ পাতার খাতা ৪২০ টাকা ডজন ছিল। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা। পত্রিকার জন্য নিউজপ্রিন্ট এক রিম কাগজের দাম ছিল ৬৫০ টাকা এখন ১৪০০ টাকা। ছাপাখানার জন্য ২৩/৩৬/৫৫ কাগজ ছিল ১২২০ টাকা রিম। এখন সেই কাগজ বিক্রি হচ্ছে ২৩০০ টাকায়। স্টেশনারি ও কম্পিউটার আইটেমর মালামালও কোন কোন ক্ষেত্রে ২০ থেকে ৪০% বৃদ্ধি হয়েছে বলে রাজিব হোসেন জানান।

অভিযোগ রয়েছে কাগজ কোম্পানিগুলো নিজেদের ইচ্ছেমত দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কাগজের বাজার নিয়ন্ত্রনের কোন উদ্যোগ নেই বরং পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ব্যবহারিক খাতার দাম।

শিক্ষা মেলার মালিক আব্দুস সবুর জানান, করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে কাগজের বাজা উর্ধ্বমুখী। তাই কাগজের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে কোম্পানিগুলো খাতার দাম প্রতিনিয়ত বাড়িয়েই চলেছে। তিনি বলেন, দেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত হয় ম্যাক্স মারশাল জ্যামিতি বক্স। শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের নাগালের মধ্যে থাকলেও এখন সেই জ্যামিতি বক্সের মূল্য এক লাফে ৬০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় দাড়িয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রানা হামিদ জানান, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী শিক্ষা উপকরণের মুল্য বৃদ্ধি করছে বলে আমি মনে করি। এই প্রক্রিয়ায় মুল্যবৃদ্ধির প্রবণতাকে আমরা ঘৃনা করি এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা জরুরী। এ বিষয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর বর্তমান দায়িত্বরত নেতৃবৃন্দের প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি।

(একে/এসপি/জানুয়ারি ১৫, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test