E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কুলিয়ারচরে মদপানে আরো একজনের মৃত্যু

আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিনের জানাজায় নাজমুল হাসান পাপন এমপি

২০২৩ জানুয়ারি ১৭ ১৭:৫৭:৩৯
আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিনের জানাজায় নাজমুল হাসান পাপন এমপি

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : কুলিয়ারচরে এ্যালকোহল জাতীয় পানীয় সেবনে এবার মো. লিটন মিয়া (৪৫) নামে এক চায়ের দোকানদারের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে আওয়ামী লীগের ২ নেতাসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়। আজ মঙ্গলবার বেলা ২টা ৪০ মিনিটের সময় পৌর এলাকার বড়খারচর ঈদগাহ মাঠে মৃত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. গিয়াস উদ্দিনের নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণ করেন কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনের সংসদ সদস্য ও বিসিবি সভাপতি আলহাজ্ব নাজমুল হাসান পাপন।

এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, কুলিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ইয়াছির মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ইমতিয়াজ বিন মুছা জিসান, সাবেক সভাপতি আবুল হোসেন লিটন, পৌর মেয়র সৈয়দ হাসান সারওয়ার মহসিন, উপজেলা পরিষদ সদস্য আব্দুস সাত্তার মাস্টার, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক-৩ মীর মো. মিজবাহুল ইসলাম উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এম.এ হান্নান, উপজেলা যুবলীগ সাবেক আহ্বায়ক মো. এমরান মিয়াসহ জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এছাড়া ভৈরব ও বাজিতপুর উপজেলা থেকে আগত রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও জনপ্রতিনিধিবৃন্দ।

এর আগের দিন মৃত উপজেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক-২ মো. জহির রায়হান জজ এর নামাজে জানাজা শেষে তার মৃতদেহ দাফন করা হয়। এছাড়া মঙ্গলবার বিকালে মৃত চায়ের দোকানদার মো. লিটন মিয়ার নামাজে জানাজা শেষে তার লাশ দাফন করা হয় এবং মৃত ডা. গোবিন্দ চন্দ্র বিশ্বাস কে দাহ করা হয়। এর আগে রোববার মৃত বির্ভাটেক চালক শাহজাহান মিয়াকে ময়না তদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়। এছাড়াও একাধিক ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে এলাকায় আলোচনায় আসছে।

উল্লেখ্য, কুলিয়ারচরে এ্যালকোহল জাতীয় পানীয় সেবনে এ পর্যন্ত তিন আওয়ামী লীগ নেতার মধ্যে দু’জনসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। অপর এক আওয়ামী লীগ নেতা ঢাকা একটি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। এছাড়া তাদের নিয়মিত বির্ভাটেক চালকসহ এক চিকিৎসক ও উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় সংলগ্ন এক চায়ের দোকানদার ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মারা গেছেন। এসব মৃত্যু নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও নানান গুঞ্জন দেখা দিয়েছে।

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কুলিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক-১ মো. গিয়াস উদ্দিন (৫৫), সাংগঠনিক সম্পাদক-২ মো. জহির রায়হান জজ (৫৫) এবং সদস্য ও কুলিয়ারচর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. হাবিবুর রহমান (৫৫)সহ তাদের নিয়মিত বির্ভাটেক গাড়ির চালক মো. শাহজাহান মিয়া (৫২), কুলিয়ারচর বাজারস্থ অন্তর হোমিও হলের স্বত্ত্বাধিকারী ডা. গোবিন্দ চন্দ্র বিশ্বাস (৫০) ও উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় সংলগ্ন চায়ের দোকানদার মো. লিটন মিয়া (৪৫) এ্যালকোলহ জাতীয় পানীয় সেবনের পর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
তাদের উদ্ধার করে বাজিতপুর ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে সোমবার ভোর ৪টায় উপজেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক-২ মো. জহির রায়হান জজ ও ভোর ৪টা ৩৫ মিনিটের সময় উপজেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক-১ মো. গিয়াস উদ্দিন, সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ডা. গোবিন্দ চন্দ্র বিশ্বাস ও বিকাল ৫টা ১০ মিনিটের সময় চায়ের দোকানদার মো. লিটন মিয়া একই হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে শনিবার রাতে গিয়াস উদ্দিন ও জহির রায়হান জজের নিয়মিত বির্ভাটেক গাড়ির চালক মো. শাহজাহান মিয়া তার নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. হাবিবুর রহমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক-১ মো. গিয়াস উদ্দিনের ভগ্নিপতি মো. শাহজাহান মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, গিয়াস উদ্দিন তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। রোববার রাতে একটি দাওয়াত খাওয়া শেষে ৬-৭ জন বন্ধুরা মিলে মদ্যপান করেন। এরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তিনি মারা যান। আমাদের ধারণা তাকে মদের সাথে বিষ জাতীয় কিছু মিশিয়ে খাওয়ানো হয়েছে। এই ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবি জানান তিনি।

নিহত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক-২ মো. জহির রায়হান জজ এর চাচাতো ভাই সুমন মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, কুলিয়ারচর বাজারে একটি দোকানে মিটিং শেষে আমার ভাইয়ের সকল বন্ধুরা মিলে মদ্যপান করেন। মদ্যপান করার পরদিন আমার ভাই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে সেখানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আমাদের ধারণা মদের সাথে বিষ জাতীয় কিছু মিশিয়ে খাওয়ানো হয়েছে তাকে। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচার দাবি করেন তিনি।

মৃত চায়ের দোকানদার মো. লিটন মিয়ার ভাই সাক্কু মিয়া বলেন, মৃত্যুর আগে ভাই আমাদের কোন কিছুই জানাননি। সোমবার বিকালে প্রথমে কোমর ব্যাথার কথা জানান। পরে বুক ব্যাথার কথা জানালে তাকে ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থা হাসপাতালেই মৃত্যুবরণ করে তিনি।

নিহত হোমিওপ্যাথিক ডা. গোবিন্দ চন্দ্র বিশ্বাসের ছোট ভাই কুলিয়ারচর গ্লোরিয়াস হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক আনন্দ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, তার ভাইয়ের স্ত্রী ও সন্তানরা দীর্ঘদিন যাবৎ ভারতে বসবাস করেন। এ নিয়ে তিনি পারিবারিকভাবে দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন। এসব দুঃশ্চিন্তা থেকে স্টোক করে তিনি মারা গেছেন।

কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মিলন রায় বলেন, সোমবার ভোর রাত সাড়ে তিনটার দিকে গিয়াস উদ্দিন নামের একজন আওয়ামী লীগ নেতা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আসেন। তখন আমরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। সেই সময় তার চোখ দেখে আমাদের সন্দেহ হলে তার সাথে থাকা লোকদের জিজ্ঞাসা করলে প্রথমে তারা মদ্যপানের বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে তার স্বজনরা মদ্যপানের বিষয়টি স্বীকার করেন এবং আমাদের ধারণা কুলিয়ারচরের পাঁচটি মৃত্যুই একই সূত্রে গাথা।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক-১ মো. গিয়াস উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক-২ মো. জহির রায়হান জজ ও সদস্য মো. হাবিবুর রহমান পরস্পর ভালো বন্ধু ছিলেন। তাদের ছাত্র রাজনীতি দিয়ে এক সাথে পথ চলা। দলীয় কর্মকা-সহ সালিশ দরবারও করতেন একই সাথে। আবার দুই বন্ধু চলেও গেলেন একই সাথে। বন্ধুত্বের বন্ধন থেকে গেল মৃত্যুকালেও।

এদিকে তাদের মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনো কোনো দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে স্থানীয়দের মধ্যে গুঞ্জন চলছে যে মদের বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে।

এ ব্যাপারে কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা পাঁচজনের মৃত্যু ঘটনা নিশ্চিত করে তিনি বলেন, এ্যালকোহল জাতীয় কিছু সেবনে তাদের মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের একজন লাইফ সাপোর্টে আছেন। তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

(এস/এসপি/জানুয়ারি ১৭, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test