E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস: ১০ বছরই ২৮ জনবল

গ্রাহক ভোগান্তি লাঘবে দুদক ও ডিবির অভিযান চান সেবা প্রার্থীরা!

২০২৩ জানুয়ারি ২৮ ১৭:২৫:২৯
গ্রাহক ভোগান্তি লাঘবে দুদক ও ডিবির অভিযান চান সেবা প্রার্থীরা!

জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম : মনসুরাবাদ বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস। আবেদন জমা এবং পাসপোর্ট ডেলিভারি নিতে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে সেবা প্রার্থীদের। সেবা প্রদানে পর্যাপ্ত সংখ্যক কাউন্টার না থাকায় এমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সেবা প্রার্থীরা। পাসপোর্ট অফিসের দায়িত্বশীলরাও সেবা প্রার্থীদের ভোগান্তির বিষয়টি অস্বীকার করেননি।

তবে চাইলেও জনবল সংকটের কারণে কাউন্টারের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভবপর হচ্ছে না দাবি করে পাসপোর্ট অফিস সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত দশ বছরে চট্টগ্রামে পাসপোর্টের সেবা গ্রহীতার সংখ্যা বেড়ে অন্তত কয়েকগুণ হয়েছে। কিন্তু পাসপোর্ট অফিসের জনবল বাড়েনি।

দশ বছর আগের জনবলেই সেবা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হচ্ছে। একদিকে সেবা গ্রহীতাদের অস্বাভাবিক চাপ, অন্যদিকে অপ্রতুল জনবল। এমন পরিস্থিতিতে সেবা দিতে গিয়েও রীতিমতো হিমশিম অবস্থা বিভাগীয় এই পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের।

রাউজান থেকে পাসপোর্টের আবেদন নিয়ে এসেছেন আব্দুল কাদের। আবেদন জমা দিতে লাইনে দাঁড়ান বেলা ১১টায়। কিন্তু দুই ঘণ্টায়ও আবেদন জমা দিতে পারেননি তিনি। কিছুটা এগোলেও লাইনেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে এ যুবককে। দুপুর একটায়ও তিনি কাউন্টার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি। তার সামনে আরো অন্তত ১০/১২ জন ছিলেন।

পাসপোর্ট প্রস্তুত (রেডি), এমন এসএমএস পেয়ে ডেলিভারি নিতে এসেছেন হাটহাজারীর বাসিন্দা সৌরভ। সকাল দশটায় লাইনে দাঁড়ান। কিন্তু দুপুর ১২টায়ও তিনি ডেলিভারি কাউন্টারে পৌঁছাতে পারেননি। শুধু এই ক’জন নয়, আবেদন জমা দিতে এবং পাসপোর্ট নিতে আসা মানুষের ভিড়ে যেন ঠাঁই নেই অবস্থা মনসুরাবাদ বিভাগীয় এই পাসপোর্ট অফিসে।

সেবা নিয়ে আসা নগরীর নিমতলা এলাকার শাহেদুর রহমান শাহেদ জানান, মনসুরাবাদ পাসপোর্ট অফিসে সেবা তো দুরের কথা বরং কেউ প্রতিবাদ করলে তাঁকে ধরে ভেতরে নিয়ে উল্টো হয়রানি করা হচ্ছে। যা সভ্য সমাজে কখনো উচিত নয়। বড় কর্তা ফেরেশতার মতো কথা বললেও তিনিই সব জানেন। এখানে দুদক বা ডিবি পুলিশের অভিযান চালানো দরকার।

ভিড় সামলাতে ও লাইন সুশৃঙ্খল রাখতে আনসার সদস্যরাও হিমশিম অবস্থায়। একই চিত্র ছবি তোলার কক্ষের সামনেও। অপর্যাপ্ত কাউন্টারের কারণে এমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে জানিয়ে সেবা নিতে আসা লোকজন বলছেন, এখানে মাত্র কয়েকটি কাউন্টারে ফাইল জমা, ছবি তোলা ও পাসপোর্ট ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু মানুষের যে ভিড়, আরো অন্তত ৬/৭টি করে কাউন্টার প্রয়োজন। কাউন্টার সংখ্যা বাড়ানো হলে মানুষের এই ভোগান্তি অনেকাংশেই লাঘব হতো বলে মনে করেন সেবা গ্রহীতারা।

সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তিহীন সেবাদানে আন্তরিক চেষ্টা থাকলেও অপ্রতুল জনবলের কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক মো. আবু সাইদ।

বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের তথ্য অনুযায়ী– ২০১০ সালের আগস্টে চট্টগ্রামে বিভাগীয় এই পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়। ওই সময় কর্মকর্তা–কর্মচারী মিলিয়ে মোট জনবল ছিল ৩১ জন। তবে এর এক যুগ গত হলেও জনবল আর বাড়েনি। বরং কমেছে। বর্তমানে ২৮ জন কর্মকর্তা–কর্মচারী নিয়ে এই অফিস চলছে। অথচ, দশ বছর আগে দৈনিক সর্বোচ্চ ৫০০ পাসপোর্টের আবেদন জমা পড়তো। আর বর্তমানে দৈনিক আবেদনের সংখ্যা হাজারের বেশি (দ্বিগুণ)। দিন দিন এ সংখ্যা আরো বাড়ছে বলে জানান বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মো. এনায়েত উল্লাহ।

পাসপোর্ট অফিস সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মোট জনবল ২৮ জন থাকলেও সরাসরি পাসপোর্ট সেবায় কাজ করেন অফিস সহকারী বা ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদের স্টাফরা। এই পদে বর্তমানে সর্বোচ্চ ১০ জন স্টাফ কর্মরত আছেন। এই জনবলে আবেদন জমা গ্রহণের দুটি, ছবি তোলার ৮টি এবং পাসপোর্ট ডেলিভারির ৩টি কাউন্টার চালু আছে। কিন্তু সেবা গ্রহীতাদের অত্যধিক চাপে এই সংখ্যক কাউন্টার পর্যাপ্ত নয়। যার কারণে সেবা প্রত্যাশী মানুষকে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

পাসপোর্ট অফিস সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দৈনিক সেবা প্রার্থীর সংখ্যা বা চাহিদা বিবেচনায় আবেদন জমা গ্রহণে অন্তত ৪টি, ছবি তোলায় অন্তত ২০টি এবং পাসপোর্ট ডেলিভারিতে অন্তত ৫টি কাউন্টার প্রয়োজন। আর কাউন্টার বাড়াতে হলে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর বা অফিস সহকারী পদে আরো ১০ জন স্টাফ জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন। এছাড়া সহকারী পরিচালক পদেও আরো ৬ জন কর্মকর্তা দরকার।

জনবল পেলে সেবা প্রত্যাশীদের আরো সন্তোষজনক সেবা দেয়া সম্ভব বলে মন্তব্য করেন বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক মো. আবু সাইদ।

(জেজে/এসপি/জানুয়ারি ২৮, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test