E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পূজামন্ডপ যেন এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের চিত্র

২০২৩ জানুয়ারি ২৯ ১৯:০৫:৩৩
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পূজামন্ডপ যেন এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের চিত্র

গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় 'অরুণ সংঘ' নামের ৪০ বছর বয়সী একটি সংগঠন গত কয়েক বছর ধরেই বেশ ঘটা করে ব্যতিক্রমী আয়োজনে সরস্বতী পূজার মন্ডপ তৈরী করে জেলার সর্বত্র সুনাম কুড়িয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবছরও অরুণ সংঘ আখাউড়ায় সরস্বতী পূজাকে কেন্দ্র করে দু'দিন ব্যাপী বিশাল আকারে দৃষ্টিনন্দন ও নান্দনিক এক আয়োজন করে গোটা জেলায় আবারও রীতিমত তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ফলে পূজা শেষ হলেও পূজার নানান কর্মকান্ড নিয়ে এখনও বিভিন্ন মহলে চলছে নানা ইতিবাচক আলোচনা।

জানা গেছে, সরস্বতী পূজায় অরুণ সংঘের এবারের পূজা মন্ডপ সজ্জায় আওয়ামীলীগ সরকারের মেঘা প্রকল্পের নানা উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ গুলো শিল্পীর তুলির আঁচরে চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলে ধরার কারণেই পূজা মন্ডপটি নিয়ে এখনও সর্বত্র আলোচনার ঝড় বইছে।

ওই পূজা মন্ডপটিতে দেশের জাতীয় সংসদ ভবন, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র, আশ্রয়ণ প্রকল্প, মডেল মসজিদসহ সরকারের নানা উন্নয়নকাজ একইসঙ্গে চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়। প্রায় দেড়মাস ধরে একদল কারিগড় তাঁদের নিপুন কারুকার্যে পূজামন্ডপটিতে এসব নান্দনিক শিল্প কর্মের মাধ্যমে যেন ছোট্ট এক টুকরো স্বপ্নের বাংলাদেশকে তুলে ধরা হয়।

আখাউড়া উপজেলা সদরের রাধানগরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে জেলার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও আলোচিত এই পূজামণ্ডপটি তৈরী করা হয়। এর নাম দেয়া হয় ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’।

আয়োজকেরা জানিয়েছেন, পূজাতে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের পাশাপাশি পূজার্থী ও পূজা দেখতে আসা দর্শনার্থীদের কাছে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেয়া উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলোকে সুন্দরভাবে তুলে ধরে জ্ঞানের পরিধিকে বাড়ানোয় ছিলো তাদের মূল লক্ষ্য।

জানা যায়, পূজামন্ডপস্থলের গেইটেই পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ১০০ ফুট লম্বা করে চমৎকারভাবে পদ্মা সেতু তৈরী করা হয়। সম্পূর্ণ ককশিট দিয়ে পদ্মা সেতুর অবিকল নকশা তৈরী করা হয়। এছাড়া পূজামন্ডপটির ভেতরে একপাশে আকর্ষণীয়ভাবে মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, রুপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের পাশাপাশি আশ্রয়ণ প্রকল্পের আদলে একাধিক ঘরও নির্মাণ করা হয়। আর ঠিক সরস্বতী প্রতীমার পেছনেই শিল্পীর নিপুন হাতে তৈরী করা হয় অবিকল জাতীয় সংসদ ভবন। পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে তুলে ধরতে পূজামণ্ডপেই তৈরী করা হয় মডেল মসজিদ। প্রতিটি শিল্পকর্মে শিল্পীরা ককশিট, রং আর অন্যান্য সরঞ্জাম দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের নকশাগুলোকে ফুটিয়ে তুলছেন নিখুঁতভাবে।

অরুণ সংঘের সভাপতি স্থানীয় সাংবাদিক বিশ্বজিৎ পাল বাবু জানান, 'প্রায় ৪০ বছর আগে আখাউড়ায় অরুণ সংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বরসতী পূজার আয়োজন করে আসছে সংগঠনটি। প্রথম দিকে ছোট্ট পরিসরে পূজার আয়োজন করা হলেও গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন থিম নিয়ে ব্যতিক্রমী আয়োজনে আমরা সরস্বতী পূজার আয়োজন করে আসছি। আমরা চেষ্টা করছি, একেক বছর একেকটি ভিন্ন ভিন্ন থিম জনগণের সামনে প্রদর্শন করতে। গত বছরও আমাদের সংগঠনের উদ্যোগে নির্মিত এই পূজামন্ডপে পাঠাগার থিমটি দেশে বিদেশে ব্যাপক প্রশংসা কুঁড়িয়েছিলো।'

তিনি আরও জানান, 'পূজায় আমাদের ধর্মীয় রীতি নীতি স্বাভাবিক রেখে মানুষের কাছে ভিন্ন কিছু উপস্থাপন করাই আমাদের এ থিম পূজার লক্ষ্য। আর এ কারণে এবারও আমরা দেশের উল্লেখযোগ্য সরকারের মেঘা প্রকল্পগুলোর উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। যার নাম দিয়েছি 'সমৃদ্ধ বাংলাদেশ'।

এদিকে জেলার বহুল আলোচিত এই সরস্বতী পূজার ব্যতিক্রমী আয়োজন দেখতে এবারও পূজার্থীদের উপচে পড়া ভীড় লক্ষ করা গেছে। পূজার্থীদের পাশাপাশি আখাউড়ার মেয়র, ইউএনও, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, পুজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দরাও পূজামন্ডপটি এক নজর দেখতে এসেছিলেন। আর এই আলোচিত পূজাকে কেন্দ্র করে আখাউড়ায় হিন্দু মুসলমানের যেন এক মিলন মেলার হাঁট বসেছিলো। পাশাপাশি সরস্বতী পূজাকে কেন্দ্র করে ছিলো ব্রাহ্মণ সংবর্ধনা ও জমজমাট মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। এসব কারণে সরস্বতী পূজা শেষ হলেও, এর রেশ যেন এখনও সর্বত্রই রয়ে গেছে। আর সেজন্যই দুই দিনের নান্দনিক এ আয়োজনে শুভচিন্তার মানুষদের ব্যাপক সাড়া ও অনুপ্রেরণায় পুলকিত থাকা আয়োজকেরা এখনও রয়েছেন বেশ ফুরফুরে ও ভীষণ আনন্দে।

(জিডি/এসপি/জানুয়ারি ২৯, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test